চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলেই চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান মিলবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এবারের বর্ষায় পানি জমে অস্বস্তিকর অবস্থা যাতে সৃষ্টি না হয়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ‘চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিষয়ক’ মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এলজিআরডি মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় এ সভার আয়োজন করে।
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। গত সপ্তাহে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সভার শুরুতে এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন ও উন্নয়নকাজের জন্য সিটি করপোরেশন ও সিডিএর মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। এরপর সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার সভা করেন মন্ত্রী।
সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, আগামী বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় এবং জনজীবনে কোনো অস্বস্তি সৃষ্টি না হয় সে জন্য সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে একটি বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হবে। আশা করে যাচ্ছে আগের মতো জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না।
চট্টগ্রামকে দৃষ্টিনন্দন ও বসবাস উপযোগী করতে প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছে সেগুলোর কাজ ত্বরান্বিত করতে হবে বলে জানান মন্ত্রী। সভায় জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে সিডিএর চলমান প্রকল্পগুলোর গুণগত মান ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিয়ে কোনো দুঃসংবাদের কথা চিন্তা করার দরকার নেই। চট্টগ্রাম অতীতের তুলনায় আরও ভালো অবস্থায় থাকবে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে গত সপ্তাহে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সবগুলো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হবে। বাস্তবায়ন শেষে প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম করবে সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে তাদের সক্ষমতা তৈরি হয়ে যাবে।
উড়ালসড়কে পানি জমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, উড়ালসড়কে পানি জমে থাকে না। যদি হয় তা সমাধান করা হবে।
সভা সূত্র জানায়, সভায় করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পূর্ণাঙ্গ সুফল পেতে হলে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত ৪০টি খালের মুখে জলকপাট (স্লুইচগেট) নির্মাণ করতে হবে। আবার প্রকল্প টেকসই করতে হলে বাস্তবায়ন শেষে রক্ষণাবেক্ষণ কাজে প্রতিবছর ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এ জন্য করপোরেশনকে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে মাথায় রাখতে হবে।
সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনী তাঁদের আশ্বস্ত করেছে, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সুফল আসবে। তবে এই কাজে তাঁদের লোকবল ও অভিজ্ঞতা না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।
সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সিটি করপোরেশনকে নগরের নালা–নর্দমা পরিষ্কারের রুটিন দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
এর আগে মতবিনিময় সভার শুরুতে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম চট্টগ্রামকে অর্থনীতির ‘গেটওয়ে’ ও ‘দ্বিতীয় রাজধানী’ উল্লেখ করে বলেন, চট্টগ্রামবাসীর সব সমস্যা সমাধান করা হবে। কোনো সমস্যার কারণে বা কোনো মতগত পার্থক্যের কারণে আর পিছিয়ে থাকা যাবে না। চট্টগ্রামের স্বার্থে যেসব কাজ করা দরকার তা চিহ্নিত করতে হবে।
এদিকে সভার শুরুতে মন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত ৫৭টি খাল সংস্কার করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে। যাতে বর্ষায় অতিমাত্রায় পানিতে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয়। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীর জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানান মন্ত্রী।
বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এস এম গোলাম ফারুক, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ প্রমুখ।