>
- প্রথম আলোর গোলটেবিল
- প্রত্যেকের খাদ্যাভ্যাসে নিয়মিত দুধ যুক্ত করতে হবে
- পুষ্টি নিশ্চিত হবে
- খামারিরাও বাঁচবে
নিয়মিত দুধ পানে ভোক্তাদের আরও সচেতন করতে হবে। কারণ, দৈনিক খাদ্যাভ্যাসে ১ কাপ দুধ ভোক্তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি কৃষক–খামারিদের বাজারও সম্প্রসারণ হবে।
গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘স্থানীয় ডেইরি খাত উন্নয়নের মাধ্যমে সাশ্রয়ীমূল্যে পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। আরলা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেডের সহযোগিতায় বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো। বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, প্রত্যেকের খাদ্যাভ্যাসে নিয়মিত দুধ যুক্ত করতে হবে। এই অভ্যাসটা বাড়াতে হবে। তাতে পুষ্টি নিশ্চিত হবে আবার খামারিরাও বাঁচবে। আমদানি করা পশুখাদ্যের শুল্ক কমলে এর দামও কমে আসবে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নাথুরাম সরকার বলেন, বহির্বিশ্বের উন্নত জাতের গরু এনে দেশীয় পদ্ধতিতে লালনপালন করা যেতে পারে। জেনেটিক্যালি বেশি দুধ দেয় এমন গরুর জাত উদ্ভাবনে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট কাজ করছে। তবে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ বিপণনের দিকটা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশের মানুষের প্রতিদিন যে পরিমাণে দুধ খাওয়া দরকার, তা খাওয়া হয় না। এই ঘাটতি কমানো যায় আমদানি বা উৎপাদন বাড়িয়ে। তবে দুধ আমদানিতে শুল্ক হ্রাস হলে দীর্ঘ মেয়াদে খামারিদের জন্য অনুকূল হবে না। কৃষকেরা উৎপাদন বাড়ালে দুধের দাম কমে আসবে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোরশেদ আহমেদ বলেন, দুধে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি নিয়ে গত কয়েক মাসে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। নিরাপদ দুধ উৎপাদন নিশ্চিত করতে উৎপাদন পর্যায় থেকে তা নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপুষ্টি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক খান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র কৃষকদের টিকিয়ে রাখতে তাঁদের উন্নত জাতের গরু দিতে হবে। উৎপাদিত দুধ বিক্রির জায়গাও তৈরি করে দিতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষ তো দুধ না কিনে সেই টাকা দিয়ে এনার্জি ড্রিংক কিনে খায়। দুটোতেই একই পরিমাণ টাকা খরচ হয়। তাই সবাইকে সচেতন করতে হবে।
পশুখাদ্যের দাম কমে এলে দুধের দামও কমে আসবে উল্লেখ করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরিচালক এ বি এম খালেদুজ্জামান বলেন, সারা দেশে ৫৮ হাজার খামার আছে। এসব খামারের ৭০ শতাংশ খরচ হয় পশুখাদ্য জোগাড় করতে গিয়ে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শুল্কমুক্ত গোখাদ্য আমদানির ব্যাপারে সরকার কাজ করছে।
মিল্ক প্রডিউসারস কো–অপারেটিভ ইউনিয়ন লিমিটেডের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকার জনগোষ্ঠী যদি দিনে ১ কাপ করে দুধ খায়, তাহলে প্রায় ১০ লাখ লিটার দুধ প্রতিদিন প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা, চট্টগ্রাম শহর মিলে দিনে ৫ লাখ লিটার দুধও বিক্রি হয় না। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে অন্তত ১ কাপ দুধ খাওয়া উচিত। কারণ, প্রাণিজ আমিষ হিসেবে দুধের কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. শাহ এমরান বলেন, বিগত পাঁচ বছরে ডেইরি খাতে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। তবে আরও ভালো প্রযুক্তি, উন্নত মানের পশু দরকার।
সাবেক সাংসদ ও জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি উম্মে কুলসুম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নিশ্চিত করতে পুষ্টিমানের বিষয়টি আসে। আর পুষ্টি নিশ্চিতে দুধ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। কোনোভাবেই বিদেশ থেকে দুধ আমদানি কাম্য নয়। তাতে দেশের খামারিরা নিরুৎসাহিত হবে।