ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও মেধাতালিকায় এক শিক্ষার্থী—এমন তথ্য গণমাধ্যমে সরবরাহের অভিযোগ আনা হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সিন্ডিকেট। গত রোববার সন্ধ্যা সাতটায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৮০তম সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মাহবুবুল হক ভূঁইয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম উপদেষ্টা। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন বিভাগীয় প্রধান। মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। তিনি ওই ঘটনায় তাঁকে কোন তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, তা উপস্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে সুষ্ঠু বিচারের আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবর্ষে ‘বি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় এক শিক্ষার্থী ১২তম হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ভর্তি পরীক্ষায়ই অংশ নেননি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরও তাঁকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ডাকা হয়। এ নিয়ে ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল, ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত আরেক শিক্ষার্থীর রোল নম্বর ওএমআর শিটে ভরাট করেন। এতে ওই জটিলতার সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি প্রতিবেদনে বলেছিল, ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় গাফিলতি ও দায়িত্বে অবহেলার জন্য ওই ঘটনা ঘটেছে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাডেমিক কাউন্সিলের তত্কালীন সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক বর্তমানে কোষাধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি ঘটনাটি কে বা কারা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিটি এর জন্য সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে দায়ী করে প্রতিবেদন দেয়। মাহবুবুল হক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন।
দীর্ঘ সময় পর গত রোববার সিন্ডিকেটের সভায় এ বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। এতে মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আচরণ ও শৃঙ্খলাবিধি-২০১৮ অনুসরণ করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত সোমবার বিষয়টি জানাজানি হয়। এতে মাহবুবুল হক ভূঁইয়া ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষকেরা ক্ষুব্ধ হন। বঙ্গবন্ধু পরিষদ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সভা করে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
গতকাল শিক্ষক লাউঞ্জে করা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা না দিয়েও ১২তম হয়। এ ঘটনাটি প্রথম ধরা পড়ে প্রবেশপত্র বাছাইয়ের সময়। আমি ওই কমিটির সদস্যসচিব ছিলাম। আমাদের কমিটি থেকে বিষয়টি ‘বি’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মাসুদা কামাল ও সদস্যসচিব শামিমুল ইসলামকে লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং উক্ত পরীক্ষার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ডাকেন। পরে এ নিয়ে গণমাধ্যমের কর্মীরা সংবাদ প্রকাশ করেন। এরপর ভর্তিপ্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করে ঘটনার সত্যতাও পায়। কিন্তু পরে আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ ২৮ জুন গণমাধ্যমেই জানতে পারি, এ ঘটনায় আমি গণমাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করেছি বলে তাঁরা প্রমাণ পেয়েছেন। তাঁদের এমন দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। আমি এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নই।’
মাহবুবুল হক ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, সে প্রমাণ তাঁরা জনসম্মুখে প্রকাশ করুক। আমিও জানতে চাই কীভাবে আমি জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনই জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি আমি।’
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির হুসেইন বলেন, যাঁরা ভর্তিপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থেকে ভুল করলেন, তাঁদের শনাক্ত না করে গণমাধ্যমে তথ্যদাতা কে, তা উদ্ঘাটনে নামল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মাহবুবুল হক এতে জড়িত থাকলে প্রমাণ দিতে হবে। কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা ও আক্রোশ থেকে এ ঘটনার সঙ্গে মাহবুবুল হকের নাম জড়ানো হচ্ছে দাবি করে তাঁরা এর তীব্র নিন্দা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘সিন্ডিকেটে কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। কোনো বিচারও শুরু হয়নি। সিন্ডিকেট বলেছে, এ ব্যাপারে সরকারি চাকরিবিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে। এখন আমি কমিটি করব। কমিটি সব দেখবে।’