চট্টগ্রামের সরকারি ল্যাবগুলোতে কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তের জন্য একটি কিট দিয়ে দুটি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ২৩ জুন মঙ্গলবার থেকে এ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। একই পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে কক্সবাজার ল্যাবেও।
ল্যাবের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা পাওয়ার পর তাঁরা এ ব্যবস্থা চালু করেছেন। এতে পরীক্ষার ফলাফলে কোনো হেরফের হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, এক কিটে দুই নমুনার পরীক্ষা সম্প্রতি দেশের একটি গবেষণাগারে করা হয়। সেখানে সফল হওয়ার পর এর প্রয়োগ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সরকারি ল্যাবগুলোতে চালু করা হয়েছে।
একটি কিট দিয়ে দুটি নমুনার পরীক্ষা এবং এর ফলাফলের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক চন্দন কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, একটি কিটের ব্যবহারিক প্রয়োগ কীভাবে হবে, তা সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানই বলে দেয়। তিনি বলেন, কী ধরনের কিটে একটির পরিবর্তে একাধিক নমুনার পরীক্ষা হচ্ছে, তা ব্যবহারকারী নিশ্চয়ই ভালো বলতে পারবেন।
নমুনা পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২৩ জুন শুরু করার আগে টানা তিন দিন চট্টগ্রাম ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে এই পদ্ধতির পরীক্ষামূলক মহড়া হয়। এতে সফলতা এলে ল্যাবগুলোতে এর প্রয়োগ শুরু হয়। এতে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ নমুনা পরীক্ষা বেড়ে যায়। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে নমুনাজটও কমে আসবে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে আগে গড়ে ৬০০ থেকে ৭৫০টি নমুনার পরীক্ষা হতো। ২২ জুন এক লাফে তা হাজার ছাড়িয়ে যায়। ২৩ জুন ৯৯১ এবং ২৪ জুন ৯৭১টি নমুনার পরীক্ষা হয়। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে সক্ষমতার অনেক কম নমুনার পরীক্ষা হচ্ছে। সেখানে পরীক্ষা বাড়ানো হলে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার মধ্যে ব্যবধান থাকবে না।
ল্যাবপ্রধানদের ভাষ্য
করোনার নমুনা পরীক্ষার সঙ্গে সরাসরি জড়িত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সাবরিনা শারমিন। এক কিটে দুই পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে জানান, ‘আগে একটি কিটে ২০ মাইক্রোলিটার নমুনা আমরা বসাতাম। কিটের পরিধি অর্ধেক কমিয়ে এনে আমরা আনুপাতিক হার ঠিক রেখে ১০ মাইক্রোলিটার নমুনা বসাচ্ছি। নমুনা ও কিটের অনুপাত ঠিক থাকায় আগের মতোই নিখুঁত ফলাফল আসছে। তাতে বেশিসংখ্যক নমুনার পরীক্ষা করা যাচ্ছে।’
>২৩ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রামের চারটি ও কক্সবাজারের একটি ল্যাবে একটি কিট দিয়ে দুটি নমুনার পরীক্ষা শুরু হয়েছে
ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালের ল্যাবপ্রধান শাকিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করেছি। পরীক্ষামূলক মহড়ায় ফলাফল সঠিক পেয়েছি। এরপর আমরা নতুন নিয়ম কার্যকর করেছি। এতে রাষ্ট্রের অর্থ সাশ্রয় হবে।’
ভারতের কিছু কিছু ল্যাবে এক কিটে একাধিক নমুনার পরীক্ষা হচ্ছে বলে নাম প্রকাশ না করে দাবি করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক। ওই শিক্ষকের মতে, জনবহুল বাংলাদেশেও এই পদ্ধতি সুফল দিচ্ছে। আরও আগে এই তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটানো উচিত ছিল বলে তাঁর ভাষ্য।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজেও কয়েক দিন ধরে এক কিটে দুই নমুনা পরীক্ষা চলছে। এতে ওই কলেজে নমুনার জট শূন্যে নেমে আসে। সেখানকার অধ্যক্ষ অনুপম বড়ুয়া জানান, তাঁরাও এক কিটে দুই নমুনার পরীক্ষা করছেন। ফলাফলে অসামঞ্জস্য নেই। তাঁদের নমুনাজটও নেই।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক কিটে দুই নমুনা পরীক্ষার ফলে ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে এক দিনে নমুনা পরীক্ষা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যদিও আমরা প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ নমুনা পাচ্ছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়ানোর তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। তাতে নমুনার জট আর থাকবে না।’
চট্টগ্রামে গতকাল রোববার ভোর ছয়টা পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৮৯ করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সরকারি হিসাবে মারা গেছেন ১৬৯ জন।