খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, সময় ও চাহিদার প্রয়োজনে ভবিষ্যতে খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হবে। আজ শনিবার নওগাঁয় জেলা চালকল মালিক গ্রুপের দেওয়া এক সংবর্ধনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘খুব শিগগির যুগোপযোগী খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালা প্রয়োজন। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। তিনি বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সময় ও চাহিদার প্রয়োজনে যুগোপযোগী খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কৃষকদের যেন উৎপাদনে উৎসাহ থাকে, ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে যাতে না যায় এবং চালকল মালিক-শ্রমিকেরাও যেন টিকে থাকেন, ভবিষ্যতে সেই ধরনের একটি খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালা তৈরি করা হবে।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয় খুবই সেনসিটিভ একটি মন্ত্রণালয়। খাদ্যপণ্যের দাম এক থেকে দুই টাকা বাড়লে-কমলেও এখানে কৈফিয়ত দিতে হয়। সারা দেশের ভোক্তা, কৃষক ও মিল ব্যবসায়ী কেউ যেন বিপদে না পড়ে, সেই আলোকে কাজ করতে হয়। আমি সব সময় একটা ভারসাম্য রেখে কাজ করতে চাই।’
গুটিকয়েক বড় অটোমেটিক (স্বয়ংক্রিয়) চালকল মালিকেরা যেন সুবিধা নিতে পারে, এ জন্য লোকসানের মুখে বিপন্ন হতে চলা হাসকিং মিলগুলোকে (পুরোনো পদ্ধতির চালকল) পুনরুজ্জীবিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, নওগাঁ, কুষ্টিয়া ও দিনাজপুরের গুটিকয়েক অটোমেটিক চালকলের মালিক যেন চালের বাজারকে জিম্মি করতে না পারে, এ জন্য হাসকিং মিলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। হাসকিং মিল পুনরুজ্জীবিত হলে বাজারে ধান কেনার প্রতিযোগিতা তৈরি হবে, এতে কৃষকেরা লাভবান হবেন।
জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর ও বদলগাছী) আসনের সাংসদ ছলিম উদ্দিন তরফদার ও নওগাঁ-৫ (সদর) আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন জলিল (জন)। এ ছাড়া চালকল মালিক গ্রুপের পক্ষে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে বক্তব্য দেন জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার। অন্যদের বক্তব্য দেন নওগাঁ শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ইকবাল শাহরিয়ার, জেলা চালকল মালিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় চালকল মালিক গ্রুপের তুলে ধরা দাবিগুলো হচ্ছে, চালকল ব্যবসাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা, নওগাঁয় ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম (সিএসডি) নির্মাণ, জেলার ১১টি উপজেলায় ন্যূনতম ২ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন আঞ্চলিক খাদ্যগুদাম (এলএসডি) নির্মাণ, নওগাঁ শহরের বর্তমান এলএসডি খাদ্যগুদামের নতুন ইউনিট তৈরি, গুদামের বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে চালকলের মিলিং (ছাঁটাই) ক্ষমতা অনুযায়ী বরাদ্দ নির্ধারণ করা, হাসকিং মিলের জন্য ন্যূনতম ৭০ মেট্রিক টন বরাদ্দ নির্ধারণ ও প্রয়োজন ছাড়া খাদ্যপণ্য আমদানি বন্ধ করা।
এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘সব দাবিরই যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে সব দাবি একবারে পূরণ করা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথমেই নওগাঁয় একটি সিএসডি খাদ্যগুদাম নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করতে চাই। এ ক্ষেত্রে আমি নওগাঁর অন্য পাঁচ সাংসদের সহযোগিতা চাই। তাঁরা যদি ডিও লেটার দিয়ে তাঁদের দাবিগুলো পেশ করেন, তাহলে আমার কাজ করা আরও সহজ হবে।’
চালকলের মালিকদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সফল খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে পারলে আপনারাও উপকৃত হবেন এবং নওগাঁর মানুষ হিসেবে গর্ববোধ করতে পারবেন। তবে আপনাদের কর্মকাণ্ডের ওপরও আমার সফলতা নির্ভর করবে। আপনারা সঠিক পথে থেকে ব্যবসা করলে দেশের সব শ্রেণির ভোক্তা ও কৃষক উপকৃত হবে। চালকল ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আমি আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
সভার শুরুতে জেলা চালকল মালিক গ্রুপের পক্ষ থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হওয়ায় সাধন চন্দ্র মজুমদারকে ফুলের তোড়া ও ক্রেস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসন থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন।