বিপুল বিনিয়োগের পরও রেলের গতি কমছে। কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো এবং সময় মেনে ট্রেন চলাচল—এ দুটিকে যাত্রীসেবার মূল ভিত্তি ধরা হয়। কিন্তু রেলে এ দুটি ভিত্তিই দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। সময় মেনে ট্রেন চলার হার কমছে। বেড়েছে ট্রেনের যাত্রার সময়।
সরকার গত এক দশকে রেল খাতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, রেলের ইঞ্জিন-কোচ ক্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ ও বেতন-ভাতার পেছনে এই বিপুল অর্থ খরচ করা হয়েছে। এর বাইরে রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে দুই দফা ভাড়াও বাড়িয়েছে।
রেল পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল—এই দুই ভাগে বিভক্ত। দুই অঞ্চলের প্রতিটি ট্রেনের যাত্রা ও পৌঁছার সময় নির্ধারিত।
ট্রেন চলাচলের নথিপত্র থেকে জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চলে ২০১৯ সালের তুলনায় এ বছর সব আন্তনগর ট্রেন মিলিয়ে চলাচলের সময় বেড়েছে ৬৭ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। আর পূর্বাঞ্চলে সময় বেড়েছে ১২ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট। সময় বৃদ্ধির তালিকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের সুবর্ণ এক্সপ্রেসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনও রয়েছে।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পুরো রেল ব্যবস্থায় সময় মেনে ট্রেন চলার হার ছিল সবচেয়ে বেশি, ৮৭ শতাংশ। এরপর থেকেই পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। পরের বছর সময়ানুবর্তিতার হার ১ শতাংশ কমে যায়। গত অর্থবছরে সময়ানুবর্তিতার হার নেমে দাঁড়ায় ৮২ শতাংশে। করোনা পরিস্থিতিতে ট্রেন বন্ধ হওয়ার আগে সময় মেনে ট্রেন চলার নিম্নধারা অব্যাহত ছিল।
অথচ রেলে মোটা বিনিয়োগের মূল শর্ত ছিল ট্রেনের গতি বাড়বে, সময় মেনে ট্রেন চলবে। উল্টো রেল দিন দিন ধুঁকছে। সংস্থাটির হিসাব বলছে, এখনো ৭১ শতাংশ ইঞ্জিন মেয়াদোত্তীর্ণ। অর্ধেকের বেশি কোচ বেহাল। রেললাইন ও সেতুর অর্ধেকই জরাজীর্ণ। অর্থাৎ সর্বত্র নেই আর নেই।
মানুষের চাহিদা মেনে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু অবকাঠামোর দিক দিয়ে এখনো পিছিয়ে। দীর্ঘদিন রেল অবহেলিত ছিল। গত এক দশকে অনেক উন্নয়ন হয়েছে।নূরুল ইসলাম, রেলমন্ত্রী
ভাড়া বেড়েছে, লোকসান কমেনি
দুই দফা ভাড়া বাড়ানোর লক্ষ্য ছিল লোকসান কমানো। কিন্তু গত অর্থবছরেও রেলে পরিচালনা লোকসান (অপারেটিং লস) ১ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর রেল কখনো লাভ করেনি। পাঁচ বছর ধরে লোকসানের পরিমাণ প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এবার আরেক দফা ভাড়া বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
করোনার কারণে গত ২৪ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ ছিল। জুনে ১৯ জোড়া যাত্রীবাহী আন্তনগর ট্রেন চালু হয়, যা সক্ষমতার ১০ শতাংশের মতো। যাত্রীর অভাবে দুই জোড়া ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ২১৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হয়ে গেছে। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে বাজেটস্বল্পতায় রেলের ৩৮টি প্রকল্পের ২৪টিতে এবার অর্থায়ন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে উন্নয়নকাজও একপ্রকার আটকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় রেলের যাত্রীসেবা কিংবা আয় কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেটাই আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রেলের ছয়জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয় এই প্রতিবেদকের। দেদার টাকা খরচের পরও এর সুফল না পাওয়ার পেছনে মোটা দাগে কিছু কারণ পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, উন্নয়নকাজে দুর্নীতি-অপচয়, পরিকল্পনায় গলদ ও অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এর ফলে নির্মাণকাজে সময় বেশি লাগছে, অযৌক্তিক ব্যয় হচ্ছে। এমনকি দরকারি কাজ রেখে কম দরকারি উন্নয়ন প্রাধান্য পাওয়ায় সাধারণ মানুষ সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এক দশকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা চাট্টিখানি কথা নয়। অবশ্যই এক দশক পর জনগণের সেই সুফল ভোগ করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে রেল পিছু ছুটছে। বিষয়টা খুব গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা উচিত। তাঁর মতে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আসলে কিছু লোকের সম্পদ বিকাশের উৎসে পরিণত হয়েছে। এ জন্যই টাকা খরচ করেও ট্রেনের গতি বাড়ে না। প্রকল্পে অস্বাভাবিক ব্যয় হয়। এটা দুর্নীতির একটা সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে।
রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য
নিরবচ্ছিন্ন রেল চলাচলের জন্য নিরাপদ রেললাইন, ভালো ইঞ্জিন-কোচ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দরকার। রেলের ব্যয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত এক দশকে পুরোনো রেললাইন মেরামতের চেয়ে নতুন লাইন নির্মাণে বেশি ব্যয় করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা বেশি কাজ করেছে। হাজার কোটি টাকার নতুন রেললাইন দিয়ে নামেমাত্র ট্রেন চালানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত ইঞ্জিন-কোচ না কিনেই রাজনৈতিক বিবেচনায় একের পর এক নতুন ট্রেন চালু করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের চাহিদা মেনে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু অবকাঠামোর দিক দিয়ে এখনো পিছিয়ে। দীর্ঘদিন রেল অবহেলিত ছিল। গত এক দশকে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সারা দেশে ডাবল লাইন হলে, বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মিত হলে এবং লোকবল পুরো করতে পারলে রেলের চেহারা পাল্টে যাবে। এ জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এর আগেও হয়ে যেতে পারে।
সেবা না পেলেও ভাড়ার খড়্গ যাত্রীদের ওপর
গত জানুয়ারি মাসে রেলে ১৭০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু আয় হয়েছে ১২৩ কোটি টাকার মতো, যা ডিসেম্বর মাসের চেয়েও প্রায় ১০ কোটি টাকা কম। ২০১৯ সালের জানুয়ারির সঙ্গে তুলনা করলেও গত জানুয়ারিতে সোয়া তিন কোটি টাকা কম আয় হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, গত এক বছরে পাঁচটি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। এতে আয় বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঘটছে উল্টোটা। এর মূল কারণ, যাত্রী চাহিদা বিবেচনা না করেই নতুন ট্রেন চালু করা, ইঞ্জিন-সংকটের কারণে মালবাহী ট্রেনের চলাচল কমে যাওয়া, টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে অনিয়ম উল্লেখযোগ্য। আয় বাড়াতে করোনা পরিস্থিতির আগে আগে চট্টগ্রাম-সিলেট পথে চলাচলকারী জালালাবাদ ও কুশিয়ারা এক্সপ্রেস নামে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই দুটি ট্রেনের ইঞ্জিন ও লোকবল দিয়ে মালবাহী ট্রেন চালানো শুরু হয়। কিন্তু এখন সবই বন্ধ।
২০১২ সালে রেলের ভাড়া সর্বনিম্ন ৫০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ২০১৬ সালে আরেক দফা ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। এখন পুনরায় ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা চলছে। একই হারে বাড়বে মালামাল পরিবহনের ভাড়াও। ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তা এগোয়নি।
অবশ্য রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রতিনিয়তই ভাড়া বৃদ্ধির চাপ দিয়ে আসছে। এডিবির ঋণের অন্যতম শর্তও ভাড়া বৃদ্ধি করা। এ জন্যই ভাড়া বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিনিয়োগেও জরাজীর্ণ, বিবর্ণ রেল
রেলে ছোট-বড় সেতু আছে ৩ হাজার ১৭৪টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৮০৬টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ বলে রেলের সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
এখন এসব সেতু মেরামতে বড় প্রকল্প নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। এর মধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির পর জরাজীর্ণ রেললাইন চিহ্নিত করে সেগুলোরও মেরামত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত জানুয়ারি থেকে রেল কর্তৃপক্ষ সারা দেশে জরাজীর্ণ রেললাইনের সমীক্ষা তৈরি করছে।
এ কাজের সঙ্গে যুক্ত সূত্র বলছে, সমীক্ষায় যা আসছে, তাতে পুরোনো রেললাইনের অর্ধেকই বড় ধরনের মেরামতের প্রয়োজন হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর রেললাইন ও সেতু মেরামতের জন্য দুটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এর সঙ্গে রেলের কর্মকর্তারা পুরোনো রেলস্টেশন মেরামতের আরেকটি প্রকল্প জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হতে পারে।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, কর্তৃপক্ষ নতুন রেললাইন নির্মাণে যতটা তৎপর, রক্ষণাবেক্ষণে ততটাই উদাসীন। রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে পুরোনো লাইন মেরামতে দামি যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে উৎসাহ নিয়ে। এমনই একটি যন্ত্রের নাম ট্যাম্পিং মেশিন।
গত আট বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে চারটি ট্যাম্পিং মেশিন কেনা হয়েছে। ১৯৯৬ ও ২০০৪ সালেও দুটি মেশিন কেনা হয়। এসব মেশিনের প্রতিটির দাম ১৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা। বর্তমানে দুটি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। বাকিগুলো মাঝেমধ্যে ব্যবহার করা হয়। এ অবস্থায় আরও ছয়টি মেশিন কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এক-তৃতীয়াংশ ইঞ্জিনই পাকিস্তান আমলের
গত এক দশকে মাত্র ৪৬টি ইঞ্জিন কেনা হয়েছে। সর্বশেষ ইঞ্জিন কেনা হয়েছে প্রায় ছয় বছর আগে। বর্তমানে রেলে ২৬৮টি ইঞ্জিন রয়েছে। এর মধ্যে মিটারগেজ ১৭৮টি ও ব্রডগেজ ৯০টি। রেলের ইঞ্জিনের সাধারণ আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) ধরা হয় ২০ বছর। সে হিসাবে বর্তমানে রেলের ৭১ শতাংশ ইঞ্জিনই মেয়াদোত্তীর্ণ।
রেলের ইঞ্জিনের বয়স পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৯৫টি ইঞ্জিন কেনা হয়েছে স্বাধীনতার আগে। এগুলোর বয়স এখন ৪৯ থেকে ৬৬ বছর। এসব ইঞ্জিন কখনো অচল, কখনো বিকল—এভাবেই চলছে। লম্বা দূরত্বের পথে খুব একটা চালানো হয় না। জংশন বা বড় স্টেশনের ভেতরে ট্রেন টেনে নিয়ে ধোয়ামোছার জন্য প্রস্তুত করাই এসব ইঞ্জিনের মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইঞ্জিন পুরোনো বলে মেরামতও লাগে হরহামেশা। আর এই মেরামতকাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে গত মার্চে একটি ইঞ্জিন মেরামত করার তিন মাসের মধ্যে তা পুনরায় বিকল হয়ে যায়। ২৯৩৩ নম্বর ইঞ্জিনটির ট্রাকশন মোটরসহ প্রায় সব যন্ত্রপাতিই বদলানোর বিল করা হয়। কিন্তু সচল রাখা যায়নি। এই বিষয়টি রেলপথ মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে।
বিনিয়োগের মূল শর্তই হচ্ছে যাত্রীসেবা বৃদ্ধি। কিন্তু ট্রেন চলাচলের সময় বাড়ানো, সময় মেনে ট্রেন না চলা এবং সেবার মান বৃদ্ধি না পাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে, যে লক্ষ্য নিয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা অর্জিত হয়নি।সামছুল হক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ
ভবন আছে, লোকবল নেই, স্টেশন বন্ধ
গত এক দশকের ৯১টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ১৭৭টি পুরোনো স্টেশন মেরামত ও পুনর্নির্মাণ হয়েছে। এসব তথ্যে রেলের অর্জনের তালিকায় গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ স্টেশন ভবন নির্মাণের পর লোকবলের অভাবে সেগুলো চালানো যাচ্ছে না।
রেলের পুরকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অবকাঠামোকাজে কমিশন পাওয়া যায় বলে এতে আগ্রহ বেশি। লোকের অভাবে স্টেশন চলছে না। এ অবস্থায় স্টেশন ভবন মেরামত ও সৌন্দর্যবর্ধনে প্রকল্প নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
রেলে অনুমোদিত জনবল ৪০ হাজার ২৭৫। বর্তমানে আছে ২৬ হাজারের বেশি। দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ থাকার পর ২০১০ সালে তা চালু হয়। এরপর ১৩ হাজার ৯৮১ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে রেল পরিচালনার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার চালক ও স্টেশনমাস্টারের। কিন্তু এই দুই কাজের লোকের অভাবে ৪৬৬ স্টেশনের মধ্যে ১০৪টি বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, নিয়োগবিধির জটিলতার কারণে লোকবল নিয়োগ হচ্ছে না। স্টেশন বন্ধ থাকাতে আসলেই সমস্যা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিনিয়োগের মূল শর্তই হচ্ছে যাত্রীসেবা বৃদ্ধি। কিন্তু ট্রেন চলাচলের সময় বাড়ানো, সময় মেনে ট্রেন না চলা এবং সেবার মান বৃদ্ধি না পাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে, যে লক্ষ্য নিয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা অর্জিত হয়নি। ভুল পথে টাকা খরচ করা হয়েছে। অথবা অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ।
সামছুল হক আরও বলেন, এখন সরকারকে খুঁজতে হবে তারা কী লক্ষ্য অর্জনে রেলে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। সেই লক্ষ্য কি অর্জিত হয়েছে? হলে কতটা হয়েছে? তা মূল্যায়ন করে বের করতে হবে। আর পুরো অর্জন না হলে কে দায়ী, তা বের করে শাস্তি দিতে হবে। এভাবে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে আরও টাকা খরচ করেও খুব একটা লাভ হবে না।