খুলনায় সরকারি দলের নেতারা বড় বড় নির্বাচনী সভা করছেন। শুধু তা–ই নয়, মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক সিটি করপোরেশনের দুটি গাড়ি নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এমন বিভিন্ন নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে খুলনা মহানগর বিএনপি। এসবের প্রতিকারসহ ৭ দফা দাবিতে খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে দলটি।
গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়। এ সময় নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও ভীতিমুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছিল বিএনপি। তাদের দাবি ছিল, গায়েবি মামলার কার্যক্রম বন্ধ ও কারাগারে আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো পদক্ষেপ তাঁরা দেখছেন না।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, মাঠপর্যায়ের প্রশাসন, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়নি। ফলে সরকারের ১০ বছরে সরকারি দলের নেতাদের তদবিরে রাজনৈতিক বিবেচনায় খুলনায় আগত কর্মকর্তারা তাদের হুকুমের গোলামে পরিণত হয়েছে। এঁদের সরিয়ে নিরপেক্ষ প্রশাসন গড়তে হবে। তিনি বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০-দলীয় জোট ও বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। দেশের মানুষ চায় একটি সুন্দর পরিবেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং একটি জনগণের সরকার ও সচল পার্লামেন্ট গঠন। কিন্তু যদি সেই পরিবেশ না থাকে, পুনরায় বর্তমান অত্যাচারী সরকারকে নির্বাচিত করার কোনো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়—তাহলে খুলনা বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতাদের বলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুপারিশ করবে। এরপর বর্তমান সরকারের বিপক্ষে একদফা আন্দোলন শুরু করা হবে।
বিএনপির এই নেতা আশা করেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন দেশ ও জনগণের স্বার্থে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। জনগণ শঙ্কামুক্ত হবে, জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত হবে, দেশে সব রাজনৈতিক সংঘাত দূর হবে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, গায়েবি ১৯ মামলায় খুলনা কারাগারে আটক ১৫৯ জন নেতা-কর্মী দীর্ঘ দেড় মাসেও মুক্ত হতে পারেননি। বরং আরও ২৪ জন অস্থায়ী জামিনপ্রাপ্ত নেতা–কর্মীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে এবং সরকারি দলের সমর্থক ও একটি বিশেষ ধর্মের মানুষদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দাকোপ বটিয়াঘাটা থেকে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের খুলনা শহরে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গত খুলনা সিটি নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে সৎ এবং সাহসীদের নিয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে নির্বাচনে নিয়োজিত সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, বর্তমান প্রশাসন বিগত ভোট ডাকাতির নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্মারকলিপি দেওয়ার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া রকিবুল ইসলাম বকুল ও এস এম আরিফুর রহমান মিঠু, বিএনপি নেতা মীর কায়সেদ আলী, শেখ মোশারফ হোসেন, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, জলিল খান কালাম, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।