দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মহাখালী এলাকায় গণসংযোগ করেছেন ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক।
মহাখালী ওয়্যারলেস গেট এলাকায় ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ফারুক এদিনের গণসংযোগ কার্যক্রম শুরু করেন। এর আগে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত পথসভায় তিনি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু আমার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা। আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নেত্রীর হাত শক্তিশালী করুন।’ এ সময় ফারুককে দেখতে সেখানে দলীয় নেতা-কর্মীদের বাইরেও অনেক সাধারণ পথচারীদের ভিড় করতে দেখা যায়।
পথসভায় বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জসিমউদ্দিন দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা স্লোগান বাদ দিয়ে আশপাশে দাঁড়ানো সাধারণ মানুষকে খুশি রাখার চেষ্টা করেন। কারণ, আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাঁরাই আমাদের ক্ষমতায় বসাবে।’
ওয়্যারলেস গেট থেকে ফারুক পর্যায়ক্রমে টিবি গেট, স্টাফ কোয়ার্টার, সাততলা বস্তি, রসুলবাগ, দক্ষিণপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও মহাখালী কাঁচাবাজার এলাকায় গণসংযোগ চালান। এ সময় তাঁর সঙ্গে বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মোশাররফ হোসেন, গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হেদায়েত উল্লাহ এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাছির উপস্থিত ছিলেন।
প্রচারে নামেননি বিএনপি প্রার্থী
এদিকে প্রতীক পাওয়ার পর তৃতীয় দিনেও প্রচারে নামেননি ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান। কবে নাগাদ তিনি প্রচারণায় অংশ নেবেন, তা-ও কেউ জানেন না। কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন, এমনকি নির্বাচনী অফিসও করেননি তিনি। আপাতত বারিধারায় নিজের বাসায় নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার করছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বিএনপি সূত্র বলছে, এই আসনে বিএনপির যাঁরা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, তাঁদের কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে আন্দালিভ রহমানকে প্রার্থী করার কারণে সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। আন্দালিভের মাঠপর্যায়ে কোনো অনুসারী না থাকার কারণে তিনি প্রচারে নামতে পারছেন না। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, আন্দালিভ রহমান হাঁটাচলার সময় যে তাঁর সঙ্গে দু-চারজন লোক থাকবেন, এমন কেউও নেই। সব মিলিয়ে অন্য রকম পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন আন্দালিভ। বিএনপির আরেক নেতা বলেন, ‘দলীয়ভাবে আমরা সহযোগিতা করব, কিন্তু তাঁর নিজেরও কিছু লোকজন থাকা উচিত ছিল।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের প্রত্যাশা ছিল দীর্ঘদিন ধরে যিনি নেতা-কর্মীদের বিপদে-আপদে পাশে ছিলেন, তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এই বিবেচনায় শিল্পপতি কামাল জামানকে তাঁরা প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন। তারপরও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। তবে পুলিশের মারমুখী ভূমিকার কারণে নেতা-কর্মীরা সবাই ঘরছাড়া। এ কারণে কেউ মাঠে নামছেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জানতে চাইলে কামাল জামান প্রথম আলোকে বলেন, আন্দালিভ রহমান তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি তাঁকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
আন্দালিভ রহমানের মোবাইলে দুই দিন ধরে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি এর জবাব দেননি। তবে তাঁর দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকুর রহমান গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ শুক্রবার থেকে প্রচারণা শুরু হতে পারে।
সর্বশেষ ২০০৮ সালে সংসদ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত আ স ম হান্নান শাহ এই আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। এই আসন ভিআইপি ও সাবেক জেনারেলের আসন হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। এবারই প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটল।