খেলাধুলায় স্বাবলম্বী হওয়ার মন্ত্র

কর্মশালায় অংশ নেওয়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীরা
কর্মশালায় অংশ নেওয়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীরা

খেলাধুলার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূল স্রোতোধারায় নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন খেলাধুলাবিষয়ক সংগঠকেরা। তাঁদের মতে, প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক বিশেষ খেলাধুলার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরনির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব। স্বাবলম্বী হতে পারলেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে এবং তাদের ক্ষমতায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বুঝতে পারেন না, তাঁদের মধ্যে খেলাধুলার সক্ষমতা রয়েছে। প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে তাঁদের মধ্যে খেলাধুলার আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে হবে।

ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্সের (শি) আয়োজনে এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে এ মতামত তুলে ধরেন বক্তারা। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শারীরিক শিক্ষা কলেজে দ্বিতীয়বারের মতো ‘প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক খেলাধুলার’ এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শারীরিক শিক্ষা কলেজের অধ্যক্ষ মো. জসিম উদ্দিন, শির প্রতিষ্ঠাতা শারমিন ফারহানা চৌধুরী, সংগঠনের ক্রীড়া উন্নয়নপ্রধান পাপ্পু লাল মোদক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খেলাধুলায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভবিষ্যৎ প্রশিক্ষকেরা।

কর্মশালায় বলা হয়, স্বাভাবিক মানুষের সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খেলার সুযোগ তৈরি করতে হবে, যেন তাঁরা কখনো নিজেদের সমাজের বঞ্চিত কোনো অংশ বলে মনে না করেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। সেই খেলাধুলায় তাঁদের সম্পৃক্ত করার জন্য দক্ষ প্রশিক্ষকের প্রয়োজন। সেসব ভবিষ্যৎ প্রশিক্ষকের কর্মপন্থা তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।

শারীরিক শিক্ষা কলেজের অধ্যক্ষ মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সহমর্মিতা ও যথাযথ যত্নের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খেলাধুলায় আগ্রহী করে তুলতে হবে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক খেলাধুলার বিষয়ে অবহিত করা হচ্ছে

শির প্রতিষ্ঠাতা শারমিন ফারহানা চৌধুরী বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূল স্রোতোধারায় আনার অন্যতম মাধ্যম হলো খেলাধুলা। অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জানেনই না যে, তাঁদের পক্ষে খেলাধুলা করা সম্ভব। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বী করার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ডিজঅ্যাবিলিটি স্পোর্টস বা প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক খেলাধুলা ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্রীড়াক্ষেত্রে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সুযোগ প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার।

কর্মশালায় শারীরিক শিক্ষা কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে প্রতিবন্ধিতা কী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যা, তাঁদের আর্থসামাজিক অবস্থা ও ক্রীড়াক্ষেত্রের বাধা, ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়া, ইনক্লুসিভ স্পোর্টস এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্রীড়াক্ষেত্রে কোচিংয়ের ওপর তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক শিক্ষা নেন।

হুইলচেয়ারে করে কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন সুমন মিয়া নামের এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আজ আমার জন্য একটি বিশেষ দিন। ভবিষ্যৎ প্রশিক্ষক বা শিক্ষকেরা কীভাবে হুইলচেয়ার ঠেলছেন দেখছি। তাঁদের মাধ্যমে আমার মতো মানুষেরা আরও বেশি করে খেলাধুলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।’

তমিজ উদ্দিন আহমেদ নামের শারীরিক শিক্ষা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কে আমাকে জানার সুযোগ দিয়েছে এই প্রশিক্ষণ। আশা করি, আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খেলাধুলার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারব।’

শি জানিয়েছে, ২০২০ সালে জাপানের টোকিওতে প্যারালিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে আবুল হোসেন নামের একজন কোচের তত্ত্বাবধানে সাঁতার প্রশিক্ষণ চলছে প্রতিবন্ধী সাঁতারুদের। ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, কক্সবাজার (রোহিঙ্গা শিবির), গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, শ্রীমঙ্গল, গাইবান্ধায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সুবিধাবঞ্চিত ১ হাজার ৭৬৩ জনকে তাঁদের প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন খেলায় প্রশিক্ষণ দিয়েছে।