ভারতের সিকিমে যাওয়ার অনুমতি তখন সবে পেয়েছি আমরা। আর তো ঘরে বসে থাকা যায় না। সিল্ক রোড ছুয়ে কাঞ্চনজঙ্গা দেখতে দেখতে ছাঙ্গু লেকের পাশে দাঁড়িয়ে কীভাবে আঁকাবাঁকা হয়ে ছবি তুলব, সেই চিন্তায় মগ্ন। আমার চোখের সামনে বরফঘেরা পাহাড় ছুঁয়ে ছুঁয়ে স্নো ফল হবে, ১৪ হাজার ফুট উঁচুতে উঠতে একটু অক্সিজেনের সংকট হবে, সব তো হৃদয় উজাড় করে উপভোগ করব। কিন্তু এই ১৪ হাজার ফুট ওপর থেকে নামতে হয় মৃত্যুর ছোঁয়া সঙ্গে নিয়ে, বরফ ঝড়ের কবলে পড়ে গিয়ে রাত্রিবেলায় অচেনা এক দেশে ৩০ কিলোমিটার হাঁটতে হয় পিচ্ছিল এক পাহাড়ি রাস্তায়, যে রাস্তার বায়ে ছিল মৃত্যু, ডানেও ছিল মৃত্যু।
২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর। সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক থেকে সকাল সাতটায় আমরা যাত্রা শুরু করি ছাঙ্গু লেকের দিকে। ছাঙ্গু লেকে যেতে একটা অনুমতি নিতে হয় গ্যাংটক থেকে। অনুমতি পেতে পেতে গ্যাংটকেই সকাল ১০টা বেজে যায়। তবু সমস্যা নেই, যেতে যেতে তো ১.৫ ঘণ্টার মতোই লাগবে। আর যে গাইড সে মজার একজন মানুষ। তার নাম সনম। দারুণ ইংলিশ জানে আর সবকিছুই একজন ট্যুরিস্টের জন্য পারফেক্ট। রাস্তায় সে আমাকে সিল্ক রোড দেখাচ্ছে আর আমরা যে এত উঁচুতে যাচ্ছি তা নিয়ে কথা বলছে। আমরা মাঝে একবার এক জায়গায় নেমে ছবি তুলে নিলাম যেখানে তাপমাত্রা হবে জিরো ডিগ্রির মতো। আমরা হাসাহাসি করতেছি যে এইটা তো ওই রকম ঠান্ডা না!
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমরা ছাঙ্গু লেকে পৌঁছে যাই। লেকে পৌঁছে স্নো দেখে মানুষজনকে দেখে আমরা সবাই হিন্দি মুভির হিরো হয়ে যাচ্ছি। সনম আমাদের ছবি তুলে দিচ্ছে আর বলে যাচ্ছে দ্রুত ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে সেখানকার জুতা আর জ্যাকেট ভাড়া নিয়ে নিতে। আমরা দ্রুত ব্রেকফাস্ট করে নিচ্ছি। চা কাপে দিচ্ছে আর সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। এই ব্যাপারটায়ও খুব মজা পাচ্ছি আমরা। ভেজিটেবল মমো খেলাম আর জুতা জ্যাকেট পরে চলে গেলাম লেকের ধারে। লেকের ধারে যেতেই দেখি মানুষ সবাই বের হয়ে যাচ্ছে। তো আমি হাঁটতে লাগলাম সনমের সঙ্গে। হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম লেকের ধারে দুই–তিনজন পিছলে (স্লিপ) পড়ে যাচ্ছে। বন্ধু অনিক বলল সে আর যাবে না। আমি তার না শুনিনি, সামনে থেকে সনম বলছে ‘কাম অন ম্যান’।
আমি সনমের সঙ্গেই যেতে লাগলাম। একটু হাঁটার পরেই আমিও স্লিপ খেলাম এই বরফ জমা লেকের ধারে। একবার স্লিপ খেয়ে দ্বিতীয়বার আর সামনে যাইনি। সনম একটু রাগ করল আমি ভয় পেলাম দেখে। সনমকে সরি বলে যেই না আমরা ব্যাক করব। তখন প্ল্যান করলাম যেহেতু লেক ঘোরা রিস্ক তো আমরা রোপওয়ে তেই উঠি। তাদের মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু রোপওয়ে। রোপওয়ের দিকে চোখ যেতেই দেখি দূরে ড্রাইভার চিল্লাচ্ছে ‘আজায়ে জলদি, ঝড় আ রাহাহে’। এটা শুনেই আমরা গাড়িতে দৌড় দিই। দৌড়ে গাড়িতে উঠে মন খারাপ হয়, মাত্র এই কয়েক মিনিটের জন্য এলাম এত কষ্ট করে? এই নাথুলা পাসের রাস্তা, এই ১৪ হাজার ফুট উঁচু থেকে লেক দেখা, এগুলা এই কয়েক মিনিট?
মন খারাপ করে গাড়িতে বসেই স্নো ফল দেখে যাচ্ছি। কিন্তু স্নো ফলের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সনম তার পকেটে করে একটু রামের বোতল এনেছিল। সে চুমুক দিচ্ছে আর আমার সঙ্গে নানা টপিকে কথা বলছে।
১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে আমাদের গাড়ি একটু একটু আগানো শুরু করে। রাস্তাটা এমন যে একদম উঁচু থেকে একদম নিচু থেকে নামতে হবে। আর এই সারা রাস্তা এখন স্নোতে আটকা। স্নোর পরিমাণ বেড়েই চলছে। সনম তখন আমাকে বলল, এখানে আটকে পড়া অস্বাভাবিক কিছু না। কয়েক দিন লেগে যায় মাঝেমধ্যে এখান থেকে বের হতে। এটা শুনে অনিক একটু ভয় পেল। আমার ভয়ডর এখন আর কাজ করে না। অনিককে সান্ত্বনা দিলাম। আমাদের গাড়ি মানুষ যেভাবে আস্তে আস্তে হাঁটে, সেভাবে হাঁটা শুরু করে। কিন্তু সামনে থেকে মোড় নিতে স্লিপ খায়। স্লিপ খেয়ে ঘুরেটুরে একদম কই পড়ে যাচ্ছে ঠিক নেই। আমি গাড়ির দরজা খুলে লাফ দিতে যাই, কিন্তু দরজা খোলে না। এই দরজায় সমস্যা আছে যা চালক সকালে বলেছিলেন। এটা নিয়ে আমরা ফানও করেছিলাম যে যদি স্নো তে আটকা পড়ি তবে কেমনে বের হব?
অনিকের ডান দিকের দরজা সে খুলে নামে এক লাফে, আমিও নেমে যাই। আমাদের গাড়ি আরেক গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে দুটা একসঙ্গে হয়ে থাকে। বাইরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে বুঝলাম তাপমাত্রা -১০ এর ও নিচে হবে। গাড়িতে বসা ছাড়া উপায় নেই। দুজন আবার গাড়িতেই বসলাম। সনম দূর থেকে এসে বলল, ‘Get out of the car, it's not safe, car can slip anytime।’
আমি বললাম তবে এই জায়গা থেকে বের হওয়ার কী উপায়।
Tell us the back up plan.
No backup plan. Just walk. Take one sip of rum from me and walk if you dont wanna die.
