চট্টগ্রামের শতবর্ষী জেনারেল হাসপাতাল প্রথমবারের মতো নিজস্ব ‘ওয়াশিং প্ল্যান্ট’ চালু করতে যাচ্ছে।
২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে ইতিমধ্যে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নতুন এ প্ল্যান্টে কাপড় ধোয়ার পর তা সঙ্গে সঙ্গে ইস্ত্রি হয়ে যাবে। আলাদা করে কাপড় শুকানোর প্রয়োজন হবে না।
হাসপাতালটিতে এত দিন রোগীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যবহৃত বস্ত্র বেসরকারিভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হতো। এখন হাসপাতালে ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের ফলে সহজে এ কাজ করা যাবে। এতে সরকারি রাজস্বও সাশ্রয় হবে বলে মনে করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালটিকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে পরিচালনা কমিটি। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। হাসপাতালটি মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে বলে মনে করছেন চিকিৎসক ও রোগীরা।
জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে অত্যাধুনিক ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে করোনা রোগীদের ব্যবহৃত বস্ত্র, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পোশাক পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে নিজস্ব ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য একই বছরের ১৩ জানুয়ারি অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়।
পরবর্তীকালে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফও) সহায়তায় ১ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াশিং মেশিন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ড্রায়ার মেশিন ও আয়রন মেশিন দরপত্রের মাধ্যমে কেনা হয়। চীনে তৈরি এসব মেশিন সরবরাহ করে ঢাকার ব্লু ক্যানভাস লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মেশিন ও প্ল্যান্ট স্থাপনে খরচ হয় ২২ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘রোগী ও হাসপাতালে ব্যবহৃত কাপড় ঠিকাদারদের দিয়ে জীবাণুমুক্ত করাতে অনেক টাকার দরকার হয়। সময়ও বেশি লাগে। এখন নিজস্ব প্ল্যান্টে দ্রুত সময়ে কাপড় জীবাণুমুক্ত করা যাবে বলে আশা রাখছি।’
হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দিয়ে এ প্ল্যান্ট উদ্বোধনের পরিকল্পনা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা এখন উদ্বোধনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করবে। উদ্বোধনের পরই পুরোদমে ওয়াশিং প্ল্যান্টের কার্যক্রম চালু হবে।
বিশেষ করে করোনাকালে চিকিৎসাসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতাল–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সময়ে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালটির সেবার পরিসর বাড়ছে। পাশাপাশি হাসপাতালের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তার অংশ হিসেবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন, আইসিইউ বিভাগ চালু, অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার সবশেষ সংযোজন ওয়াশিং প্ল্যান্ট।
১৯০১ সালে স্বল্প পরিসরে সেবাদানের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল যাত্রা শুরু করে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি স্থাপনের পর রোগীদের ব্যবহৃত বিছানার চাদর, অস্ত্রোপচারসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্যবহৃত কাপড় জীবাণুমুক্ত করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।
২০২০ সালের শুরুতে হাসপাতালটিকে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তারপর কাপড়চোপড়ের সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। সেগুলো পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার জন্য একদিকে অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়, অন্যদিকে সময়ও বেশি লাগে। এখন হাসপাতালে ওয়াশিং প্ল্যান্ট চালু হলে অর্থের পাশাপাশি সময়ও বাঁচবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।