রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতাদের নির্দেশে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন কর্মীরা। রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য এই হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে দেশলাই জ্বেলে পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া ব্যক্তিকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি।
আজ মঙ্গলবার মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ১৪ নভেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিও ও ছবি থেকে শনাক্ত করে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন ১১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী মো. এইচ কে হোসেন আলী, শাহজাহানপুর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ ভূঁইয়া, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্বাস আলী, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম ওরফে রবিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন ওরফে উজ্জ্বল এবং তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সহসভাপতি মাহবুবুল আলম। গতকাল সোমবার রাজধানীর সূত্রাপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মনিরুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত, গোয়েন্দা তথ্য ও আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, যাঁরা এই হামলার পরিকল্পনা করেছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল উসকানি দিয়ে পুলিশকে অ্যাকশনে যেতে বাধ্য করা, যেন তাঁরা নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের অ্যাকশনের ও লাঠিচার্জের ভিডিও দেখিয়ে বিভিন্ন মহলে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারে। বড় নেতারা তাঁদের হেলমেট পরে যেতে বলেন, যাতে নাশকতার সময় কেউ তাঁদের শনাক্ত করতে না পারে।
এ ছাড়া সেখানে আগে থেকেই লাঠিসোঁটা রাখা ছিল, উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আসামিদের মধ্যে হোসেন আলী হেলমেট পরে শার্ট খুলে পুলিশের গাড়ির ওপর উঠে লাফিয়েছিলেন। সোহাগ শার্ট খুলে লাঠি হাতে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন। আব্বাস আলী গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা করেছেন। আশরাফুল ইসলাম পুলিশের পিকআপে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা করেছেন। এ ছাড়া উজ্জ্বল ও মাহবুবুল পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও সড়ক অবরোধ করেছেন। তবে যে ব্যক্তি দেশলাই জ্বেলে পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়েছেন তাঁকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি।
নয়াপল্টনে ঘটনার দিন পুলিশ অ্যাকশনে যায়নি, বরং অসীম ধৈর্য ধারণ করেছে—মন্তব্য করে মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সেদিন কোনো অ্যাকশনে যায়নি। এটা ঠিক যে পুলিশ বিভিন্ন কাজে নির্বাচন কমিশনের আদেশ–নির্দেশ পালনে ন্যস্ত। কিন্তু সেদিন ঘটনাস্থলের আশপাশে অনেক পুলিশ আহত হয়, তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েকজন অবরুদ্ধ ছিল, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের উদ্ধার করা হয়। কোনো অ্যাকশনে যায়নি, ডিএমপির ৫-৭ মিনিটের মধ্যে সহস্রাধিক লোককে সরানোর সক্ষমতা আছে। পুলিশের অ্যাকশনের ইচ্ছা থাকলে তাদের হটিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস ও প্রত্যাশা সব রাজনৈতিক দলের শুভবুদ্ধি উদয় হোক। কিন্তু কেউ যদি নাশকতা করার চেষ্টা করে, সে যে–ই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পল্টনের ঘটনায় আসামিরা ফেসবুকের অ্যাকাউন্টে ডিঅ্যাকটিভ করেছিল, তবুও তারা পালাতে পারেনি। অপরাধ করে কেউ পালাতে পারবে না।’
গত বুধবার দুপুরে বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন রাতে বিস্ফোরক ও বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, বিশেষ আইনে এবং বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনে পল্টন থানায় তিনটি মামলা করে পুলিশ।