যে গাইড সেই যখন ঘাবড়ে যায়, তখন আর কিছু করার নেই। এই পথ হাঁটতেই হবে। বিকেলও হয়ে আসছে। গাড়ি থেকে নামলাম। সনমের হাত থেকে তার ছোট রামের বোতল নিয়ে পুরাটা মুখের ভেতর দিয়ে দিলাম। বুক ঝলসে গেল কিন্তু শরীর অনেকটাই গরম হয়ে এল। দূরের এক দোকান থেকে একটা নতুন জ্যাকেটও নিয়ে নিলাম। তারপর শুরু করলাম হাঁটা। অনেক আগে একজন আমাকে একটা টিম্বারলেন্ডের জুতা দিয়েছিল। স্নো–তে হাঁটার মতো উপযোগী। সে জুতার দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকলাম এই ভরসায় যে একটু হাঁটলেই হয়তো স্নো থাকবে না। তখন খালি রাস্তায় আরামে হেঁটে হেঁটে ৩৭ কিলোমিটার দুপুরের গ্যাংটকে চলে যাব। এত উঁচু উঁচু স্নোতে রাস্তার এক সাইড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। একটা স্লিপ আমাকে নিয়ে যাবে একদম পাহাড়ের নিচে। ডেডবডিও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
হেঁটে যাচ্ছি আর সামনে যে আসছে, তাকেই জিগ্যেস করছি—
‘ওর কিত্নে দূর হে ইয়ে স্নো’
যে যার মতো কথা বলে যাচ্ছে। কেউ বলে ৩–৪ কিলোমিটার, কেউ বলে ১০।
৫ থেকে ৬ কিলোমিটার হাঁটার পর কয়েকবার কোমরে ব্যথা পাওয়ার পর বোঝা যাচ্ছে হয়তো আর সম্ভব হবে না সার্ভাইব করা। ছোট ছোট বাচ্চা, বয়স্ক মানুষ তারা কান্না করতে করতে স্লিপ খেতে খেতে হেঁটে যাচ্ছে। এখন সেনাবাহিনীর আশ্রয় ছাড়া বাইরে আর কিছুক্ষণ থাকলেই হয়তো বিপদ হয়ে যাবে। এই উঁচু জায়গার প্রধান সমস্যা হচ্ছে এখানে অক্সিজেন কম আর তাপমাত্রাও -১০ এর ও নিচে। একদম টানা ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার হাঁটার পর আমরা এক সেনা ক্যাম্প পাই। আমরা সবাই লাইনে দাঁড়াই। ক্যাম্পটার নাম ৩১৬ বেস ক্যাম্প অথবা ১৭ মাইল ক্যাম্প। সেখানে রিফিউজির মতো আমরা লাইন ধরে আশ্রয় নিই। সেনারা প্রথমে ছোট বাচ্চাদের তারপর মহিলাদের শেল্টার দিচ্ছে। বাদবাকি যুবকদের তাদের নানা রুমে রুমে নিয়ে রাখে। সে রুমে ঢুকে আমরা গাদাগাদি করে শুয়ে রইলাম। রাত ৯টা কি ১০টা হবে। ঠান্ডা আরও বেড়ে যাচ্ছে। পায়ের জুতা–মোজা ভিজে একাকার। তবু খুলছি না।
হায়দরাবাদের এক আঙ্কেল আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন। আমার গলা শুকিয়ে আসছে একদম। আমি তাকে বলছি, দাদা, পানি মিলেগা? তিনি বললেন, রাতে যখন ওষুধ খাবেন, তখন আমাকেও একটু দেবেন।
রাত আরেকটু বাড়তেই শুনলাম যে নিচের সেনা ক্যানটিনে খাবার দিচ্ছে গরম পানিও দিচ্ছে। বন্ধুকে অনিককে বললাম, চল খেয়ে আসি। সে বোঝাল রিস্ক হয়ে যেতে পারে। বাইরে অনেক ঠান্ডা আর তাদের ডাইনিংটাও নিচে। তবু তাকে রিকোয়েস্ট করে নিয়ে গেলাম। পানি ছাড়া এতক্ষণ আর পারা যাচ্ছিল না। কোনোমতে ডাইনিংয়ে গিয়ে লাইন ধরে দাঁড়ালাম। সেনারা তাদের নিজেদের কাছে স্টকে যা ছিল সব আমাদের দিয়ে দিচ্ছে। আমরা নিজেরাই প্লেট ধুয়ে নিচ্ছি। অন্যজনের খাওয়ার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের খাওয়া হলে আমরা প্লেট ধার নিয়ে খেতে বসছি। খিচুড়ি রান্না করেছে তারা। এই খিচুড়ি এই জীবনে আমি ভুলব না। এই স্নোর সঙ্গে যুদ্ধের পর গরম পানি খেয়ে যখন খিচুড়িটা মুখের ভেতর নিলাম আর ভেতরটা একদম গরম হয়ে গেল। খেয়ে দেয়ে আর্মি ঘোষণা দিল গাড়ি এসেছে আমাদের জন্য। দৌড়ে গাড়ির কাছে গেলাম, হাতও ধুইনি। গাড়ির কাছে গিয়ে বললাম, ‘দাদা, গ্যাংটককা গাড়ি হে? কাহা দাদা কাহা?’
