নড়াইলে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় পরিকল্পিতভাবে জুতার মালা পরানো হয়েছে। এর মাধ্যমে মানসিকভাবে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে। এ ঘটনার সময় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই এ ঘটনা ঘটেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি সাভারে কলেজশিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে খুনের দায়ে ওই শিক্ষার্থীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।
শনিবার সন্ধ্যায় পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েসের প্রতিবাদ কর্মসূচি ও প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী। চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী বলেন, সমাজ-রাষ্ট্র যে পর্যায়ে গেছে, সেখানে হাজার হাজার জিতু তৈরি হয়েছে। নষ্ট রাজনীতি ও ভ্রষ্ট শিক্ষার কারণে এসব জিতু তৈরি হচ্ছে। শিক্ষায় গলদের কারণেই এ সংকট। তিনি আফসোস করে বলেন, ‘শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা ও গলায় জুতার মালা দেওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম শিক্ষামন্ত্রী একটা বিবৃতি দেবেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের পরিবারের কাছে ছুটে যাবেন। সমবেদনা জানাবেন। কিন্তু তাঁরা তা করেননি। শুধু ওই কলেজের পরিচালনা কমিটি ভেঙে দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দায় সেরেছে।’
গত ১৮ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো হয়। অপরদিকে গত ২৭ জুন এক শিক্ষার্থীর হামলায় সাভারের আশুলিয়ার কলেজশিক্ষক উৎপল কুমার সরকার মারা যান বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি শরিফ চৌহানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. ইদ্রিস আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অরুণ দাশ, নাট্যকার প্রদীপ দেওয়ানজি, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, নারীনেত্রী জেসমিন সুলতানা, জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন, শিক্ষক স্বপন কুমার সাহা, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, সিরাজুল ইসলাম, কবি আশিস সেন প্রমুখ।
সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষক হত্যা ও নড়াইলে প্রশাসনের উপস্থিতিতে শিক্ষক নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। বিকেল সাড়ে চারটায় চট্টগ্রাম নগরের প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে এ দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সপ্তম ব্যাচের ছাত্র ও প্রাক্তন ছাত্রনেতা ও সিপিবির জেলা কমিটির সভাপতি অশোক সাহা। সংগঠনের সহপ্রচার সম্পাদক মোহম্মদ ইউছুপের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন সহসভাপতি ও চাকসু ভিপি মাহজারুল হক শাহ চৌধুরী, আবুল কদর, চাকসুর ভিপি নাজিম উদ্দীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন, কামরুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সগীর আহমদ, দপ্তর সম্পাদক দাউদ আবদুল্লাহ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিহত উৎপল কুমার সরকারের বন্ধু মুহাম্মদ ইসহাক প্রমুখ।
এদিকে একই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার বিকেল চারটায় আন্দরকিল্লা মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
কর্মসূচিতে সভাপতি সৈয়দ লকিতুল্লাহ বলেন, যে শিক্ষার্থীকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেছেন শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার, সে শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেই হত্যার অভিযোগ। এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। আগেও দেশের মানুষের ওপর আক্রমণ হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে। এই তালিকায় শিক্ষকও আছেন। আগের ঘটনাগুলোর বিচার ঠিকভাবে হলে এই শিক্ষকের প্রাণ যেত না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকেই প্রাণ গেছে শিক্ষকের।
শিক্ষকেরা এখন ভয়ের মধ্যে আছেন উল্লেখ করে সৈয়দ লকিতুল্লাহ বলেন, শিক্ষকেরা ক্লাসে ভয়-ডরহীনভাবে পড়াতে পারেন না। শিক্ষার্থীরা নানা জটিলতা তৈরি করেন।