>
- দুবাইতে গাড়ি চালাতে হলে ‘ইংরেজি পরীক্ষা’য় পাস করতে হয়
- পরীক্ষা দিতে হয় নিজের দেশে
- ঢাকায় আন্তর্জাতিক পরীক্ষা টোয়েইক দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি
- অপেক্ষা করছেন ভিসার জন্য
সিলেটের কানাইঘাটের বাহারউদ্দিন ২০০৩ সালে দুবাইতে যান গাড়িচালক হিসেবে। দুবাই সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) গাড়ি চালিয়ে ২০১৫ সালে দেশে চলে আসেন লম্বা ছুটি কাটাতে। ছুটি শেষে দুবাই ফিরে জানতে পারেন, দুবাইতে এখন গাড়ি চালাতে হলে ‘ইংরেজি পরীক্ষা’য় পাস করতে হয় এবং সেটি দিতে হয় নিজের দেশে। বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে আসেন বাহারউদ্দিন।
সম্প্রতি ঢাকায় এসে ইংরেজি যোগাযোগের আন্তর্জাতিক পরীক্ষা টোয়েইক দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। এখন অপেক্ষা করছেন ভিসার জন্য। দুবাইতে গাড়িচালকের ভিসাপ্রত্যাশী চট্টগ্রামের রবিউল ইসলাম ও কক্সবাজারের মোহাম্মদ মিজানুরও সম্প্রতি ঢাকায় এসে এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৬ সালেই দুবাই সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ গাড়িচালকদের জন্য ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে টোয়েইক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু সে সময় দুবাইয়ের শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য বন্ধ থাকায় বিষয়টি সেভাবে প্রচার পায়নি। ২০১৮ সালে দুবাইতে জনশক্তি রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা বাতিল হওয়ার পরই কেবল বিষয়টি জানা যায়। ২০২০ সালে দুবাই মেলাকে কেন্দ্র করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কয়েক লাখ গাড়িচালকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক বছর এ ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তান অনেকখানি এগিয়ে গেছে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বাংলাদেশ থেকেও গাড়িচালক নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। কিন্তু বাদ সাধছে ইংরেজি দক্ষতা।
আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য ইংরেজির এই পরীক্ষা (টেস্ট অব ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন—টোয়েইক) আমাদের দেশে প্রচলিত টোয়েফল বা আইইএলটিএসের মতোই। তবে এটি খুব একটা জনপ্রিয় নয়। বিশ্বের ১৬০টি দেশের ১৪ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার জন্য এই সনদের দরকার হয়। প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ ব্যক্তি বিশ্বব্যাপী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
গাড়ি চালনার জন্য ইংরেজি পরীক্ষা কেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে টোয়েইক পরীক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইটিএস-এর ক্লায়েন্ট ম্যানেজার লিড ডেবরা সিউজাক প্রথম আলোকে ই-মেইলে জানান, টোয়েইক মূলত যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইংরেজি ব্যবহারের দক্ষতার পরিমাপক। এই পরীক্ষার স্কোর দেখে কোনো ব্যক্তি ইংরেজিতে যোগাযোগ করতে পারদর্শী কি না, সেটি বোঝা যায়। বিদেশিরা কোনো দেশে আসার পর এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে প্রথমেই গাড়িচালকের মুখোমুখি হন। এ কারণে দুবাই সরকার গাড়িচালকদের ইংরেজি জ্ঞানের প্রতি জোর দিচ্ছে বলে মনে করেন ডেবরা।
দেশেও বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা তাদের কর্মীদের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা করতে পারে বলে জানা গেছে। জাপানি বায়িং সংস্থা ইউনিকলো তাদের কর্মীদের ইংরেজি দক্ষতার যেকোনো একটি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে এটি একটি আবশ্যক যোগ্যতা হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা।
এ ব্যাপারে জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর পরিচালক নূরুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, বিষয়টি তাঁরা অবগত আছেন এবং এ জন্য গাড়িচালকদের জন্য ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থাও তাঁরা করেছেন। সরকারের স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইআইপি) আওতায় এক লাখ গাড়িচালকের প্রশিক্ষণ বর্তমানে চলমান রয়েছে। এসইআইপি প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক জালাল আহমেদ জানান, গাড়িচালকদের চার মাসের প্রশিক্ষণে ইংরেজি ও আরবি ভাষার প্রশিক্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে টোয়েইক বা অনুরূপ কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা সেখানে রাখা হয়নি।
ইটিএসের ডেবরা সিউজাকের ধারণা, ভবিষ্যতে কেবল কারিগরি বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান নয়, সাধারণ চাকরির ক্ষেত্রেও ইংরেজির বাধ্যবাধকতা আবশ্যিক হয়ে উঠবে।
গ্রামীণফোনের প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেনেরও একই ধারণা। তিনি মনে করেন, ‘আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে ইংরেজি শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যই নয়, এটা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বিনোদন, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এমনকি ইন্টারনেটেরও প্রধান ভাষা। তাই এই যুগে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সেটা চাকরিতেই হোক আর ব্যবসাতেই হোক, ইংরেজিতে দক্ষতা থাকাটা একরকম অপরিহার্য।’