চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকার একটি ষোলোশহরের দুই নম্বর গেট এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় এ এলাকা। এই এলাকার ওপর দিয়ে যাওয়া নগরের প্রধান সড়ক সিডিএ অ্যাভিনিউ ডুবে থাকে পানিতে। যানজট আর জলাবদ্ধতায় চরম নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। এই সমস্যা সমাধানে পানিনিষ্কাশনের জন্য নতুন নালা নির্মাণ করা হচ্ছে।
‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নগরের দুই নম্বর গেট কবরস্থানের পাশ থেকে চশমা খাল পর্যন্ত নালার নির্মাণকাজ চলছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
সিডিএ সূত্র জানায়, দুই নম্বর গেটের কবরস্থানের পাশ থেকে চশমা খালের সঙ্গে এই নালা যুক্ত করা হবে। ৭৩ মিটার দীর্ঘ ও ৩ দশমিক ৮ মিটার প্রশস্ত নালার নির্মাণকাজ গত সপ্তাহে শুরু হয়েছে। নালার গভীরতা হবে ৩ দশমিক ৮ মিটার। আর এফ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নালা নির্মাণের কাজ করছে। দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে আরও একটি সংযোগ নালা নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। চশমা খালের মেহমান কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে একটি নালা মির্জা খালের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর কীভাবে এ নালা নির্মাণ করা হবে তা চূড়ান্ত হবে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষক ও গবেষকদের ‘বাংলাদেশের চট্টগ্রাম নগরের বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতার পূর্বাভাস’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, নগরের ১৩টি এলাকায় বেশি জলাবদ্ধতা হয়। এর মধ্যে ষোলোশহর ও নাসিরাবাদ এলাকায় প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা পানি জমে থাকে। এক থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে যায় এই এলাকা।
সিডিএর প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই নম্বর গেটের কবরস্থানের প্রান্ত থেকে চশমা খালে পানি যাওয়ার দেড় শ ফুট দীর্ঘ বক্স কালভার্ট দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর রয়েছে। ফলে সিডিএ অ্যাভিনিউ, সিঅ্যান্ডবি কলোনি, জাকির হোসেন বাই লেন, আল ফালাহ গলির পানি দুই নম্বর গেট মোড়ে এসে উপচে পড়ে। পানিনিষ্কাশনের পথ না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি জমে থাকে মোড়টিতে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, সিডিএ আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক নির্মাণের সময় দুই নম্বর গেটের বক্স কালভার্টটি প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। এই কারণে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে সিডিএ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংস্থাটির প্রকৌশলীদের দাবি, বক্স কালভার্ট অনেক আগে থেকেই অকার্যকর। নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে কালভার্টটি দিয়ে পানিনিষ্কাশনের সুযোগ নেই।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দুই নম্বর গেটের বক্স কালভার্টটি কার্যকর না থাকায় কবরস্থান প্রান্তের পানি চশমা খালে যেতে পারে না। ফলে বিশাল এলাকা থেকে নেমে আসা পানি সড়কে উপচে পড়ে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্যতা যাচাই করে এর সত্যতা পেয়েছে। তাই এখন পানিনিষ্কাশনের জন্য নতুন নালা নির্মাণ করা হচ্ছে।
এই নালা নির্মিত হলে দুই নম্বর গেটের জলাবদ্ধতা অনেকাংশে নিরসন হবে বলে দাবি করেন আহমদ মঈনুদ্দিন। তিনি বলেন, অবশ্য নালা নির্মাণের পর জটিলতা থেকে যাবে। কেননা মেহমান কমিউনিটি সেন্টারের সামনে চশমা খাল সংকুচিত হয়ে গেছে। তখন সেখানে গিয়ে পানি আবার উপচে পড়বে। তবে এই সমস্যা সমাধানের জন্য চশমা খাল থেকে মির্জা খালে একটি নালা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলে দুই নম্বর গেট এলাকার জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে মানুষ।
এদিকে, নগরের ব্যস্ততম সড়ক সিডিএ অ্যাভিনিউয়ের ওপর দিয়ে এই নালা নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে যান চলাচলে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা এই সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক।
তবে নির্মাণকাজের সময় যান চলাচলে যাতে সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক আহমদ মঈনুদ্দিন। তিনি জানান, গাড়ি চলাচল যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য ধাপে ধাপে কাজ করা হবে।