নাশকতা এড়াতে সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলপথে ট্রেনের গতিবেগ প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে ট্রেনের সময়সূচিতে (শিডিউল) বিপর্যয় ঘটেছে। ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ের ৪ থেকে ২৪ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে। এতে যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।
গাইবান্ধা শহরের থানাপাড়ার ব্যবসায়ী মনজুর হাবীব বলেন, ‘গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য ১৩ জানুয়ারি লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কিনি। কিন্তু সেই ট্রেন গাইবান্ধা রেলস্টেশনে আসে পরদিন দুপুরে। বেশির ভাগ পথই দাঁড়িয়ে ঢাকায় পৌঁছি। ফেরার সময়ও একই ধরনের দুর্ভোগে পড়তে হয়।’ শহরের পুরাতন বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লাল মিয়া বলেন, ট্রেনে মালামাল আনা-নেওয়া করতাম। এতে পরিবহন খরচ কম হতো। এখন অটোরিকশায় মালামাল বহন করায় খরচ বেশি হচ্ছে। তাই ব্যবসায় তেমন একটা লাভ হচ্ছে না।
গাইবান্ধা রেলস্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম বলেন, অবরোধের কারণে ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। ২৪ ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেন চলাচল করায় দুই দিনের যাত্রী এক দিনে ভ্রমণ করছেন। এতে তাঁদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
গাইবান্ধা রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, অবরোধ শুরুর পর কয়েক দিন পর সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলপথে এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেন চলাচল করছিল। কিন্তু নাশকতার আশঙ্কা থাকায় ৯ জানুয়ারি থেকে ট্রেনের গতিবেগ ৫০ ভাগ কমানো হয়। গাইবান্ধা জেলায় এই রেলপথের ৬৪ কিলোমিটার পড়েছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা রেলস্টেশন থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চৌধুরানী রেলস্টেশন পর্যন্ত এই অংশ বিস্তৃত। অবরোধের আগে এই রেলপথে প্রতিটি আন্তনগর এক্সপ্রেস এবং লোকাল ট্রেন ঘণ্টায় ৬০-৬৫ কিলোমিটার গতিবেগে চলছিল। কিন্তু নাশকতা এড়াতে এখন ঘণ্টায় ৩৫-৪০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চালানো হচ্ছে। রাত ১০টা থেকে ভোররাত পর্যন্ত ট্রেনগুলোর ওপর নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।
গাইবান্ধা রেলস্টেশন সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে দুষ্কৃতকারীরা এই রেলপথের বোনারপাড়া রেলস্টেশনের কাছে বুরুঙ্গি এলাকায় রেলপথের ফিশপ্লেট খুলে রাখে। এতে পদ্মরাগ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে তিনজন যাত্রী নিহত হন। তাই রেলপথে বিশেষ নজরদারি রাখা হয়েছে। প্রতিদিন রাতে আন্তনগর ট্রেন স্টেশন ছাড়ার আগে রেলওয়ে পুলিশ শুধু ইঞ্জিন চালিয়ে রেলপথ পরীক্ষা করে। তারপর পুলিশ সবুজ সংকেত দেওয়ার পর ট্রেন ছাড়ছে। ফলে প্রতিটি আন্তনগর ট্রেন ২০ থেকে ২৪ ঘণ্টা এবং লোকাল ট্রেন গড়ে চার ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে।
রেলওয়ের গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা অঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) দীপক কুমার সিংহ বলেন, নাশকতা এড়াতে ট্রেনের গতি কমানো ছাড়াও প্রতি দুই কিলোমিটার পর পর আটজন করে আনসার সদস্য রেলপথ পাহারা দিচ্ছে। ট্রেন যাতায়াতের সময় বিভিন্ন স্থানে বাঁশি বাজিয়ে তাঁরা সতর্কসংকেত দিচ্ছেন।