বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১০ বছরে ৩০টি মামলা হয়েছে। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আরও ৫টি দুর্নীতির মামলা হয়। অন্য মামলার সিংহভাগই ভাঙচুর, নাশকতা, সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা। ২৪টি মামলা আদালত স্থগিত করেছেন। ৯টি মামলা বিচারাধীন।
বগুড়া-৬ (বগুড়া পৌরসভা ও সদর উপজেলা) আসনে খালেদা জিয়ার দাখিল করা হলফনামা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। হলফনামায় দেখা গেছে, এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে ৫টি দুর্নীতির মামলা হয় সেগুলো হলো—জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলা। এগুলোর মধ্যে প্রথম দুটির রায়ে খালেদা জিয়ার ১০ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে।
অন্য ৩০টি মামলা হয়েছে মূলত রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে, ২০১৪ সালের পর বিভিন্ন সময়ে। এসব মামলার বাদী পুলিশ, সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও আইনজীবীরা।
হলফনামা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে রাজধানীর দারুস সালাম থানায়। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২০১৫ সালে এসব মামলা হয়। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা হয়েছে। নাশকতার মামলা বেশি হয়েছে ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে। ২০ দলের ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় বাসে আগুন, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, মানুষ হত্যাসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় এসব মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়।
সম্পদও বেড়েছে
১০ বছরে খালেদা জিয়ার সম্পদ তিন গুণ বা ৬ কোটির বেশি টাকা বেড়েছে। হলফনামায় দেওয়া তথ্যে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৯ কোটি ৮৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩৪ টাকা। ২০০৮ সালের হলফনামায় সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪৩০ টাকা। ২০০৮ এবং এবারের হলফনামায় নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ উল্লেখ করেছেন খালেদা। জন্মতারিখ ১৫ আগস্ট ১৯৪৬ উল্লেখ করা হয়েছে।
এবারের হলফনামায় অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণীতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার নগদ টাকা কমেছে। ২০০৮ সালের হলফনামায় তাঁর কাছে নগদ ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৪৫ টাকা থাকার কথা উল্লেখ ছিল। এবার নগদ টাকার পরিমাণ ৫০ হাজার ৩০০। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খালেদা জিয়ার আমানত রয়েছে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৭ টাকা। ২০০৮ সালের হলফনামায় তাঁর ব্যাংকে ছিল ২ কোটি ৭৫ লাখ ৪২ হাজার ২৮৫ টাকা। এবারের হলফনামায় খালেদা জিয়ার সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য স্থায়ী আমানত ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬২ টাকা। ২০০৮ সালে হলফনামায় শেয়ার-সঞ্চয়ের কথা উল্লেখ ছিল না। এবার ৪৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি গাড়ি থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৮ সালে ৫৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দামের গাড়ি থাকার কথা উল্লেখ ছিল।
এবার আয়ের উৎস হিসেবে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকানভাড়া থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৬৭ লাখ ৩১ হাজার ৩১৪ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়, আমানত থেকে আয় ৮৫ লাখ ৯ হাজার ৮১৩ টাকা। ২০০৮ সালে আয়ের উৎস ছিল শেয়ার-সঞ্চয় আমানত থেকে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৩৮৩ টাকা এবং বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকানভাড়া থেকে ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ টাকা। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের হলফনামায় হেরফের হয়নি অকৃষিজমি ও স্বর্ণের পরিমাণের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও বগুড়া পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সবই ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক মামলা। আর ১০ বছর আগে সম্পদের যে মূল্য ছিল, এখন সেই মূল্য বেড়েছে। সেই অর্থে তাঁর সম্পদ বাড়েনি।