গ্লাসগো কি আশা জাগাতে পারবে

রাত–দিনের বিরামহীন দর–কষাকষি ১২ নভেম্বর শেষ হয়ে যাবে, এ কথা বলা যাবে না। অন্তত ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত হয়তো অপেক্ষা করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জীবনযাত্রার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। খরার মৌসুমে দেখা দেয় তীব্র পানির সংকট। দূর–দূরান্ত থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করে ফিরছেন নারীরা। খুলনার কয়রায়

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হয়েছে বহুপ্রতীক্ষিত ২৬তম জলবায়ু সম্মেলন বা কপ–২৬। করোনা মহামারির কারণে এক বছর পরে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন প্রায় ২০০ দেশের ১২০ জন রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধানসহ প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। ১৯৭টি রাষ্ট্র তথা স্বাক্ষরকারী পার্টি ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির চার অনুচ্ছেদে প্রতি পাঁচ বছর পর আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার একটি বিধান রেখেছিল। এবারের সম্মেলনে সেই লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। পক্ষকালের কথা থাকলেও অতীতের মতো আলোচনা আরও এক-দুই দিন বেশি গড়াতে পারে। একেবারে আলোচনা ভেঙে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে বিশ্বনেতাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবার পৃথিবীকে বাঁচানোর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কি?

প্যারিস জলবায়ু চুক্তির চতুর্থ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর রাষ্ট্রগুলোর নিজ উদ্যোগে নিজ দেশের কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকারনামায় (এনডিসি) সংশোধন আনবে। এটা তথাকথিত ‘র‍্যাচেট পদ্ধতি’ হিসেবে পরিচিত; চুক্তিতে এ শব্দমালা নেই। বিপরীত দিকে গতি প্রতিরোধ করার মাধ্যমে শুধু একটি দিকে অবিচ্ছিন্ন রৈখিক বা ঘূর্ণন গতি তৈরি করাকে ‘র‍্যাচেট পদ্ধতি’ বলা হয়। অর্থাৎ প্যারিস চুক্তির অভীষ্ট তাপমাত্রাকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত করা এবং কোনোক্রমেই ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বাইরে যেতে না দেওয়ার জন্য ‘র‍্যাচেট পদ্ধতি’।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে বলেছেন, এ পর্যন্ত জমা দেওয়া এনডিসির মাধ্যমে বিশ্বের তাপমাত্রা এ শতাব্দীর মধ্যে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে না। স্বপ্রণোদিত কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা পেশ করা হয়েছে, তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলেও বিশ্বের তাপমাত্রা এ শতাব্দীর মধ্যে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো বেড়ে যেতে পারে। নিজ উদ্যোগে হওয়ায় তথা আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহি কতটা থাকবে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। অতীতের ইতিহাস বলে, ১৯৯৭ সালে জাপানে স্বাক্ষরিত কিয়োটো প্রটোকলে শিল্পোন্নত ৩৭টি দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর আইনি বাধ্যবাধকতাসহ চুক্তি করেছিল। সে চুক্তিতে অঙ্গীকার পূরণ না হলে জরিমানার বিধানও ছিল। অথচ সেই চুক্তির কার্যকর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। আইনি বাধ্যবাধকতা ছাড়া প্যারিস চুক্তি কতটুকু কার্যকর হবে, তা কেবল সময়ই বলতে পারে!

কেন অনুচ্ছেদ-৬ নিয়ে দর–কষাকষি

প্যারিস চুক্তির ৬ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রগুলোর স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রসমূহ তাদের এনডিসি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশগত ভারসাম্যের কথা মাথায় রেখে আরও বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারবে বলে বলা হয়েছে। এর মধ্যে নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে বাজারভিত্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কার্বন নিঃসরণ ও ক্ষতিপূরণ বা অফসেট আলোচনা সবচেয়ে জটিল।

প্যারিস চুক্তির অধীনে সহযোগিতামূলক পদক্ষেপগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, আন্তর্জাতিকভাবে স্থানান্তরিত প্রশমন ফলাফল বা আইটিএমওএস (অনুচ্ছেদ ৬.২-৬.৩), দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন কার্যক্রমের দ্বারা আন্তর্জাতিক প্রশমন বিনিময়ের (বাণিজ্যের) অনুমতি এবং তৃতীয়ত, পার্টিগুলোর এনডিসি বাস্তবায়ন সহায়তার লক্ষ্যে মুনাফাবিমুখ ব্যবস্থাপনা।

এই বিষয়গুলো ইউএনএফসিসিসি এবং কিয়োটো প্রটোকলেরই সম্প্রসারিত রূপ। তবে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা এবং এর অগ্রগতি সংগত কারণে সন্তোষজনক নয়। রাষ্ট্রগুলো তাদের সম্মত হওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণেই হিমশিম খাচ্ছে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহ তাদের উন্নয়নের গতিকে বাধাগ্রস্ত না করে লক্ষ্য সামনে রেখে তাদের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রাগুলো নিয়েই দর–কষাকষি করবে।

অনেক বিষয় নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। যেমন প্রশমন ও অভিযোজন একেক দেশ একেকভাবে পরিমাপ করে। কেউ কেউ কার্বন ডাইঅক্সাইড তুল্যতার মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পরিমাপ ব্যবহার করে। অনেক দেশ মনে করে, এ পদ্ধতিতে পরিমাপ করলে প্রশমন ফলাফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে তাদের পিছিয়ে রাখবে। আবার একই বিষয়কে দুবার গণনার মতো অনভিপ্রেত বিষয়ও আছে। যে পদ্ধতিতেই প্রশমন ফলাফলের গণনা হোক, পরিমাপের নির্ধারকগুলোর যদি সাধারণীকরণ করা না হয় বা সমান বিষয়বস্তুগুলো যদি অনুমানের ওপর ভিত্তি করে হয়, তবে তা ভুল দিকে নিয়ে যাবে। বৈশ্বিক জবাবদিহির মধ্যে থাকতে পারে, এমন পদ্ধতির প্রয়োজন।

আরেকটি বিতর্কিত বিষয় হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্থানান্তরিত প্রশমন ফলাফল বা আইটিএমওএসের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা। কিয়োটো চুক্তির অধীনেও বাজার প্রক্রিয়াগুলো সম্পূরক ধারার সঙ্গে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমান খসড়া নির্দেশিকা (৬.২৬৭) দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ নিঃসরণ সীমা নির্ধারণ করে না এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিঃসরণকারী পার্টির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইটিএমওএসের প্রযোজ্যতা এবং এনডিসির অধীনে নয়, এমন খাতগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধনও এখানে বিবেচ্য বিষয়। পুনরায় বৈশ্বিক নির্গমনের সামগ্রিক প্রশমন অনুচ্ছেদ ৬.২–এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কি না, তা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।

কার্বন বাজেট, ন্যায্যতা ও উন্নয়নের অধিকার

ঐতিহাসিক দূষণকারী দেশের তালিকায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউভুক্ত ২৭টি দেশ। চীন বর্তমানে সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশ (প্রায় ২৮ শতাংশ)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, রাশিয়া ও জাপানের মিলিত নিঃসরিত কার্বনের পরিমাণ প্রায় ৩৪ শতাংশ এবং ভারত ২ দশমিক ৬২ শতাংশ। তবে জনপ্রতি হিসাবে এখনো ঐতিহাসিক দূষণকারীরা শীর্ষে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) ষষ্ঠ প্রতিবেদন বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১১টি দেশে আগামী দিনে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার ঘটনা বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হিসেবে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে দায়ী করে এ প্রতিবেদন সতর্ক করছে, পরিস্থিতি এখন ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পৃথিবীর কার্বন পরিসর ফুরিয়ে আসছে। ২০২০ সাল থেকে শুরু করে কার্বন বাজেট অনুযায়ী পৃথিবী মাত্র ৪০০ গিগাটন কার্বন নিঃসরণ করতে পারবে। অর্থাৎ একবার যদি এই সীমা অতিক্রম করে যায়, পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে। ফলে আইপিসিসি ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা বা নেট জিরোর কথা বলেছে।

কার্বন বাজেট জটিল প্রক্রিয়া। এক. পরিবেশদূষণকারী গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই–অক্সাইড এবং মিথেন বায়ুমণ্ডলে দীর্ঘদিন থাকে। একদিকে যেমন বর্তমানের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে, তেমনি যোগ হচ্ছে ঐতিহাসিক নিঃসরণের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলোও। দ্বিতীয়ত, কার্বন নিঃসরণ মূলত অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন চলাচল, বিভিন্ন শিল্পকারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ বাড়ায়। সুতরাং, জলবায়ু পরিবর্তনের আলোচনা শুধু বাস্তুসংস্থানকে ঘিরে নয়; বিশ্ব অর্থনীতির আলোচনাও বটে! অতএব অনেক দুরূহ। তৃতীয়ত, সম্পদ আহরণের প্রতিযোগিতায় থাকা দেশগুলো বায়ুমণ্ডলে বিরাজমান গ্রিনহাউস গ্যাসের আধিক্যের দায় কখনোই এড়াতে পারে না। ধনী দেশগুলোর স্বার্থে আঘাত এলেই তারা পিছপা হবে। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের অধিকার ন্যায্যতম। কিন্তু কার্বন বাজেটে তাদের পরিসর দাবিয়ে রাখতে ধনী দেশগুলো বিভিন্ন ফন্দিফিকির হাজিরে ব্যস্ত।

ভূরাজনীতি, অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতা ও জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ

