রাজধানীর চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুজনের মরদেহ চাঁদপুরে দাফন করা হয়েছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জে দুজনের লাশ নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
যে দুজনের লাশ দাফন হয়েছে, তাঁরা হলেন হাজীগঞ্জের গন্ধর্বপুর উত্তর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের কাজিম উদ্দিন ব্যাপারীবাড়ির কাজী আবুল হোসাইনের ছেলে কাজী মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক (২৭) ও ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার রুদ্রগাঁও গ্রামের শামছুল হক ব্যাপারী (৬২)। তবে চাঁদপুরের আরেক বাসিন্দা হাজি ইসমাইলের খোঁজ এখনো পাননি তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
গত বুধবার রাত ১০টার পর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। সরকারি হিসাবে ৬৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
ফরিদগঞ্জের নিহত শামছুল হকের ভাতিজা রফিকুল ইসলাম জানান, হাতের ঘড়ি দেখে শামসুল হকের লাশ শনাক্ত করেন তাঁর ছেলে মাহবুব। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
শামছুল হক ব্যাপারীর দীর্ঘদিনের সহচর কিরণ পাটওয়ারী জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলায় ডেকোরেটরের ব্যবসা করতেন শামছুল হক। স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, ছেলে মাহবুব এবং মেয়ে পারভিন ও নীপাকে নিয়ে কেরানীগঞ্জে থাকতেন। ঘটনার দিন নিজ প্রতিষ্ঠান মদিনা ডেকোরেটরে শামছুল হক ব্যাপারী একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য কাপড় প্রস্তুত করছিলেন। দুজন সহযোগীকে নিয়ে কাজ করা অবস্থায় আগুন লেগে তিনি মারা যান।
হাজীগঞ্জের নিহত সিদ্দিকের বাবা কাজী আবুল হোসাইন জানান, চকবাজারের ছোট ব্যবসায়ী তাঁর ছেলে আবু বকর সিদ্দিক ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। আগুন লাগার ঘটনা টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারেন। তখন থেকে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে ঢাকায় বসবাসকারী আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। অবিবাহিত সিদ্দিক তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার বড়। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সিদ্দিকের লাশ বাড়িতে এসে পৌঁছালে রাত আনুমানিক ১১টার দিকে জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তবে আগুন লাগার ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন হাজীগঞ্জের গন্ধর্বপুর উত্তর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের আরেক বাসিন্দা হাজি ইসমাইল (৬৫)। চকবাজারে তাঁর কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন। নিখোঁজ হাজি ইসমাইলের সন্ধানে তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল ও মর্গ খুঁজে কোথাও তাঁকে পাননি। হাজি ইসমাইলের পায়ের দুটি আঙুল জোড়া লাগানো। পরিবারের সদস্যরা এই বিশেষ চিহ্নটি অবলম্বন করে মর্গে লাশ শনাক্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
এদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী গতকাল দুপুরে নিহত সিদ্দিকের বাড়িতে গিয়ে আর্থিক অনুদান ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী পরিবারের হাতে তুলে দেন। আর ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলী আফরোজ সন্ধ্যায় নিহত শামছুল হকের পরিবারের কাছে নগদ অর্থ তুলে দেন।