আর্মি বোঝাল রাস্তায় স্নো। গ্যাংটকে কয়দিনে যেতে পারব ঠিক নেই। গাড়ি আসছে পাশের একটা আর্মি ক্যাম্পে আমাদের নিয়ে যাবে, যেখানে রুমে হিটার আছে। আমরা গেলাম সে ক্যাম্পে আর্মির গাড়িতে চড়ে। আর্মির গাড়ির চাকার নিচে শিকল বাঁধা থাকে। ফলে অল্প স্নোতেও চলতে পারে সে গাড়ি।
সেখানে গিয়ে রিকোয়েস্ট করে যাচ্ছি সবাইকে একটা ফোন করার জন্য। আমার থেকেও অনিক অস্থির। ওর বাবা নেই। মা আর বোন নিয়েই ওর সংসার। আমি সকালে আম্মার সঙ্গে কথা বলে আসছি আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে কালকেই আমি এখান থেকে বের হতে পারব। কোনো কিছুই আমাকে মারতে পারবে না। তবু বাসার কাউকে জানিয়ে রাখার জন্য কারও কাছ থেকে মোবাইল খুঁজে যাচ্ছিলাম। হায়দরাবাদের এক ভাই সাহায্য করলেন। আমাদের জন্য ঠান্ডার মাঝে দাঁড়িয়ে মোবাইল উঁচু করে ধরে নেটওয়ার্ক একটু আনলেন কিন্তু দেশের বাইরে কল করার জন্য টাকা নেই। আছে শুধু Whatsapp। আর তাও তার মোবাইলে চার্জ আছে ৩%–এর মতো। যাই হোক রিস্ক নিয়ে দিলাম কল আমার বড় ভাইকে। তার Whatsapp–এ গিয়ে দেখে সে এটা ইউজ করে না প্রায় অনেক দিন। তখন একটু ঘাবড়ে গেলাম যে হয়তো ফোন ধরতে পারবে না। তাই সঙ্গে সঙ্গে ভাবিকে এক মেসেজ দিয়ে বললাম যে আমি কাল কথা বলব, আমার ফোনে একটু সমস্যা হয়েছে।
রাতটা একটু ভয়মুক্ত হয়েছে আমাদের রুমে হিটার আছে বলে। অনিক একটু পরপর আমার নাম ধরে চিৎকার করছে। তার ধারণা এত মানুষের মাঝে যদি আমি হারিয়ে যাই, তখন কী হবে। আমাদের মোবাইলও হারিয়ে গেছে। থাকলেও লাভ হতো না, নেটওয়ার্ক নেই। আর্মিরা এসে আমাদের স্লিপিং ব্যাগ দিল। জীবনের প্রথম স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে শুয়ে পড়লাম। তারপর একটু আরামে শুয়ে ছিলাম। রাতে স্বপ্ন দেখলাম, সুন্দর স্বপ্ন, বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
সকাল ৬টার দিকে উঠে দেখি অনেকেই হাঁটা শুরু করছেন মেইন আর্মি ক্যাম্পের দিকে। সবার ধারণা সেখানে আর্মি অবশ্যই আমাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেছে। আমরা সেখানে গিয়ে শুনি রাস্তাভর্তি স্নো, রাস্তা এখনো উন্মুক্ত না। তখন আবার আমাদের নাশতা করে নিতে বলছে আর্মিরা তাদের ক্যানটিনে। তারা সারা রাত ঘুমায়নি। তাদের নিজেদের থাকার জায়গা এই কয়েক হাজার মানুষকে দিয়েছে। তারা রাতে না খেয়ে আমাদের খাইয়েছে। নাশতার পর একজন গেটের কাছে গিয়ে চিৎকার করে বলেন, ইন্ডিয়ান আর্মি।
আর ক্যাম্পে আমাদের মতো আশ্রয় নেওয়া সবাই বলে জিন্দাবাদ। চোখের পানিতে সবাই জিন্দাবাদ বলে সম্মান দিচ্ছিল এই মহান মানুষদের। যারা না থাকলে আমরা হয়তো বাঁচতাম না। যারা না থাকলে আমাদের ডেডবডিও কেউ পেত না।
অবশেষে নাশতা খেয়ে যখন শুনলাম এখানে কয়েক দিন আটকে যাওয়ারও ঘটনা আছে, তাই নাশতা খেয়ে আমরা অনেকে হাঁটা শুরু করলাম। প্রখর সূর্য এক পাশে আর অন্য পাশে কাঞ্চনজঙ্গা। যে কাঞ্চনজঙ্গা দেখার শখ ছিল আজীবনের, সে আজ আমার সামনে। হাঁটছি আর তাকে দেখছি। আজ আমি আর তাকে বলতে পারছি না তুমি সুন্দর। তবে মনে হচ্ছে এক পাশে সূর্য, এক পাশে কাঞ্চনজঙ্গা রেখে আমি হেরে যেতে পারি না। আমি জিতব, আমি ভেঙে পড়ব না। হেঁটে হেঁটেই এই রাস্তা আমি পার করব। কয়েক কিলোমিটার হেঁটে দেখি তাও স্নো শেষ হয় না। তবে আকাশ একদম পরিষ্কার। মেঘ একটুও নেই। এই সুন্দর আবহাওয়া অনেকটাই আশা দিচ্ছে। যখন পানি পিপাসা পাচ্ছে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনার পানি খাচ্ছি, হাঁপাচ্ছি কিন্তু আমার একটু ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে না। এটাই আমি উজ্জীবিত হয়ে আরও ৭ কিলোমিটার হাঁটার পর দেখি দুইটা ছোট দোকান। সেই দোকানের সামনে যেতে এক সিকিমিজ ভাঙা হিন্দিতে সুন্দর করে বলে যাচ্ছে,
‘কেয়ে নাও, সব মিলেগা ইদার, মমো মেগি, কেয়া লেগা তুজে’
মমো খেলাম আর দুইটা ডিম খেলাম, তার কাছে থাকা নরমাল পানিও বরফ হয়ে আছে। খেয়ে দেয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখি সামনে আরও আর্মি দাঁড়ানো। তারা বলে যাচ্ছে আরেকটু সামনে যাও, সেখানে গাড়ি আছে তোমাদের জন্য যারা তোমাদের গ্যাংটকে পৌঁছে দেবে।
অবশেষে গাড়ি আসে। গাড়ির মাঝে বসে রইলাম দুই বন্ধু আমরা। মনে পড়ছে সনমের কথা। সে কই আছে? কেমন আছে? বেঁচে আছে?
মনে পড়ছে কালকের কথা। দূরে চলে যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্গা আমার কাছ থেকে আর আমরা চলে যাচ্ছি জীবনের কাছে। পকেটে হাত দিয়ে দেখি মোবাইল নেই সানগ্লাস নেই। না থাক, এগুলোর কিচ্ছু দরকার নেই। সব হারিয়ে যাক, দরকার শুধু এই জীবনের। এখন মনে হচ্ছে নতুন এক জীবনে আছি। যে জীবনে ভয় নেই। পাহাড়, স্নোর ওপর আমার ঘৃণা আসেনি। কারণ প্রকৃতি সুন্দর। প্রকৃতির কাছে বারবার ফিরে যাব, বারবার বেঁচে ফিরব।