চট্টগ্রামে পাহাড়ধস

চলে গেলেন মা, বেঁচে গেল বুকে থাকা যমজ শিশু

পাহাড়ধসে মাকে হারিয়েছে যমজ শিশুরা। মায়ের বুকে ঘুমিয়ে ছিল ওরা
ছবি: সৌরভ দাশ

তাসকিয়া ইসলাম তানহা চুপচাপ কোলে শুয়ে। তার কিছুক্ষণের ছোট তাকিয়া ইয়াসমিন তিন্নি খেলাধুলায় মেতেছে। মাঝেমধ্যেই হেসে উঠছে আপনমনে।

ফুটফুটে এই দুই শিশুর মা শাহীনুর বেগম গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ থানার ১ নম্বর ঝিল বরিশালঘোনায় পাহাড়ধসে মারা গেছেন। সঙ্গে তাদের ছোট খালা মাইনুর বেগমও মারা যান।

যমজ শিশুরা ছিল মা শাহীনুরের বুকে। পাহাড়ধসে মায়ের মৃত্যু হয় কিন্তু মায়ের বুকে থাকায় তারা প্রাণে বেঁচে যায়। কেউ গুরুতর আহত হয়নি। পাড়া–প্রতিবেশী গিয়ে শিশু দুটিকে উদ্ধার করেন।

আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয় তাদের মা, খালা ও নানা-নানিকে। মা ও খালাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নানা ফজলুল হক ও নানি রানু বেগম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

যমজ শিশুরা আরেক খালা নার্গিস বেগমের বাসায় রয়েছে। ফিরোজশাহ কলোনির ১ নম্বর ঝিল এলাকায় তাঁর বাসা। এর কিছু দূরে ঝিলের শেষ মাথায় থাকতেন শাহীনুরেরা। তাঁদের ঘরটি সেমিপাকা ছিল।

দুর্ঘটনার পর থেকে নার্গিস মা-বাবার সঙ্গে হাসপাতালে রয়েছেন। যমজ শিশুদের দেখাশোনা করছেন নার্গিসের মেয়ে ইয়াসমিন আকতার ও আশপাশের প্রতিবেশীরা। ইয়াসমিন বলেন, ‘কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি হলেই তারা ওই বাসায় থাকত না। আমাদের বাসায় এসে রাতে থাকত। কাল কেন ছিল জানি না।’

গতকাল রাতে যমজ শিশুদের বাবা জয়নাল আবেদীন ও তাঁর আরেক ছেলে তরিকুল ইসলাম তানিম নার্গিসদের বাসায় ছিল বলে জানান ইয়াসমিন।

শাহীনুর ও মাইনুরের লাশ মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ছেলেকে নিয়ে জয়নাল আবেদীন মেডিকেলে রয়েছেন। ছেলে এখনো বোঝেনি তার মা আর নেই। জয়নাল মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার ওপর খোদার গজব নেমে এসেছে। যখন বৃষ্টি পড়ে তখন তাদের বলেছিলাম ওখান থেকে চলে আসতে। আসবে বলেছিল। আমার মেয়ে দুটিকে আল্লাহ রক্ষা করেছে। ছেলেটি আমার সঙ্গে ছিল বলে বেঁচে গেছে।’