খুনিরা নেমেছিল এরশাদের নেতৃত্বে

প্রথম অংশের পর:

জেনারেল মইন অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে আইন অনুযায়ী সতর্ক তদন্ত ছাড়া সম্পাদিত এসব বিচার প্রতিরোধের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এরশাদ মইনের দায়িত্বটি নিজেই হাতিয়ে নেন। এভাবে এরশাদের স্বাক্ষরে ও নির্দেশে সামরিক আইনকে অগ্রাহ্য করেই সেনাবাহিনীর ভেতরে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করা হয়। জেনারেল মইন তাঁর বইয়ে এর বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। আনোয়ার কবীর একে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রক্তস্নান’।
জিয়ার হত্যাকাণ্ড মঞ্জুর হত্যা ও সেনাবাহিনীর ভেতর থেকে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের হটিয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিষয়টি যদি শুধু জিয়া হত্যাকাণ্ডকেন্দ্রিক হতো, তাহলে হয়তো মঞ্জুরকে জীবিত রেখেই তাঁর বিচারটি সম্পন্ন করা হতো।
কিন্তু তখন বিশাল এক রাজনৈতিক পালাবদল আসন্ন হয়ে পড়েছে। এরশাদের পরবর্তী দশকব্যাপী স্বৈরতন্ত্র কায়েমের জন্য এটা ছিল জরুরি। এই প্রেক্ষাপটে মঞ্জুরের হত্যাকাণ্ডকে একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। এই পালাবদলের সম্পূর্ণ গল্পটি এখনো বলা হয়ে ওঠেনি।
.. .. ..

বিষয়টি শেষ করার আগে আরও কয়েকটি কথা বলা দরকার। লেখক ও তাঁর পাঠকেরা অনেক ধৈর্যের সঙ্গে সত্য ও অসত্যকে উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন। কখনো কখনো আমাদের আলোচনা ফরেনসিক প্রতিবেদনের ওপরও নির্ভর করেছে। কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতাকে এখনো বোঝা সম্ভবপর হয়নি।
গত মাসে মঞ্জুরের পরিবারের সঙ্গে আমি বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছি। ওই পরিবারের কেউই আমার এই লেখাটি পড়তে পারেননি। আমার মনে হয় না, তাঁরা কখনো এটি পড়ে উঠতে পারবেন। এ কারণে আমি তাঁদের শ্রদ্ধা করি। এসব ঘটনা মনে করার শোক অপরিমেয়। কেউই সে পথ মাড়াতে চান না। এই লেখাটির গুরুত্ব তাঁরা বোঝেন, কিন্তু ঘটনাটি স্মৃতিতে ফিরিয়ে আনার তীব্র বেদনা অসহনীয়।
মঞ্জুরের বড় মেয়ে রুবানা মঞ্জুর স্মরণকরেন, হাটহাজারী থানায় কীভাবে তিনি তাঁর বাবার কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলেন। কীভাবে তিনি তাঁর বাবাকে ক্যাপ্টেন এমদাদের ‘বিশেষ অভিযান’ বাহিনী, যারা তাঁর বাবাকে শেষবারের মতো তাঁর কাছ থেকে দূরে নিয়ে চলে গেছে, তাদের সঙ্গে যেতে দিতে বাধা দিয়েছেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তাঁর বাবাকে হত্যা করা হয়।
রুবানা যখন তাঁর বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হন, তখন তিনি একজন তরুণী। কী ঘটেছিল, তিনি তা বলার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু কোনোবারই শেষ করতে পারেননি। সে তীব্র শোক অশ্রুর কোনো পরিমাপেই মাপা সম্ভব নয়।
তার পরও মঞ্জুরের পরিবার এই আশায় ঢাকার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছে যে সুপ্রিম কোর্টকে হয়তো ‘জনস্বার্থে’ এ মামলার হাল ধরতে সম্মত করানো সম্ভব হবে। যে বিচারের শেষে একদিন মানুষ সম্পূর্ণ সত্যটি জানতে পারবে এবং মঞ্জুরের হত্যাকারীরা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবেন—যে দেশটির জন্য মঞ্জুর বীরের মতো লড়েছেন। (শেষ)

অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন

OpenDoor.Lifschultz@gmail.com
লরেন্স লিফশুলৎজ ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ (হংকং)-এর দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি দ্য গার্ডিয়ান, লে মঁদ দিপ্লোমাতিক, দ্য নেশন (নিউইয়র্ক) ও বিবিসির পক্ষে লিখেছেন। তিনি বেশ কিছু বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন; তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ: দি আনফিনিশ্ড্ রেভোল্যুশন, হিরোশিমা’জ শ্যাডো ও হোয়াই বসনিয়া?