এখন থেকে কোন এলাকায় কত সময় লোডশেডিং দেওয়া হবে, তার একটি রুটিন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লোডশেডিংয়ের বিষয়ে সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।
আজ বুধবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। একই অনুষ্ঠানে চুয়েটের শেখ জামাল ডরমিটরি এবং রোজী জামাল ডরমিটরিও উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু এখন আমাদের লোডশেডিং দিতে হবে। বিদ্যুতের উৎপাদন সীমিত করতে হবে। কারণ, বিদ্যুতের ভর্তুকির পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংরক্ষণের আহ্বান জানান। পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক লোডশেডিংয়ের জন্য একটি রুটিন তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোন এলাকায় কত সময় লোডশেডিং দেওয়া হবে, তার একটি রুটিন তৈরি করুন। কারণ, জনগণ যেন সে জন্য প্রস্তুত হতে পারে এবং তাদের দুর্ভোগ কমানো যায়।’তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী তেল, এলএনজি, ডিজেলসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। রাশিয়ার ওপর আমেরিকা ও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। বিষয়টি উপলব্ধি করে দেশবাসী সরকারকে সহায়তা করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে মোট ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখার জন্য গ্যাসের চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানিতে আমাদের ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।’ বর্তমান বাজেটে ৮৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভর্তুকি না কমালে সরকার টাকা কোথা থেকে পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভর্তুকি ছাড়াও সরকার দেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। ভর্তুকি মূল্যে প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে এক কোটি রেশন কার্ড দিয়েছে। বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন দিচ্ছে, যা অনেক ধনী দেশও করেনি। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর আমেরিকা ও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে।
সরকারকে কী পরিমাণ ভর্তুকি বাড়াতে হয়েছে, তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ফার্নেস অয়েলের মূল্য ৫২ শতাংশ বেড়েছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির দাম ২৮০ শতাংশ বেড়ে গেছে। কয়লার দাম বেড়েছে প্রায় ৬১ শতাংশ। তিনি বলেন, প্রতি কিউবিক মিটার এলএনজি ক্রয়ে সরকারের ব্যয় ৫৯ দশমিক ৬০ টাকা। কিন্তু আমরা সেটা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছিলাম মাত্র ৯ দশমিক ৬৯ টাকায়। যেটা সম্প্রতি ১১ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তারপরও বিশাল অঙ্কের ভুতর্কি রয়ে গেছে সেখানে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রতি ইউনিটে উৎপাদন ব্যয় ১২ দশমিক ৮৪ টাকা কিলোওয়াট ঘণ্টা, কিন্তু একক প্রতি পাইকারি মূল্যে আমরা দিচ্ছি ৫ দশমিক শূন্য ৮ টাকায়। ফার্নেস অয়েলে প্রতি একক ইউনিটের উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে ১৭ দশমিক ৪১ টাকা, সেটাও আমরা ৫ দশমিক শূন্য ৮ টাকায় দিচ্ছি। ডিজেলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ৩৬ দশমিক ৮৫ টাকা, সেখানেও আমরা ৫ দশমিক শূন্য ৮ টাকা দরে বিদ্যুৎ বিক্রি করছি। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় ১২ দশমিক ৩৭ টাকা, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৫ দশমিক শূন্য ৮ টাকায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাগুলোর জোগান দেওয়ার পর সরকারকে আবার কৃষিতেও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এত বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি আর কত দিন দেওয়া সম্ভব হবে, সে প্রশ্ন তুলে সবাইকে মিতব্যয়ী ও সঞ্চয়ী হওয়ার আহ্বান তিনি।
এ সময় সারা দেশে ২ হাজার ৭১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে ২ হাজার ৫১টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের অধীনে এবং ৬৬৫টি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এমপিও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ‘চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’-এর ওপর একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এটি দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসভিত্তিক আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর।
অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম।