জ্বর ও সর্দি নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার একটি গ্রামের ছয়টি পরিবারকে পুলিশ প্রহরায় রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিনিয়ত পরিবারগুলোর সদস্যদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিচ্ছেন। এর আগে গতকাল বুধবার সকাল থেকে ওই গ্রামটি লকডাউন (বদ্ধাবস্থা) ঘোষণা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাইলজুরী গ্রামের এক ব্যক্তি (৪৮) ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের হিসাবরক্ষক পদে চাকরি করতেন। স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে তিনি ঢাকাতেই থাকতেন। সপ্তাহখানেক আগে তিনি সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলে কর্মস্থল থেকে তাঁকে হোম কোয়ারেন্টিনে ( বাড়িতে পৃথক কক্ষে) থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। ওই পরামর্শ অনুযায়ী তিনি ঢাকার বাসায় কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অসুস্থতার মাত্রা বাড়লে রাতে তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল বুধবার ভোরে ওই ব্যক্তিকে ঘিওরে নিজ বাড়িতে আনা হয়। সকাল ছয়টার দিকে অনেকটা গোপনীয়ভাবে তাঁর জানাজা শেষে গ্রামের একটি কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন সেই বাড়িতে যায়। এরপর মৃত ওই ব্যক্তির স্ত্রী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। মৃত্যুর আগে অসুস্থতার লক্ষণ শোনার পর পুরো গ্রামটি লকডাউন ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আইরিন আক্তার বলেন, ওই ব্যক্তি সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারেন, এমন সন্দেহে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে পুরো গ্রামটি লকডাউন করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির পরিবার এবং ওই ব্যক্তির জানাজায় অংশ নেওয়া প্রতিবেশী ছয়টি পরিবারের ২৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম বলেন, ওই পরিবারগুলো হোম কোয়ারেন্টিন মানছেন কিনা, তা পর্যবেক্ষণের জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে পাঁচজন কনস্টেবল সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওসি আরও বলেন, ওই গ্রামে বহিরাগত কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। গ্রামবাসীদেরও গ্রামের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। মাইকিং করে গ্রামবাসীকে কোথাও যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। এ ছাড়া লকডাউনের সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
®এদিকে আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা পরিবারগেুলোর কারও করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সৌমেন চৌধুরী। দুই স্বাস্থ্য সহকারী কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়িও ওই গ্রামটিতেই। তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কিনা, তা পরীক্ষা করা হয়নি। এ কারণে তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।