খুলনা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগটি প্রায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকশূন্য হয়ে পড়েছে। কোনো অধ্যাপক নেই। গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটি বর্তমানে দুজন প্রভাষক দিয়ে চলছে। এ কারণে আটকা পড়েছে শতাধিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। সেই সঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সূত্র জানায়, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য একজন নারী চিকিৎসকসহ মোট সাতটি পদ রয়েছে। এর মধ্যে একজন অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক ও তিনজন প্রভাষক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বর্তমানে অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক নেই।
আসিফ রায়হান নামের একজন প্রভাষক বর্তমানে প্রশিক্ষণে আছেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চলে যাবেন বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ। এ অবস্থায় প্রভাষক মো. ওয়াহিদ মাহমুদ বর্তমানে প্রায় একাই সামলাচ্ছেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি, চতুর্থ বর্ষের ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া এবং বিভিন্ন মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ।
২০১৩ সালের মে মাসে নির্যাতিত শিশু ও নারীদের মেডিকোলিগ্যাল পরীক্ষার জন্য তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সংযুক্তিতে মোসলেমা ইয়াসমিনকে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি মূলত চিকিৎসা কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি ভুক্তভোগীদের ডাক্তারি পরীক্ষা, মাঝেমধ্যে ময়নাতদন্ত করার পাশাপাশি তৃতীয় বর্ষের ক্লাসও নিচ্ছেন।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ছয় মাসে ২০২টি লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তবে এগুলোর অর্ধেকের বেশি প্রতিবেদন থানায় পাঠানো সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া আগেরও বেশ কিছু প্রতিবেদন আটকা পড়েছে।
এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার কথা হয় প্রভাষক মো. ওয়াহিদ মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাতজনের কাজ প্রায় একাই সামলাতে হচ্ছে। তাই নির্ধারিত সময়ে সব প্রতিবেদন লেখা সম্ভব হয় না। তারপরও দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করি।’
জনবলসংকট থাকায় বেশ চাপ নিয়ে কাজ করতে হয় বলে জানালেন সংযুক্তিতে থাকা চিকিৎসা কর্মকর্তা মোসলেমা ইয়াসমিনও।
কলেজের ছাত্র শাখা সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে ফরেনসিক মেডিসিন বিষয়টি পড়ানো হয়। এই দুই বর্ষ মিলিয়ে ২৬৮ জন নিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৫ সালের জুলাইয়ে দ্বিতীয় বৃত্তিমূলক এমবিবিএস পেশাগত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৩৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫২ জন ফরেনসিক মেডিসিন বিষয়ে অকৃতকার্য হন। ১২ জানুয়ারি ওই বিষয়ে তাঁরা পরীক্ষা দেবেন।
কলেজের অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষকসংকটের কারণে তাঁদের নিয়মিত ক্লাস হয় না। এ জন্য বড় সমস্যা হচ্ছে ব্যবহারিকে। সঠিকভাবে শিখতে না পারলে ভবিষ্যতে কেমন চিকিৎসা করবেন, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন তাঁরা।
জানতে চাইলে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, বিভাগে শিক্ষকসংকট তো আছেই। তবে ফরেনসিক মেডিসিন একটি বিশেষায়িত বিষয়। তাই এখানে ফার্মাকোলজি, সার্জারি, নিউরোলজি বিষয়ের শিক্ষক দিয়েও ক্লাস নেওয়া হয়। বাইরে থেকে শিক্ষক এনেও পড়ানো হয়। অনেক সময় দেখা গেছে শিক্ষকেরা এসে বসে আছেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা উপস্থিত নেই।
অধ্যক্ষ বলেন, ‘বিষয়টা মন্ত্রণালয়ের। আমরা নিয়োগের জন্য বারবার জানাচ্ছি। আসলে অনেকে এই বিভাগে আসতে চান না।’
ময়নাতদন্তের বিষয়ে আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘ফ্রেশ কেসগুলো আমাদের শিক্ষকেরাই দেখেন। জটিল কেসের সময় বোর্ড বসানো হয়। সীমিত লোকবলের পরও দ্রুত সময়ে প্রতিবেদন পাঠাতে চেষ্টা থাকে।’