চিকিৎসক ও শয্যা-সংকটে মিলছে নাযথাযথ সেবা

চিকিৎসক–সংকটে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গত শনিবারের ছবি। প্রথম আলো
চিকিৎসক–সংকটে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গত শনিবারের ছবি।  প্রথম আলো

লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল নাক কান গলা এবং চর্ম ও যৌন রোগের বিশেষজ্ঞসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে চিকিৎসক নেই। সব মিলিয়ে চিকিৎসকের ২৩টি পদ শূন্য। এ কারণে এখানে এসে রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছে না। উপরন্তু এখানে আছে শয্যা–সংকট। ফলে রোগীদের ওয়ার্ডের বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে ১০ শয্যা নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৫ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জেলা সদরের সব সরকারি সদর হাসপাতালকে (যেগুলো ২৫০ শয্যার হয়নি) ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণার ভিত্তিতে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল চত্বরে ২৫০ শয্যার বহুতল আধুনিক হাসপাতাল ভবন নির্মানের কাজ চলছে।

সদর হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, ১০০ শয্যার জনবলকাঠামো অনুযায়ী এখানে চিকিৎসকের পদ আছে ৩৯টি। এর বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৬ জন। দীর্ঘদিন ধরে সিনিয়র কনসালট্যান্ট নাক কান গলা এবং অ্যানেসথেসিয়ার পদ শূন্য। এ ছাড়া চক্ষু, রেডিওলজি, প্যাথলজি এবং (অনির্ধারিত) তিনটিসহ জুনিয়র কনসালট্যান্টের ছয়টি পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া এখানে চিকিৎসা কর্মকর্তার নয়টি ও সহকারী সার্জনের ছয়টি পদ শূন্য রয়েছে।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। শিশু বিশেষজ্ঞ (জুনিয়র), শিশু বিশেষজ্ঞ (সিনিয়র), গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ এবং জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য নির্ধারিত কক্ষের সামনে তিন শতাধিক রোগী অপেক্ষা করছে।

গত শনিবার হাসপাতালে আট দিন বয়সের কন্যা ময়নাকে জন্ডিস রোগের চিকিৎসার জন্য আসেন তার বাবা আজিজুল হক। তিনি শহরের থানাপাড়ার বাসিন্দা। ময়নার মা আকলিমা আক্তার বলেন, ‘মেয়েটি জন্মের তিন দিন পর জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছে। এত রোগী (শিশু), কখন যে ডাক পাব সেটা বুঝতে পারছি না। ডাক্তার না দেখিয়েও বাড়িতেও যেতে পারছি না।’

এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) লালমনিরহাট জেলা কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম খান বলেন, এ হাসপাতালে বেশ কয়েকটি বিশেষজ্ঞসহ (কনসালট্যান্ট) অধিকাংশ চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এ কারণে রোগীরা এ হাসপাতাল থেকে প্রত্যাশিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের আরএমও আমিনুর রহমান বলেন, এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হয়। আর প্রতিদিন অন্তর্বিভাগে গড়ে ১৩০ থেকে ১৫০ জন রোগীকে ভর্তি করা হয়। প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় যাঁরা কর্মরত আছেন, তাঁদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ বলেন, হাসাপাতালের চিকিৎসকের ২৩টি পদ শূন্য থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে শূন্যপদের তালিকা পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতালের নানা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের সাংসদ জাপার কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক–সংকট দূর করতে তাঁর পক্ষে যতটুকু সম্ভব, তার সবটাই তিনি করবেন।