সরকারি কর্মচারী আইন কার্যকর হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে দুই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আইন কার্যকর হওয়ার মধ্যে কীভাবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হলো—এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘আমার যতটা মনে আছে, সরকারি কর্মচারী আইনে বলা হয়েছে “সরকারি দায়িত্ব” পালনকালে যদি কোনো ফৌজদারি মামলা হয়, তবে চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের সরকারের অনুমতি ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না।’
এ সময় দুদক চেয়ারম্যান প্রশ্ন করেন, ‘ঘুষ আদান-প্রদান কি সরকারি দায়িত্ব? ঘুষ খাওয়া কি সরকারি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে?’
আজ সোমবার সকালে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘কমিশন আইনের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ঘুষ খাওয়া সরকারি দায়িত্ব নয়। বর্তমান সরকার যেভাবে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি অনুসরণ করছে, কমিশনও ঠিক একই নীতি বাস্তবায়ন করছে। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। মহান সংসদে যেসব আইন পাস হয়, তার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রেখেই দায়িত্ব পালন করছে কমিশন।’
আজ সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান ও একই অফিসের অফিস সহকারী মো. জুলফিকারকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে দুদকের দিনাজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি বিশেষ টিম।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে দুদকের ভূমিকা কী—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ক্যাসিনো ব্যবসা দুদক আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। তবে এই ব্যবসার মাধ্যমে যে বা যাঁরা জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন, তাঁদের বিষয়টি কমিশনের আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ হওয়ায় কমিশন এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
কতজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে—এমন প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ১৫ থেকে ২০ জনের বিষয়ে গণমাধ্যম, দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য ও অন্যান্য সংস্থা থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁদের বিষয়ে এখন অনুসন্ধান করার হচ্ছে।
এসব ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা আইনি পথে চলতে চাই। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন, তাহলে তা করবেন। প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কোনো ব্যক্তি, কোনো বিশেষ পেশা দুদকের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। দুদকের বিচার্য বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতি হয়েছে কি না এবং তা কমিশন আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ কি না। যদি অপরাধটি কমিশন আইনের তফসিলভুক্ত হয়, তাহলে যিনিই হোক, তাঁকে ন্যূনতম ছাড় দেবে না কমিশন।
সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএনওডিসির উদ্যোগে ন্যাশনাল ট্রেনিং ফর অ্যান্টিকরাপশন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘করাপশন রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। এ সময় তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রথমে নিজ প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ঝুঁকি নিরূপণ করে তা নিরসনের নিখুঁত ব্যবস্থাপনার কৌশল বের করতে হবে। এ বিষয়ে এমনভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে, যার মাধ্যমে সরকারি প্রতিটি সংস্থার দুর্নীতির ঝুঁকি নিরূপণ করে তা নিরসনের ব্যবস্থাপনায়, আপনারা প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি বৈশ্বিক সমস্যা। তবে এ কথাও ঠিক, বেশ কিছু রাষ্ট্র পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সফলতা পেয়েছে। এ দেশেও রিস্ক ফ্যাক্টর নির্ণয় করে পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রথমে ব্যক্তি, পরে সেক্টরভিত্তিক ও সর্বশেষ সার্বিকভাবে রিস্ক ফ্যাক্টর নির্ণয় করে তা নিরসনে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে অবশ্যই দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব।