নিয়োগে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থাকে নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা উল্লেখ করে আকবর আলি খান বলেন, কোটাব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে দেওয়া উচিত। কোনো দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কোটাব্যবস্থা চলতে পারে না।
এ বিষয়ে পাঠকের মন্তব্য চেয়ে আজ রোববার প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করা হয়। প্রথম ঘণ্টাতেই দুই হাজারের বেশি পাঠক তাঁদের মতামত জানান। মন্তব্যকারীদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী কিংবা চাকরিপ্রার্থী। অধিকাংশই নিয়োগে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার সংস্কার চান।
রাইহানুল হক আকবর আলি খানের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে লিখেছেন, ‘তিনি একেবারে ঠিক কথা বলেছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে কোটা রাখতে হবে, যেমন প্রতিবন্ধীদের জন্য।’
আমিনুল শিমুলের মতও অনেকটা এ রকম, লিখেছেন, ‘কোটা পৃথিবীর সব দেশেই বিদ্যমান, তবে কোথাও এটা চিরস্থায়ী নয়। কোটা সাধারণত হয় ১০–১৫ বছরের জন্য সমাজে পিছিয়ে পড়া বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠীর জন্য, যেমন ভারতে ১৫ বছরের জন্য দলিত সম্প্রদায়ের কোটা এখন বিদ্যমান, যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১০ বছর রেড ইন্ডিয়ানদের জন্য ২ শতাংশ কোটা বিদ্যমান ছিল। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো দেশেই ১৫ শতাংশের ওপর কোটা বিদ্যমান নেই, যেখানে আমাদের দেশে ৫৬ শতাংশই কোটায় চলে যায়, যা ৪৮ বছর ধরে চলমান! ভাবা যায়?’
আদিল আল সাজিন লেখেন, ‘৫৬ শতাংশ কোটা তরুণদের স্বপ্নভঙ্গের জন্য যথেষ্ট। আর অনেক কোটাধারীরা স্বল্প মেধাবী হয়েও সরকারি চাকরির বাজারে সবার চেয়ে এগিয়ে!’
সোহেল আহমেদ কোটাব্যবস্থাকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, সারা দেশের তরুণদের জন্য ৪৫ শতাংশ চাকরি আর কয়েক হাজারের জন্য ৫৫ শতাংশ চাকরির ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়।
ইউসুফ আহমেদ নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে দাবি করে লিখেছেন, ‘জীবনে আজ পর্যন্ত কোথাও কোনো কাজে বাবার এই কোটা ব্যবহার করিনি। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, স্বাধীন দেশে সবার অধিকার সমান হওয়া উচিত, কিন্তু কোটা প্রথা বাতিল হলে-ই যে সব সমস্যার সমাধান হবে, তা কিন্তু নয়; যেখানে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়, সেখানে কোটা অতি সামান্য ব্যাপার। দেশে অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার আছে, যারা স্বাধীনতাযুদ্ধে সব হারিয়েছে। কী দিয়েছি, তাদের আমরা? স্বার্থ শেষ হয়ে গেলে কেউ কারও খবর রাখে না, তেমনি স্বাধীন দেশে তাদের আর কী দরকার? অবশ্যই তাদের জন্য কিছু করা উচিত, আমার কাছে মনে হয়, ছেলে মেয়ে পর্যন্ত ঠিক আছে নাতি, নাতনির জন্য যে কোটা আছে, তা বাদ দেওয়া উচিত।’
শাহাদাত শাকিল কোটা প্রথা বাতিল চেয়ে লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করা হোক। যোগ্যতার বলে চাকরি নিক। সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সব নাগরিক সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। তাহলে কেন এই পদ্ধতি বাতিল হবে না?’
রাবেল সিরাজি কোটা প্রথা বাতিল চেয়ে কিছু প্রস্তাব পেশ করেছেন।
লিখেছেন, ‘১. সব নিয়োগ পরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতা বিভাগীয় আট শহর এবং ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক এমন আরও ২টি জেলা শহরে করার আইন করা হোক। ২. প্রতিবন্ধী কোটা থাকতে পারে ৩. একাধিক কর্মকমিশন চাই ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য। ৪. সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হোক, এতে করে গবেষকেরাও সরকারি চাকরিতে আসতে পারবেন। ৫. উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা হোক সরকারি খরচে, যেখানে “নীতিবিদ্যা”+মূল্যবোধ+সুশাসন ১২ বছর ধরে শেখানো হবে।’
মোহাম্মদ সোহেলের মতে, ‘কোটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রয়োজন ছিল কিন্তু স্বাধীনতার প্রায় ৪ যুগ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ৫৬ শতাংশ কোটা থাকা সঠিক বলে মনে করি না। কিছু কিছু কোটা থাকতে পারে, তবে তা ১৫ শতাংশের বেশি নয়।’
সাজ্জাদ হোসেইন মেহেদি লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁরা রাষ্ট্র থেকে সুযোগ-সুবিধা পেতেই পারেন। তাই বলে তাঁদের নাতি-নাতনিদের জন্য দিতে হবে, এটা কেমন কথা!’
সাহেব উদ্দিনের মতে, যদি কখনো কোটা প্রথা উঠে যায়, সেটা হবে নতুন বাংলাদেশ। এ দেশের মেধাবীরা তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে।
সাফিক ইসলাম কোটা প্রথার পক্ষে লিখেছেন, ‘কোটা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আছে, বাংলাদেশেও আছে। কিন্তু কেউ কি বলতে পারবেন যে ভাইবার আগে কোটা অনুসরণ করা হয়। আর কোটা হলো জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তথা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি দেশের সম্মান প্রদর্শন করা। যাঁদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ, তাঁদের সম্মান করুন। পরাধীন বাংলাদেশ হলে সবার অবস্থা কী হতো একটু ভাবুন।’
যাঁরা কোটা প্রথার বিপক্ষে, মনিরুজ্জামান রনি তাঁদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে এত কথা বলছেন, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে কী জানেন? বর্তমানে কেমন অবস্থায় আছেন মুক্তিযোদ্ধারা? কেউ খোঁজ রাখেন তাদের? আমার মনে হয় না কোনো মেধাবী এই কোটার কারণে বেকার বসে আছেন।’