বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন হবে—এমন আশায় আদালতের দিকে তাকিয়ে আছে বিএনপি। তবে আগের মতো আবারও নিরাশ হতে হলে প্যারোলের আবেদন করা হবে কি না, তা নিয়েও দলে আলোচনা চলছে। খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের একটি অংশ প্যারোলে হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তির পক্ষে। অবশ্য বিএনপি বলছে, প্যারোলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে খালেদা জিয়ার পরিবার।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া দুই বছর ধরে কারাবন্দী। শারীরিক অসুস্থতা বেড়ে গেলে গত বছরের এপ্রিলে চিকিৎসার জন্য তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। তখন থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আছেন। এর আগে জামিন চাওয়া হলেও আদালত তা মঞ্জুর করেননি।
এবার উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের মতো দেশে যাওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন করা হয়। আজ রোববার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। আবেদন সূত্রে জানা যায়, দিন দিন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কারও সাহায্য ছাড়া তিনি চলাফেরা ও ওষুধ সেবন করতে পারেন না। দেশের বাইরে তথা যুক্তরাজ্যের মতো দেশে তাঁর অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট বা বায়োলজিক এজেন্ট নামের থেরাপি নেওয়া প্রয়োজন।
এই মামলায় জামিন পেলেও তাৎক্ষণিক মুক্তি পাবেন না খালেদা জিয়া। কারণ, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তিনি সাজাপ্রাপ্ত। ওই মামলায় তাঁর জামিন হয়নি। তবে বিএনপির নেতারা মনে করছেন, যেহেতু দুটি একই ধরনের মামলা, তাই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন হলে অন্যটিতেও আবেদন করে জামিন পাওয়া যাবে।
গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেন। এতে খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন নিয়ে পর্যালোচনা হয়। দলের নেতারা মনে করেন, জামিন শুনানির আগে এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না। জামিন শুনানি ও আদালতের রায় দেখে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্র জানায়, কারাগারে দিন দিন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। একা হাঁটাচলা করতে পারছেন না। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা ও যন্ত্রণা বেড়েছে। এই অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে খালেদা জিয়ার জীবন বাঁচানোই তাদের অগ্রাধিকার। প্যারোলে হলেও তাঁর মুক্তি প্রয়োজন। পরিবারের সদস্যরাও প্যারোলে হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তির পক্ষে। তবে প্যারোলের আবেদনের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার ইচ্ছা–অনিচ্ছার ওপর।
দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি। তবে এর আগে তিনি প্যারোলের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তিনি মনে করেন, প্যারোল নিয়ে বের হয়ে এলে একধরনের রাজনৈতিক পরাজয় হবে।
বিএনপির নেতাদের একটি অংশেরও প্যারোল নিয়ে ভিন্নমত আছে। তাঁরা মনে করেন, জামিনে মুক্তি পাওয়া খালেদা জিয়ার আইনগত অধিকার। প্যারোল নেওয়ার অর্থ হলো সরকারের অনুকম্পা নেওয়া এবং নতি স্বীকার করে নেওয়া।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি সরকারের ওপর নির্ভর করছে। সরকারের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করা না হলে খালেদা জিয়া জামিন পাবেন বলে তাঁরা মনে করেন। তিনি বলেন, আদালতে জামিন না হলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্যারোলে মুক্তির আবেদন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এটা একান্তই বিএনপির চেয়ারপারসন ও তাঁর পরিবারের বিষয়।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন না হলে পরিস্থিতি এখনকার মতো চুপচাপ থাকবে না। অনেক দিন কেটে গেছে। জামিন হলে ভালো। না হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামবে এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে।