সরকারি সংস্থার হিসাবে বাজারে চালের যে দাম হওয়া উচিত, তার চেয়ে কেজিতে ১১ টাকা পর্যন্ত বাড়তি মুনাফা করা হচ্ছে।
বাজারে চালের চড়া দামের মধ্যে উচ্চ হারে মুনাফা করছেন ব্যবসায়ীরা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে বাজারে চালের যৌক্তিক যে মূল্য হওয়া উচিত, তার চেয়ে কেজিতে ১ থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে।
বাজারে এখন এক কেজি মোটা চালের দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, যা ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ দর। এ ছাড়া মাঝারি চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা এবং সরু চাল ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শুধু এখন নয়, করোনার মধ্যে সারা বছরই চাল চড়া দামে বিক্রি হয়েছে। সরকার গত বোরো মৌসুমে উৎপাদন খরচ ও মুনাফা যুক্ত করার পর সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি চালের দাম নির্ধারণ করেছিল ৩৬ টাকা। আমনে তা কেজিপ্রতি ৩৭ টাকা ধরা হয়। অবশ্য গত বোরো মৌসুম শেষে বছরজুড়েই মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর পাইকারি বাজারের দামের সঙ্গে পরিবহন ব্যয়, অন্যান্য খরচ, মুনাফা যোগ করে চালসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে। গত রোববারের যৌক্তিক মূল্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাজারে এক কেজি জনপ্রিয় মিনিকেট চালের দর হওয়া উচিত ৫৩ থেকে ৫৬ টাকা। অথচ তাদের হিসাবেই এ চাল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মানে হলো, বাড়তি মুনাফা করা হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭ থেকে ৯ টাকা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, চালের যৌক্তিক মূল্য তারা খাদ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত মিলগেট মূল্য ধরে নির্ধারণ করেছে। অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের একজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত মূল্য বাজারে কার্যকর হয়নি। এসব যৌক্তিক মূল্য ঘোষণাই করা হয়, কার্যকর করতে উদ্যোগ নেওয়া হয় না।
কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী, ঘোষিত যৌক্তিক মূল্য বাস্তবায়িত না হলে সরকারি সংস্থাগুলো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। যদিও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। এ বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বৈজ্ঞানিকভাবে বাজার থেকে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করে যৌক্তিক মূল্য তুলে ধরি। বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের বাজার অভিযান পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর।’
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) এক যৌথ গবেষণা অনুযায়ী, দেশে প্রতি কেজি ধান বিক্রি করে কৃষকের লাভ হয় ৬০ পয়সা থেকে ১ টাকা। চালকলমালিকেরা প্রতি কেজি চালে লাভ করেন আড়াই থেকে তিন টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরাও প্রায় একই পরিমাণে লাভ করেন। এর বাইরে পাইকারি ব্যবসায়ী, এজেন্ট ও ফড়িয়ারা কেজিপ্রতি দেড় থেকে আড়াই টাকা পর্যন্ত মুনাফা করে থাকেন।
বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো নাজনীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশে চালের বাজারের নিয়ন্ত্রক মূলত চালকলমালিকেরা। তাঁদের মধ্যে আবার হাতে গোনা কয়েকজন মূল ভূমিকা পালন করেন। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় মিলারদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।