কার্বন নিঃসরণের পার্থক্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ১৯৯২ সালের ফ্রেমওয়ার্ক সম্মেলনে একটি নীতি গৃহীত হয়। এটি হলো ভূমণ্ডলকে রক্ষার দায়িত্ব সব রাষ্ট্রের সম্মিলিত হলেও জলবায়ুকে বিপন্ন করার পেছনে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর ঐতিহাসিক দায়ভার আছে। এ নীতি থেকে স্খলন অনেক দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দিকটাই দেখা যাক। বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জাপানের কিয়োটোতে ১৯৯৭ সালের ১১ ডিসেম্বর কিয়োটো প্রটোকল গৃহীত হয়। এর ফলে ২০০৮ থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রথম দায়বদ্ধতা সময়কালে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী শিল্পোন্নত দেশগুলোর গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ১৯৯০ সালের পর্যায়ের চেয়ে গড়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হ্রাসের আইনগত বাধ্যবাধকতা আরোপিত হয়। কংগ্রেসের অনুমোদন না পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এ বাধ্যবাধ্যকতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর কার্যকর করেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালানোর সময় থেকেই পরিবেশ রক্ষা নিয়ে সরব ছিলেন। ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই প্যারিস চুক্তিতে যোগ দেন। এ ছাড়া বাইডেনের ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন বাজেটে ঘুরেফিরে দূষণমুক্ত জ্বালানির ব্যবহার, বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির জন্য সহায়তা, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দূষণমুক্ত করা এবং জলবায়ুবিষয়ক গবেষণায় বাজেট বাড়ানোর কথা এসেছে। গত এপ্রিলে জলবায়ু অর্থায়নে বার্ষিক প্রায় ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ব্যয় করার প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি দেন বাইডেন এবং ২০২৪ সালের মধ্যে এ পরিমাণ দ্বিগুণ করার আশ্বাস দিয়েছেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায়। সে ধারাবাহিকতায় কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিতে কপ-২৬ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন বাইডেন। কিন্তু অঙ্গীকার আর আশ্বাসের বাইরে কতটুকু অবদান রাখতে পারবে এ যোগদান? বিভক্ত মার্কিন কংগ্রেসের ওপর বাইডেনের অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি রক্ষা নির্ভর করবে। এ ছাড়া নিজ দলে রয়েছে মতানৈক্য। মার্কিন গ্যাস-কয়লানির্ভর পশ্চিম ভার্জিনিয়ার সিনেটর জো মানচিন উল্লেখযোগ্য। এর আগে ২০৩৫ সালের মধ্যে মার্কিন বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাকে কার্বনমুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করে কয়লার বিরুদ্ধে আলোচনা এগোতে পারেননি বাইডেন। শঙ্কা থেকে যায়, মানচিনের মতো মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মতো অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতা যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু কাটিয়ে উঠতে পারবে?

অন্যদিকে বিশ্বের সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী চীনের প্রেসিডেন্ট সি তাঁর গ্লাসগো যাত্রা নিশ্চিত করেননি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট সি জি-২০ বৈঠকেও যোগদান করেননি। চীন ২০৬০ সালের মধ্যে নেট জিরোর কথা বলেছে, তবে সংশোধিত এনডিসি জমা দেয়নি।

বায়ুমণ্ডলে অধিক কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। বছরের পর বছর জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ছে। তথ্যমতে, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০৩০ সাল নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যে পরিমাণে কমাতে হবে, বিশ্ব তার চেয়ে ১২০ শতাংশ বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পথে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিশ্বব্যাংক জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ করে চলেছে। জার্মানভিত্তিক পরিবেশ আন্দোলনকারী গ্রুপ আর্জওয়াল্ড বলছে, ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে বিশ্বব্যাংক।

জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলো নানা মোড়কে তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। যেমন গত জলবায়ু সম্মেলনের পর থেকে টোটাল, বিপি, শেল, গাল্প, ইকুইনর, এনি ইত্যাদি কোম্পানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে লবিং করার জন্য আনুমানিক ১৭০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে। দেখার বিষয় বিশ্বনেতারা করপোরেট আধিপত্য বলয়কে পাশ কাটিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারবিষয়ক কী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

তিনটি চিত্রকল্প

কপ-২৬ সম্মেলন ঘিরে তিনটি চিত্রকল্প ধারণা করা যায়। এক. আশা–জাগানিয়া অর্থাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চুক্তি। দ্বিতীয় চিত্র হতে পারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার চিন্তাকে নিবু নিবু অবস্থায় হলেও জাগিয়ে রাখা। তৃতীয়ত, সম্মেলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। যেমন কোপেনহেগেন হয়েছিল। দ্বিতীয়টির সম্ভাবনা বেশি। রাত–দিনের বিরামহীন দর–কষাকষি ১২ নভেম্বর শেষ হয়ে যাবে, এ কথা বলা যাবে না। অন্তত ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিমুহূর্তে অনুসরণ করতে হবে আলোচনার অগ্রগতি কোন দিকে যাচ্ছে।

অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের এবং ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’–এর চেয়ারপারসন। আইইউসিএন এশিয়া আঞ্চলিক মেম্বারস কমিটির ভাইস চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশের আইইউসিএন জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন।