চিকিৎসকসহ ২৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের মঞ্চ বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ)। তাঁদের মধ্যে তিন চিকিৎসক কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
বিডিএফ মনে করছে, রোগীরা রোগের তথ্য প্রকাশ না করা, চিকিৎসকদের জন্য সঠিক মানসম্মত সুরক্ষা পোশাক পর্যাপ্ত না থাকা এবং করোনার পরীক্ষা-নিরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় চিকিৎসকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নিরূপম দাশ প্রথম আলোকে বলেন, রোগী অনুপাতে বাংলাদেশে চিকিৎসকদের আক্রান্তের হার বেশি। এভাবে চলতে থাকলে আরও বহু চিকিৎসক আক্রান্ত হবেন এবং সেবাব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
আইসিইউতে চিকিৎসাধীন তিন চিকিৎসকের মধ্যে একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রো অ্যান্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, একজন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং আরেকজন অর্থোপেডিক সার্জন।
আরও আক্রান্ত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যসহ দুজন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক, নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ও উপজেলা পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক।
এই ৯ জনের বাইরে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আরও ২০ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারী আক্রান্ত হয়েছেন।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা তাৎক্ষণিকভাবে আক্রান্তদের সংখ্যা বলতে পারেননি। তবে চিকিৎসকসহ বেশ কিছু স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আক্রান্তদের সবাই সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা নয়। বরং কেউ কেউ কমিউনিটির অংশ হিসেবে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও জানান মীরজাদী সেব্রিনা। তবে তিনি জানান, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে সরাসরি করোনা-আক্রান্ত রোগীদের যাঁরা চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাঁরা সুস্থ আছেন।
রোগের উপসর্গ না লুকানোর অনুরোধ চিকিৎসকদের
চিকিৎসক, সেবাদানকারী ও অন্য রোগীদের সুরক্ষায় করোনা উপসর্গের কথা না লুকানোর জন্য রোগীদের অনুরোধ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে প্রস্তুতি ছাড়া কেউ এলে তাঁদেরও রোগের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেই মিরপুরের একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ এবং এরপর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়।
সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের একটি ইউনিট একই সমস্যায় পড়ে। তবে চিকিৎসকেরা সুরক্ষা পোশাক পরেছিলেন এবং এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ওই ইউনিটের প্রধান নাজমুল হক আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, আক্রান্ত রোগী বেসরকারি একটি হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন ৮ এপ্রিল। তিনি পেটে ব্যথার অভিযোগ করছিলেন। রোগীর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা জানান তিনি ছয় দিন ধরে ঘুমোতে পারছেন না। তলপেটের এক্সরে তে বুকেরও কিছুটা অংশ ছিল। সেটি দেখেই তাঁরা আন্দাজ করেন রোগীর করোনার উপসর্গ আছে। নমুনা সংগ্রহ করতে গেলে রোগীর স্বজনেরা জানান, তাঁরা আগেই নমুনা দিয়েছেন। করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতালে পাঠালে পথেই ওই ব্যক্তি মারা যান। পরে তাঁরা জানতে পারেন, রোগের কথা গোপন রেখে বাড়িতে লোকসমাগম করে তাঁর জানাজাও হয়েছে।
ওই চিকিৎসক বলেন, সুরক্ষা পোশাক গায়ে থাকায় তাঁরা হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন, কিন্তু ওই রোগীর সঙ্গে অন্যান্য রোগীও ছিলেন। তাঁরাও আক্রান্তের ঝুঁকিতে আছেন।
আজ করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোগের উপসর্গ প্রকাশ করলে কোথাও কোথাও চিকিৎসা না পাওয়ার কথা শোনা গেছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত সবাইকে সুরক্ষা পোশাক দেবে। যেন রোগীরা রোগ গোপন না করেন।
তা ছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিধি আরও বাড়ানোর কথাও ঘোষণা করেছেন মহাপরিচালক।