খুলনা নগরের খালিশপুরের স্কুলশিক্ষক কাজী তাসফিন হোসেনকে (৩২) হত্যা মামলায় পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত । এ ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। ওই মামলার অপর দুই আসামি খালাস পেয়েছেন।
আজ রোববার খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদার ওই রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কাজী মুরাদ, কাজী ফরহাদ হোসেন, মো. জাকির, কাজী রওনাকুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম গাজী। এর মধ্যে মো. জাকির পলাতক রয়েছেন। ওই মামলা থেকে খালাস পাওয়া দুই আসামি হলেন কাজী সাব্বির হোসেন ও কাজী মাসুম।
ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ আইনজীবী ছিলেন মো. আহাদুজ্জামান। তিনি বলেন, চাঞ্চল্যকর ওই হত্যা মামলায় আদালত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় দুজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একই ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক শেষ হয়। ওই দিন জামিনে থাকা পাঁচ আসামিকে জামিন বাতিল করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
নিহত তাফসিন খালিশপুর থানা এলাকার মুজগুন্নী মেইন রোডের কাজী ফেরদৌস হোসেনের ছেলে। তিনি স্থানীয় এক কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট রাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তাঁকে হত্যা করে একটি ডোবার মধ্যে লাশ চাপা দিয়ে রাখে। পরে মোবাইল ট্র্যাকিং করে একজন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। চলতি বছরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলাটি চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক মামলা হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের জন্য খুলনার বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠায়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, কাজী তাসফিন হোসেন ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট বিকেলে নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় তাঁর বাবা কাজী ফেরদৌস হোসেন এ নিয়ে খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার পর খালিশপুর থানা-পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে সাইফুল ইসলাম গাজীকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল তাফসিনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী মিলে ২৮ আগস্ট রাত ৯ থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে তাফসিনকে হত্যা করে মৃতদেহ বয়রা পুলিশ লাইনের পশ্চিম পাশের একটি ডোবায় কচুরিপনা ও হোগলা বনের মধ্যে চাপা দিয়ে রাখেন। সাইফুলের দেখানো মতে ওই ডোবা থেকে পিলার ও বাঁশের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় তাফসিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে আসামি সাইফুল ও অপর সহযোগী আসামি কাজী মুরাদ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তাঁরা ছয়জনের নাম উল্লেখ করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন খালিশপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান সাতজনের নাম উল্লেখ করে একই বছরের ১০ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলার মোট ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনই আদালতে সাক্ষ্য দেন।