নওগাঁর মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম জনবল–সংকট চলছে। এতে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ আছে ২১টি। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসক আছেন মাত্র তিনজন।
নওগাঁর সবচেয়ে বড় উপজেলা মান্দা। ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় লোকসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী বহির্বিভাগে টিকিট কাটে। এ ছাড়া জরুরি ও অন্তর্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নেয় আরও ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাবে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এখানে চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ২১টি। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন তিনজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তাঁদের একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও)। চিকিৎসকের ১৮টি শূন্য পদের মধ্যে ১০টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। এ ছাড়া শূন্য রয়েছে আটজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ। এ অবস্থায় চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নেওয়ার স্বার্থে উপজেলার বিভিন্ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সাতজন স্বাস্থ্য সহকারীকে প্রেষণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন করা হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগী টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। টিকিট না কেটে চিকিৎসকের খোঁজখবর নিচ্ছে আরও অনেকে। বহির্বিভাগের দুটি কক্ষে রোগী দেখছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাহসিনা বিনতে আবেদ ও স্বাস্থ্য সহকারী রুনা খাতুন। দুটি কক্ষের সামনেই রোগীদের দীর্ঘ সারি। অন্তর্বিভাগের রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার।
সেবা নিতে আসা উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের মমতাজ বিবি ও রুপালী বেগম, ছোটবেলালদহ গ্রামের ইসাহাক আলী মোল্লা, বড়পই গ্রামের সাথী আক্তারসহ ১০-১২ জনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, হাসপাতালে আর আগের মতো চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। ঘণ্টার ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে সেবা না নিয়েই অনেক সময় ফিরে যেতে হয়। তাঁদের অভিযোগ, তা ছাড়া এখানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের (প্রেসক্রিপশন) বেশির ভাগ ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। দেশে প্রথমবারের মতো উপজেলা পর্যায়ে মান্দায় এ চিকিৎসাসেবা শুরু হলে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। বিকেলেও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে আসে নানা বয়সের রোগী। কিন্তু চিকিৎসক-সংকটে এখন ভাটা পড়ে গেছে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। এখন জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক দিয়ে একই সঙ্গে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে দুই বিভাগের কাজ।
উপজেলার বড়বেলালদহ গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন আগেও সকালে গৃহস্থালির কাজ শেষে বিকেলে এখানে এসে সেবা নিয়েছি। এখন ডাক্তার না থাকায় বিকেলে বহির্বিভাগ সপ্তাহের অধিকাংশ দিনই খোলা থাকে না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে বেশি টাকা খরচ করে ক্লিনিকে কিংবা প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।’
এলাকার বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা না মেলায় উপজেলার মানুষ অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ভাস্কর চন্দ্র মণ্ডল বলেন, প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ রোগীর সেবা দিতে মাত্র ৩ জন চিকিৎসককে হিমশিম খেতে হয়। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে খালি থাকায় রোগীরা মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ অধ্যুষিত এই উপজেলায় স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে কোনোভাবে চালানো হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। চিকিৎসক ও জনবল–সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা একাধিকবার সিভিল সার্জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
সিভিল সার্জন মোমিনুল হক বলেন, শুধু মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নয়, জেলার অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও চিকিৎসক–সংকট রয়েছে। বিষয়গুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। ৩৯তম বিসিএস থেকে বেশ কিছু চিকিৎসক পদায়ন করার কথা রয়েছে। তখন হয়তো সংকট কিছুটা মোচন হবে।