সৈয়দ আবদুল ওয়াদুদের দাফন সম্পন্ন

চক্ষু চিকিৎসায় একটি যুগের অবসান

সৈয়দ আবদুল ওয়াদুদ
সৈয়দ আবদুল ওয়াদুদ

দেশের প্রথম প্রজন্মের চক্ষু চিকিৎসক অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল ওয়াদুদকে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় দাফন করা হয়েছে। জর্জিয়া ইসলামিক সেন্টারে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট এই চিকিৎসক ১ জানুয়ারি সেখানে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সৈয়দ আবদুল ওয়াদুদ ১৯২৬ সালের ১ মার্চ শেরপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৫ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন তিনি। দেশভাগের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত হন এবং ১৯৫০ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনা ও ভিয়েনা একাডেমি অব মেডিসিন থেকে যথাক্রমে এমওএমএস ও ডিওএমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ডিও ডিগ্রি পান তিনি। ওই বছরই তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। পরের বছর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের (মিটফোর্ড হাসপাতাল) অফথালমোলজি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে বদলি হন। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের জন্য তিনি এম এম ইস্পাহানিকে কারিগরিসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন।
চক্ষুরোগ নিবারণ ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে অবদান রাখায় পাকিস্তান সরকার তাঁকে ১৯৬৭ সালে জাতীয় পুরস্কার সিতারা-ই-কায়েদ-ই-আজমে সম্মানিত করে। তবে পাকিস্তান সরকারের নীতির প্রতিবাদে ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
১৯৭১ সালের শেষে আবদুল ওয়াদুদ ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের প্রধান পরামর্শক ও প্রধান নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে দেশজুড়ে চক্ষুশিবির স্থাপন করে চিকিৎসাসেবা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর নেতৃত্বে ৩০ শয্যার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ৩০০ শয্যার বিশেষ হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়।
১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক চক্ষু ফাউন্ডেশনের যৌথ সহযোগিতায় ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ডা. ওয়াদুদ দেশের প্রথম চক্ষু-ব্যাংক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। বাংলাদেশে অঙ্গ দান করার উপায় সহজতর করার জন্য আইন প্রণয়ন করতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সক্রিয় সহযোগিতা পেয়েছিলেন। প্রয়োজনীয় আইনি সহযোগিতা পাওয়ায় প্রথম বছরেই ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ৩০০টি কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজের ছাত্রাবস্থা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন তাঁর জ্যেষ্ঠ সমসাময়িক ও বন্ধু। জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের অনেক সদস্যের চক্ষু চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ডা. ওয়াদুদ।
অধ্যাপক ওয়াদুদ ১৯৭৬ সালে ভিজিটিং প্রফেসর ও ফেলো হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়, ফিলাডেলফিয়ার উইলস চক্ষু হাসপাতাল ও ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়সহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু প্রখ্যাত প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করেন। ১৯৮২ সালে আন্তর্জাতিক চক্ষু ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ চক্ষু হাসপাতাল অরবিসের প্রথম বাংলাদেশ সফরে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
ডা. ওয়াদুদ ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের প্রধান পরামর্শক ও ইস্পাহানি চক্ষুরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক পদ থেকে ১৯৯২ সালে অবসরে যান। বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের চক্ষুরোগ বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে তিনি ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কর্তব্যরত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটের নিউ হাভেনে অবস্থিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান ডিস্ট্রেসড চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফ্যান্ট ইন্টারন্যাশনালে ২০১০ পর্যন্ত তিনি প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।
সৈয়দ আবদুল ওয়াদুদ স্ত্রী ও দুই ছেলে, পুত্রবধূ ও পাঁচ নাতি-নাতনি এবং বহু বন্ধু, আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় ১৬ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় তাঁর বাসভবনে (রোড-৬৬, বাসা-১০, গুলশান-২, ঢাকা) দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এতে মরহুমের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অংশগ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।