ঝোপজঙ্গলে ঢেকে ছিল গাছটি। তাই চোখে পড়েনি। জঙ্গল পরিষ্কারের পর এবার যখন আকর্ষণীয় সবুজের ওপর লাল রং ছেয়ে গেল, তখন আমটি চোখে পড়ল ঠিকই। পরিপক্ব হওয়ার পর আকর্ষণীয় এই আমের জাত নিয়ে ভাবনায় পড়েন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মাযদার হোসেন। সহকর্মী উদ্যানতত্ত্ববিদদের নিয়ে বসলেন। অন্তর্জালে খোঁজ করলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র (আম গবেষণা কেন্দ্র) বৈজ্ঞানিক আবু সালেহ মো. ইউসুফের সহযোগিতা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসেন, আমটি বিখ্যাত মিয়াজাকি বা সূর্যডিম।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হর্টিকালচার সেন্টারের একটি গাছের আমকে মিয়াজাকি আম বলেই আমাদের মনে হয়েছে। তবে আরও পরীক্ষা করা দরকার।’
মিয়াজাকি আম সম্পর্কে সরকারের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’-এর পরামর্শক কে এম কামরুজ্জামান বলেন, জাপানের মিয়াজাকি নামক স্থানে উদ্ভাবিত বলে আমটির নাম মিয়াজাকি। জাপানে পাকার প্রায় তিন সপ্তাহ আগে থেকে আমটিকে হুকের সাহায্যে সূর্যের দিকে টেনে রাখা হয়। যেন আমটি ভালোভাবে রোদ পায়। এ সময় আমগাছের নিচে জাল টানিয়ে রাখা হয়। ভালোভাবে পেকে যাওয়ার পর আমটি জালের ওপর ঝরে পড়ে। ভালোভাবে রোদ লাগানোর কারণে এই আমের স্বাদ বেড়ে যায়। আম পাকানোর আগের এই প্রক্রিয়ার জন্যই আমটির আরেক নাম ‘সূর্যডিম’।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের জামতারায় মনামিনা কৃষি খামারের ফলচাষি মতিউর রহমান জানান, তাঁর খামারে এক বছর বয়সী সাত-আটটি আমগাছ আছে। এর মধ্যে একটি গাছে সূর্যডিম আম ধরেছে। ফলবিজ্ঞানী শরফ উদ্দীনের কাছে আমের ছবি পাঠালে তিনি জানিয়েছেন, এ আম মিয়াজাকি বা সূর্যডিম জাতের।
ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরফ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, মতিউর রহমানের বাগানের আম মিয়াজাকি বলে মনে হয়েছে। এ জাতের আমগাছ বছরখানেক আগে বারির বাগানেও লাগানো হয়েছে। তবে এখনো ফল ধরেনি।
একই ইউনিয়নের নয়নগর গ্রামের আমচাষি গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে জানান, তাঁর বাগানের ১০-১২টি গাছের মধ্যে ২টি গাছে মিয়াজাকি আম ধরেছে। হর্টিকালচার সেন্টারের গাছের আমের মতোই এই আম। তিনি আম সেন্টারের কর্মকর্তাদের দেখিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এই আম মিয়াজাকি জাতের।
হর্টিকালচার সেন্টারের গাছে ধরা আমগুলোর গড় ওজন ২৫৫ গ্রাম। ভক্ষণযোগ্য অংশ প্রায় ৮১ ভাগ। ছিলকা খুবই পাতলা। আঁশহীন শাঁস। মিষ্টতা (টিএসএস) ১৫ শতাংশ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মাযদার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বের দামি আম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে জাপানের এই মিয়াজাকি আম। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমেও জেনেছি, পার্বত্য চট্টগ্রামে এই আমের চাষ হচ্ছে। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। তাই আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জেও এ আম প্রসারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এই হর্টিকালচার সেন্টার থেকে।’