করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া দেশের প্রথম চিকিৎসক মঈন উদ্দীনের পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গত ২৭ এপ্রিল আবেদনটি করেন মঈন উদ্দীনের স্ত্রী চৌধুরী রিফাত জাহান। গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিভাগ আবেদন অনুযায়ী টাকা ছাড়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আগামী সপ্তাহে এ অর্থ ছাড় করবে বলে জানা গেছে। দ্রুতগতিতে কাজ হলেও আবেদন শুরুর দিন থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৬ দিন পার হয়েছে। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক মঈন উদ্দীন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ এপ্রিল মারা যান। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে চৌধুরী রিফাত জাহানের আবেদনপত্রে সুপারিশ করেন এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ মো. মইনুল হক।
জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল চিকিৎসক মঈন উদ্দীনের করোনা পজিটিভ আসে। অবস্থার অবনতি ঘটলে ৭ এপ্রিল তাঁকে সিলেট নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আইসোলেশনে রাখা হয়। সেখান থেকে পরবর্তী সময়ে পরিবারের সিদ্বান্ত অনুযায়ী তাঁকে ঢাকায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি চাকরিজীবী যাঁরা নিজেরা আক্রান্ত হবেন বা মারা যাবেন, তাঁদের জন্য গ্রেড অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে সরকার একটি পরিপত্র করেছে। এর পরিমাণ ৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। মঈন উদ্দীনের গ্রেড অনুযায়ী (পঞ্চম গ্রেড) তাঁর পরিবার ৫০ লাখ টাকা পাবেন। সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে ড. মঈনের পরিবারই প্রথম ক্ষতিপূরণ পেতে যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তাঁদের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটেও একই উদ্দেশে রাখা হচ্ছে ৮০০ কোটি টাকা। তবে ভিন্ন এক আবেদন অর্থ বিভাগ বিবেচনা করছে না বলে জানা গেছে। সে আবেদনটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকের একান্ত সচিব (পিএস) ওয়াহেদুর রহমানের। তিনি আক্রান্ত হলেও পরে সুস্থ হয়ে গেছেন। গ্রেড অনুযায়ী আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাঁর ১০ লাখ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তাঁর আক্রান্তের খবর গোপন রেখেছিল। কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাও নেননি তিনি। নাকচ করার ব্যাপারে অর্থ বিভাগ অন্য কারণের সঙ্গে এটাকেও বিবেচনায় রেখেছে বলে জানা গেছে।
জারি হওয়া পরিপত্রের শর্তের সঙ্গে ওয়াহেদুর রহমানের আক্রান্তের বিষয় মিলছে না বলেও জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। ওয়াহেদুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। বিষয়বস্তু উল্লেখ করে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো জবাব দেননি তিনি। আর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুধু চিকিৎসকদের বিষয় দেখি। আর ওয়াহেদুর রহমান প্রশাসন ক্যাডারের। তিনি কখনো এ বিষয়ে কিছু জানাননি।’ তিনি বলেন, আমারা জানা মতে, করোনায় মারা যাওয়া সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে ড. মঈনের পরিবারই প্রথম ক্ষতিপূরণ পেতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৯ জন চিকিৎসক কোভিডে আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৫ জনের করোনা পজিটিভ ছিল আর ৪ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। এ ছাড়া দুজন নার্স এবং দুজন কমিউনিটি হেলথকেয়ার সার্ভিস প্রোভাইডারও মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত ৮৪৮ জন চিকিৎসক, ৬৭৬ জন নার্স এবং চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত আরও ১ হাজার ১৩৪ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে।
আরও পড়ুন: