করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় চট্টগ্রাম সিটির ১০টি ওয়ার্ডকে রেড জোনের মধ্যে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ওয়ার্ড কোতোয়ালি থানার মধ্যে পড়েছে। দুটি ওয়ার্ড বন্দর থানায় এবং পতেঙ্গা, পাহাড়তলী, খুলশি ও হালিশহর থানায় একটি ওয়ার্ড রেড জোনের মধ্যে থাকছে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড লকডাউনের আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য ওয়ার্ডগুলো লকডাউন করা হবে।
করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির গত শনিবারের সভায় এসব এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়। সভার একটি কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, জেলার জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন এবং পুলিশ সুপার মিলে এসব জোনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে লাল এলাকা চিহ্নিত করবেন।
চট্টগ্রাম সিটির রেড জোনে রাখা ওয়ার্ডগুলো হলো, বন্দরে ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর, পাহাড়তলীর ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড, বৃহত্তর কোতোয়ালির ১৬ নম্বর চকবাজার, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার, ২১ জামালখান ও ২২ নম্বর এনায়েতবাজার ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ লালখানবাজার নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড।
করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আজ রোববার বিকেলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে তাঁর দপ্তরে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, নগর পুলিশের একজন উপকমিশনার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষ হওয়ার পর মেয়র নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার ১২টা ১ মিনিট থেকে নগরের ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডকে ২১ দিনের জন্য লকডাউন করা হবে। এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ বের হতে পারবেন না। কেউ ওই এলাকায় যেতে পারবেন না। পর্যায়ক্রমে আমরা বাকি নয়টি ওয়ার্ড লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসব। এ জন্য কাল/পরশু আমরা আবার বৈঠকে বসব। মেয়র নাছির উদ্দীন আরও বলেন, করোনার ব্যাপক সংক্রমণ ঘটে গেছে। এখন এলাকাভিত্তিক কঠিন লকডাউন ছাড়া উপায় নেই। প্রতিটি ওয়ার্ড ২১ দিন করে লকডাউন করা হবে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত নগর পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম কঠোর লকডাউন করার পক্ষে অভিমত দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম নগরের ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড প্রথমে লকডাউন করা হবে। মঙ্গলবার পরীক্ষামূলকভাবে আমরা কাজটা শুরু করতে চাই। এ জন্য এলাকাবাসী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সমাজসেবক সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। কমিউনিটি পুলিশের সহায়তা লাগবে। কঠোর লকডাউন করা হলে করোনার বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রামে রোববার ভোর পর্যন্ত ৫ হাজার ৮৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। রাজধানী ঢাকার পর চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১১৭ কোভিড রোগী। চট্টগ্রামে মৃত্যু হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ সারা দেশে ৮৭ হাজার ৫২০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। মারা যায় ১ হাজার ১৭১ জন। দেশে গড় মৃত্যু হার ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সারা দেশের তুলনায় চট্টগ্রামে মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণ, চিকিৎসা সামগ্রীর অপ্রতুলতা। বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাবের কারণে শ্বাসকষ্টে বেশির ভাগ রোগী মারা যাচ্ছেন।
চিকিৎসকেরা জানান, চট্টগ্রামে সরকারিভাবে চারটি ল্যাব এবং বেসরকারি আরও দুটি ল্যাবে করোনাভাইরাস শনাক্তের কাজ চলছে। নমুনা দিয়েও অনেকে ৮/১০ দিন ধরে পরীক্ষার ফল পাচ্ছেন না। পরীক্ষা বাড়ানো হলে কোভিড রোগীর আরও অনেকে বেড়ে যাবে। নমুনার তুলনায় ল্যাবের সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় ৭০ লাখ অধ্যুষিত চট্টগ্রাম নগরে পরীক্ষাও কম হচ্ছে। আরও ল্যাব বাড়ানোর জন্য চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানিয়েছেনে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি।