জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে পৃথক ধারায় ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাঁকে আরও সাত মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
রায়ে সাদেক হোসেনের ১০ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা করার নির্দেশ দেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ-৩-এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ রায় ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাদেক হোসেন বলেন, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতের দেওয়া রায় একতরফা। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তিনি আপিল করবেন। তাঁর অভিযোগ, এই মামলায় ‘আইনের অস্বাভাবিক’ প্রয়োগ হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে টানা চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সাদেক হোসেন এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন।
গতকাল আদালতের রায়ে সাদেক হোসেনের অবৈধভাবে অর্জিত রাজধানীর গুলশানে পাঁচ কাঠার একটি বাড়ি, মেসার্স বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজের ২৩ লাখ ১২ হাজার টাকা এবং ওই প্রতিষ্ঠানের নামে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কেনা জমি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়, যার আর্থিক মূল্য ১০ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকা ৫৪ পয়সা।
রায়ে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালত বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করার আদেশ দিলেও সাদেক হোসেন তা পালন করেননি। তিনি সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপন করেন। তাই তাঁর প্রতি নমনীয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দুদক আসামি সাদেক হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ২৬ (২) ধারার অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হওয়ায় তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ২৭ (১) ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ে উল্লেখ করা হয়, আসামি গ্রেপ্তার অথবা আত্মসমর্পণের তারিখ থেকে এই মামলার রায় কার্যকর হবে।
রায় ঘোষণার পর আদালতের বাইরে সাদেক হোসেনের আইনজীবী মহসিন মিয়া তাঁর প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে বলেন, সাদেক হোসেন চিকিৎসার জন্য বিদেশে আছেন। তাঁর অনুপস্থিতে বিচারকাজ এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে তাঁকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন বলেন, এই মামলায় সাদেক হোসেন হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছিলেন। ২০১২ সালে হাইকোর্ট তাঁকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। কিন্তু সাদেক হোসেন আত্মসমর্পণ করেনি। আদালত আইন অনুযায়ী তাঁকে পলাতক দেখিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক শামসুল আলম রমনা থানায় এই মামলা করেন।