গুপ্তখালে আরও ১৫০ জন আটকা, ভেসে উঠেছে লাশ

‘প্রচণ্ড গরমে শান্ত জলের বিশাল সাগরে গা ভিজিয়ে নিতে কার না ইচ্ছে করে। তাই আমিও ঝাঁপ দিয়েছিলাম সাগরে। কোমরপানিতে নেমে বন্ধুদের সঙ্গে কিছুক্ষণ মজা করলাম। কিন্তু এরই ফাঁকে গুপ্তখালে আটকা পড়ে নিজের জীবনটা হারাতে বসব, তখনো ভাবিনি। আল্লাহর রহমত ছিল বলে প্রাণে রক্ষা পেলাম। ইয়াছিরের ডুবুরিদের ঋণ সারা জীবনেও শোধ করা যাবে না।’গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে কথাগুলো বললেন ঢাকা সিটি কলেজের মানবিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও মিরপুরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের ছেলে কেফায়েত উল্লাহ (২৩)। গতকাল সকাল নয়টায় ইয়াছির লাইফ গার্ড স্টেশনের ডুবুরিরা তাঁকে উদ্ধার করেন। বালুচরে ফেলে মুখ দিয়ে পেটের পানি বের করে তাঁকে সুস্থ করা হয়। গত বুধবার নিখোঁজ তিনজনের মধ্যে শাহেদ (২৫) নামের এক পর্যটকের লাশ ওই দিনই রাত নয়টায় সৈকতের ডায়াবেটিস হাসপাতাল পয়েন্টে ভেসে আসে। অন্য দুজনের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।কেফায়েতের মতো গতকালও হাজার হাজার পর্যটককে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত গোসল করতে দেখা গেছে। গতকালও অন্তত দেড় শতাধিক পর্যটক গুপ্তখালে আটকা পড়ে। ইয়াছির লাইফ গার্ড স্টেশনের ডুবুরিরা তাদের উদ্ধার করেন। স্টেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল জানান, তাঁরা গত দুই দিনে গুপ্তখালে আটকা পড়ে নিখোঁজ হওয়া প্রায় ৩০০ পর্যটককে উদ্ধার করে তাদের নতুন জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জনের বেশি ছিল নারী। দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার তত্পরতা চালানো না গেলে অনেককেই বাঁচানো যেত না। কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম একটি লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিখোঁজ তিন পর্যটক ঢাকার জেনেভা ক্যাম্প থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। তিনি জানান, ভাটার সময় এবং গুপ্তখালের পাশে গোসলে না নামতে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং ও প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু কার কথা কে শোনে। গতকাল সকাল সাড়ে আটটায় লাবণী পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্ট ও সার্ফিং পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, অন্তত কয়েক হাজার পর্যটক কোমরপানিতে নেমে মহাধুমধামে গোসলে মত্ত। অথচ তখন সাগরে চলছে পূর্ণ ভাটা। এ কারণে সাগরে গোসল করা বিপজ্জনক উল্লেখ করে ইয়াছির লাইফ গার্ড স্টেশনের ডুবুরিরা সৈকতের বিভিন্ন স্থানে লাল পতাকা তুলে দেন। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা কেউ মানছেন না। সকাল নয়টা ১৮ মিনিটে ডুবুরিরা লাল পতাকা নামিয়ে সবুজ পতাকা তুলে দিলে অনেকের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। কারণ সবুজ পতাকা তুলে দিলে ধরে নিতে হবে, সাগরে জোয়ার শুরু হয়েছে। এ সময় স্রোতের গতি কম থাকে বলে গোসল করা নিরাপদ। কক্ষ না পেয়ে গতকাল শত শত পর্যটককে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে চলে যেতে দেখা গেছে। গতকাল সকাল নয়টায় টেকনাফ থেকে নৌপথে সেন্ট মার্টিন যাতায়াতের দুটি জাহাজ চালু হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পর্যটক জাহাজে করে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে গেছে।