গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের চূড়ান্ত ফলাফল আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে আশা করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া। প্রথম আলোকে তিনি মুঠোফোনে বলেন, অধ্যাপক শাহিনা তাবাসসুমের নেতৃত্বাধীন পারফরম্যান্স কমিটির সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর কথা হয়েছে। এর ভিত্তিতেই তিনি এটা বলতে পারছেন। এই কমিটির রিপোর্টই শেষ কথা। এটা আর অন্য কোনো কমিটিতে যাবে না।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমানও প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ইতিবাচক রিপোর্ট পাওয়ামাত্রই নিবন্ধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পেলেই হবে না, তাঁদের দরকার হবে কিট তৈরির কাঁচামালসহ নানা সামগ্রী অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সংগ্রহ করার সুযোগ।
পেছাল অ্যান্টিজেন টেস্ট
এদিকে গত মঙ্গলবার আগের ‘মানিকজোড়’ পরিকল্পনা থেকে আপাতত সরে এসেছে গণস্বাস্থ্য। চলতি প্রক্রিয়াতেই রক্তনির্ভর অ্যান্টিবডি টেস্ট ও লালানির্ভর অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট তৈরির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখন আশা করা হচ্ছে, আগে আসবে অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট। পরে আসবে অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট। কারণ, সম্মিলিত মনিটরিং টিম (উক্ত পারফরম্যান্স কমিটি এবং গণস্বাস্থ্যের প্রধান কিট উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীল ও ড. মোহাম্মাদ রায়েদ জমিরউদ্দিন সমন্বয়ে গঠিত) দেখেছে, লালার নমুনা সংগ্রহে জটিলতা হচ্ছে। তাই অ্যান্টিজেন টেস্ট ভুল হচ্ছে। এখন রক্ত নিয়ে শুধু অ্যান্টিবডি টেস্ট হবে।
অ্যান্টিবডি কিট কীভাবে করোনা চিনবে
গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট শুধু করোনা শনাক্ত উপযোগী করেই তৈরি করা হয়েছে। অ্যান্টিবডি সাধারণত উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৬/৭ দিন পর থেকে দেখা দিতে শুরু করে।
কিট প্রকল্পের অন্যতম গবেষক ড. নিহাদ আদনান প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমত উপসর্গযুক্ত কোনো ব্যক্তির যদি অ্যান্টিবডি টেস্টের ফল পজিটিভ আসে, তাহলে তার অর্থ হবে অতি সম্প্রতি তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাঁর শরীরে করোনা প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি শুরু হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, উপসর্গযুক্ত কোনো ব্যক্তির টেস্টে নেগেটিভ আসার অর্থ হবে, ওই ব্যক্তি হয়তোবা অতি সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন এবং করোনোর অন্য শনাক্তকারী কিট আরটি পিসিআর (রিয়েল টাইম রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমারিজ চেইন রিঅ্যাকশন) অথবা অ্যান্টিজেন টেস্ট করাবেন। সেই টেস্টে পজিটিভ এলে তিনি এক সপ্তাহ পরে আবার অ্যান্টিবডি টেস্ট করাবেন। তখন তিনি দেখবেন, তাঁর দেহে করোনা প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কি না।
তৃতীয়ত, যদি কোনো ব্যক্তির করোনা উপসর্গ না থাকে, তিনি যদি অ্যান্টিবডি টেস্ট করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর টেস্ট পজিটিভ হওয়ার অর্থ হবে, সেই ব্যক্তির শরীরে করোনা প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে। এবং তিনি কিছুদিন আগেই আক্রান্ত হয়েছিলেন।
চতুর্থত, উপসর্গ না থাকা কারও টেস্টের ফল নেগেটিভ আসার অর্থ হবে, তিনি আগে আক্রান্ত হননি। তবে ভবিষ্যতে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ রয়ে গেছে।
ড. নিহাদ আদনান আরও বলেন, প্লাজমা থেরাপির ক্ষেত্রেও তাঁদের উদ্ভাবিত অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট সহায়ক হবে। গত রাতে তিনি আরও তথ্য দেন, লালা সংগ্রহের নিখুঁত পদ্ধতি ইতিমধ্যেই তাঁরা চূড়ান্ত করেছেন। করোনা কারও শরীরে ঢোকার পরে যদি ভাইরাসটি বিস্তার লাভ শুরু করে, তখন সেই ব্যক্তির লালা হতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করলে তাঁর দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। আরটি পিসিআরও একই কাজ করতে পারে।
গণস্বাস্থ্যের র্যাপিড ডট ব্লট কিট প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. মুহিবউল্লাহ খোন্দকারের ভাষায়, ‘করোনাবিরোধী লড়াইয়ে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন—দুটিই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। মানিকজোড়! দুটি টেস্টই বারবার করতে হতে পারে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুটি পরীক্ষা আলাদা জিনিস, আলাদাই হবে। আর আমরা অ্যান্টিজেন টেস্ট থেকে সরে আসিনি। পিছিয়েছি মাত্র। ড. আদনান অবশ্য বলেন, এক সপ্তাহ আগে জাপান এবং এক মাস আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অ্যান্টিজেন কিট বাজারে এনেছে।
আগাম কাঁচামাল আমদানির চ্যালেঞ্জ
গণস্বাস্থ্য মনে করে, অ্যান্টিবডি কিট অবিলম্বে মানুষের কাজে লাগাতে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা লাগবে। কাঁচামাল আমদানিতে দেরি হলে প্রতিদিন ৫০ হাজার কিট তৈরি করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে না। এ জন্য তারা কাঁচামাল আমদানির আগাম অনুমতি চেয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ হতে চললেও তারা চিঠির উত্তর পায়নি। এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বড় বিনিয়োগের প্রশ্ন তো আছেই। ইতিমধ্যে ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বপ্ন অ্যান্টিবডি কিট মানুষের উপকারে লাগবে, সেটা দ্রুত দেখা। ইতিমধ্যে তিনি কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তিনি প্রয়োজনে দুই শ কোটি টাকা মূল্যের নগর স্বাস্থ্য হাসপাতাল বন্ধক রাখবেন। কারণ, এই প্রকল্প সফল করতে তাঁর ৫০ কোটি টাকা লাগবে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথায়, এ ক্ষেত্রের আরেক বড় বাধা কাঁচামাল আমদানি। প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিন ঘণ্টায় যা হবে, প্রথাগত আমলাতান্ত্রিক পথে গেলে ৩০ দিনেও সেটা হবে না। তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন পাওয়ামাত্রই মানুষ আমাদের কাছে কিট আশা করবে। তখন দ্রুত না দিতে পারলে মানুষ আমাদের ওপরে অসন্তুষ্ট হবে।’
কমিটিতে পাঠাবেন না মহাপরিচালক
এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছ থেকে টেস্টের ফলাফল পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রশ্নের জবাবে তিনি নিশ্চিত করেন, বিএসএমএমইউর পারফরম্যান্স কমিটির কাছ থেকে ইতিবাচক রিপোর্ট এলেই তিনি দ্রুত নিবন্ধন প্রদানের যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। এমনকি প্রচলিত আইনে প্রাপ্ত ফলাফল ঔষধ প্রশাসনের কারিগরি কমিটিতে পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনি সন্তুষ্ট হলে তাঁর বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। বিএসএমএমইউ থেকে সন্তোষজনক ফল পাওয়ামাত্রই তিনি একক সিদ্ধান্তে নিবন্ধন করে দেবেন। আর কোনো কমিটিতে পাঠাবেন না। গণস্বাস্থ্যের কিট প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মহাপরিচালকের ওই মনোভাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গণস্বাস্থ্যের আগাম কাঁচামাল আমদানি–সংক্রান্ত উল্লিখিত চিঠি এখনো দেখেননি বলেও জানিয়েছেন। তিনি অবশ্য বলেন, ফল ইতিবাচক হওয়ার আগেই আগাম অনুমতি দিলে তাতে জটিলতাও কম নয়। তাঁর কথায়, কোনো কারণে প্রোডাক্ট অনুমোদন না পেলে তখন আবার কাঁচামাল আমদানিতে অর্থ ব্যয় করে ফেলার যথার্থতার কথা উঠতে পারে। তিনি অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলেন, এ পর্যন্ত ১০ বার কাঁচামাল আমদানির জন্য অনাপত্তিপত্র দিয়েছি। তাঁদের কাছে যা আছে, সেটা দিয়ে তাঁরা উল্লেখযাগ্য পরিমাণ কিট তৈরি করতে পারবে।
ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার অবশ্য মহাপরিচালকের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা যা আমদানি করেছি, তা দিয়ে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৮ হাজার কিট তৈরি সম্ভব। অবশ্য তার একটা বড় অংশই ইতিমধ্যে আমরা অভ্যন্তরীণ গবেষণা এবং বিএসএমএমইউর জন্য খরচ করে ফেলেছি। তবে নিবন্ধন পেলে আমরা ১০ লাখ কিট তৈরির জন্য কাঁচামাল আমদানির জন্য আবেদন করব।’
উল্লেখ্য, জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট কিট প্রকল্পের সমন্বয়ক ড. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালককে গত ২৮ মে দেওয়া চিঠিতে বলেন, ‘দেশের বর্তমান জরুরি অবস্থা বিবেচনায়, মানবিক দুর্ভোগজনিত চাপের মধ্যে গত বছরের ডেঙ্গু কিটের মতো বা এই বছরের বিভিন্ন ওষুধ যেমন রেমডিসিভিরের মতো জরুরি ব্যবহার অনুমোদন (EUA) আওতায় ইন ভিট্রো ডায়াগনস্টিক কিট (যা শরীরের বাইরে ব্যবহৃত হয়) হিসেবে আমাদেরকে অস্থায়ীভাবে অনুমোদনের আবেদন করেছি। এতে করে আমরা বিবিধ প্রস্তুতি প্রক্রিয়া, বিশ্বের এই লকডাউন অবস্থায় এগিয়ে রাখতে পারি। সংযুক্ত তালিকা অনুসারে SINO Biologic China থেকে রি-এজেন্ট (কিট তৈরির উপকরণ) আমদানির অনুমোদন (NOC) পেলে আমরা এ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি, যা একটি সময়সাধ্য বিষয়।’ অবশ্য একই সঙ্গে তাঁরা এটাও জানিয়ে দেন, ‘আপনাদের অনুমোদন পেলেই আমরা কিট প্রস্তুত শুরু করব।’
সাভারে একদিন
গত কয়েক দিনে সাভারে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান ল্যাবরেটরি সরেজমিনে পরিদর্শন এবং প্রধান গবেষক ড. বিজন কুমার শীলসহ তাঁর দলের সদস্যদের সঙ্গে সাভারে ও ঢাকার নগর স্বাস্থ্য হাসপাতালে দফায় দফায় আলোচনা করেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা মনে করেন, পররাষ্ট্র এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বস্তরের ঐকান্তিক সহযোগিতা পেয়েছেন বলেই তাঁরা আজকের এই জায়গায় আসতে পেরেছেন। তাঁরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের প্রকল্পের সাফল্য চান, এটা মনে করার মতো যথেষ্ট কারণ তাঁদের নজরে ও উপলব্ধিতে এসেছে। তবে তাঁদের মতে, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তরফে কিছু ক্ষেত্রে অধিকতর সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব ছিল। সেটা পেলে কিট নিয়ে মানুষের কাছে যেতে সময়সীমা আরও কমত। এ প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিশ্বের বহু দেশকে প্রচলিত আইন থেকে সরিয়ে এনেছে। কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও ঘটেছে। কিন্তু সেটা তাঁরা তাঁদের প্রস্তাবিত র্যাপিড টেস্ট কিট তৈরির ক্ষেত্রে দেখতে পাননি।
ডা. বিজন শীলের নেতৃত্বাধীন দলটি অবশ্য অ্যান্টিবডি নয়, তারা বেশি উচ্ছ্বসিত অ্যান্টিজেন কিট নিয়ে। কারণ, বিশ্বে কোথাও একত্রে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন টেস্ট হয় না। ড. বিজনের মতে অ্যান্টিজেন কিট বর্তমানে দেশে চালু থাকা আরটি পিসিআরের মতোই কার্যকর। কারও শরীরে ভাইরাস ঢুকলেই অ্যান্টিজেন কিট সেটা ধরে ফেলবে। আর যতটা সতর্কতা এবং সংবেদনশীল প্রযুক্তির সাহায্যে আর টি পিসিআর দিয়ে ভাইরাস শনাক্ত করতে হয়, তার থেকে অনেক সহজভাবে এবং স্বল্প সময়ে অভিন্ন ফল দেবে অ্যান্টিজেন কিট। খরচও অনেক কম।
অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য এই প্রতিবেদক আমন্ত্রিত হন। তবে লালা দিতে বললে থুতুই দেন। পরে তাঁরা বলেন, থুতু পরীক্ষা করলে ভাইরাস থাকলেও সেটা ধরা পড়বে না। লালা লাগবে। মুখের রসটা দিতে হবে। তারপর প্রতিবেদকের টেস্টের ফল নেগেটিভ আসে। তবে পুরো প্রক্রিয়াটা খুব সহজ।
মূল ল্যাবে যাই। প্রবেশমুখেই হোয়াইট বোর্ড। তাতে ড. বিজনের হাতে লেখা: ‘আমি নই, আমরা।’ ড. বিজন এবং তাঁর দলের সদস্যরা দেখান, কী করে অ্যান্টিজেন কিটে নেগেটিভ ও পজিটিভ আসে। রেজাল্ট পেতে সময় লাগল ৫ মিনিটের কম।
বিলম্ব নিয়ে মত–দ্বিমত
মেজর জেনারেল রহমান অবশ্য বলেছেন, গণস্বাস্থ্যের কিট উন্নয়নে বিলম্বের জন্য ঔষধ প্রশাসনকে দায়ী করার মনোভাব দুঃখজনক। এটা সঠিক নয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর মনে করে, প্রথমে অ্যান্টিবডি টেস্ট এবং পরে অ্যান্টিজেন টেস্ট বিষয়ে গণস্বাস্থ্য সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এতেও বিলম্ব ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে কিছুটা বিলম্ব ঘটেছে। কারণ, অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন কিটের টেস্ট সম্পূর্ণ আলাদা। দুটোর প্রটোকল আলাদা। কিন্তু আমরা পরে অ্যান্টিজেনের প্রটোকল তৈরি করতে সময় নিইনি। খুব দ্রুত হয়েছে। বিএসএমএমইউর ৪০ সদস্যের অ্যাথিক্যাল কমিটির প্রধান অধ্যাপক শাহানা বলেন, অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন কিট গবেষণায় তাঁদের কমিটির অনুমোদন লাগে। সেটা আমরা দ্রুততার সঙ্গে দেই। এখন ল্যাবের কাজও “খুব যত্নের” সঙ্গে হচ্ছে।’
জানতে চাইলে ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘এ নিয়ে ভুলটি আমাদের হিসাবের মধ্যেই পড়ে। গবেষণার একটা স্বাভাবিক শিডিউল আছে। তার মধ্যেই আমরা থেকেছি। তবে বিএসএমএমইউতে পাঠানোর প্রশ্নে ঔষধ প্রশাসন থেকে অনুমোদন প্রদানে ১৮ দিন দেরি করার কারণে আমাদের অ্যান্টিজেন কিট দিতে দেরি হয়েছিল। আমরা ১৯ মে অনুমোদন পাই। পরদিনই বিএসএমএমইউকে অ্যান্টিজেনের নমুনা হিসেবে লালা ব্যবহারের কথা বলি। ২৩ মে আমরা কিট সরবরাহেও প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু ঈদের ছুটির কারণে তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আমরা ২৭ মে সব কিট জমা দিই।’ অবশ্য এই ব্যাখ্যা দিয়ে ডা. মুহিব বলেন, ‘ডিজি সাহেবের সিদ্ধান্তের ওপর আমরা শ্রদ্ধাশীল।’
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান ড. বিজন
কিট প্রকল্প গণস্বাস্থ্য এবং আরএনএ বায়োটেক নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রচেষ্টার ফল। তিন তরুণ বিশেষজ্ঞের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে কোম্পানির নাম আরএনএ (রায়েদ, নিহাদ ও আহসানুল)। তাই কিটের নামকরণ করা হয়েছে, জি আর (গণস্বাস্থ্যের জি এবং আরএনএ থেকে নেওয়া হয়েছে আর) কোভিড ১৯ অ্যান্টিবডি রেপিড ডট ব্লট। ড. বিজনের নেতৃত্বে এই প্রকল্পে আছেন ৬ বিশেষজ্ঞ। তাঁদের চারজনেরই বিদেশি (ইংল্যান্ড, জাপান ও ফ্রান্স) পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই বিএসএমএমইউর সঙ্গে পরামর্শক্রমে এখনই ওষুধ প্রশাসনের কাছে অনাপত্তিপত্র আশা করেন। আইনে এতে বাধা দেবে না। তাঁরা বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কাঁচামাল আনার উৎস ও সরবরাহ ব্যবস্থার পুরোটাই অস্থিতিশীল। এ প্রসঙ্গে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আসা ৩০ হাজার ডলারের রিএজেন্ট ঢাকা বিমানবন্দর হয়ে তাঁদের হাতে সম্পূর্ণ বিনষ্ট অবস্থায় পৌঁছার মতো একটি ঘটনাও উল্লেখ করেন।
‘আমার আবেদন সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কাঁচামাল আনতে যেখানে দুই মাস লাগবে, কেবল তিনি হস্তক্ষেপ করলেই এটা এক মাসে সম্ভব হবে।’ মন্তব্য করেন ড. বিজন কুমার শীল।
মো. আহসানুল হক আরএনএর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বায়োসট্যাটিশিয়ান। তাঁর কথায়, রিএজেন্ট আনতে অনাপত্তিপত্র পেলেই আমরা চীনে ক্রয়াদেশ দিতে পারি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিহাদ আদনান কিট প্রকল্পের কারিগরি পরিচালক। তাঁর কথায়, ‘শুধু নিবন্ধন পাওয়াই শেষ কথা নয়। অনাপত্তিপত্রসহ আরও কতগুলো বিষয় আছে, যার আগাম অনুমোদন দরকার। তাহলে আমরা দ্রুত মানুষের কাছে যেতে পারব। তারা অপেক্ষায় আছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ রায়েদ জমিরউদ্দিন প্রকল্পের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট। তিনি বললেন, ‘লকডাউনের মধ্যে বাংলাদেশে দ্রুত কিছু করতে হলে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। নইলে আমরা পিছিয়ে যাব।’
আর এন এ কোম্পানিটি গত ডিসেম্বরেই রেজিস্ট্রারার অব জয়েন্ট স্টকে নিবন্ধিত। কিট থেকে মুনাফা অর্জন বিষয়ে জানতে চাইলে ড. রায়েদ বলেন, গণস্বাস্থ্যের সঙ্গে যদিও এটি আমাদের একটি জয়েন্ট ভেনচার। কিন্তু এই কিট মানুষের কাছে পৌঁছাতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী আঙ্কেলের যা স্বপ্ন, আমাদেরও একই স্বপ্ন।