নওগাঁ সদর হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা স্থাপনের জন্য পাঠানো সরঞ্জাম হাসপাতালের নতুন ভবনের একটি কক্ষে পড়ে আছে। গত ১৫ জুন
নওগাঁ সদর হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা স্থাপনের জন্য পাঠানো সরঞ্জাম হাসপাতালের নতুন 
ভবনের একটি কক্ষে পড়ে আছে। গত ১৫ জুন

হাসপাতালের যন্ত্রপাতি

কে বসাবে, কে চালাবে, কে সারাবে—কেউ জানে না

কোনো হাসপাতাল না চাইতেই পেয়ে গেছে অজানা-অচেনা যন্ত্রপাতি। কেউ আবার বারবার চেয়েও প্রয়োজনীয় যন্ত্রটি পাচ্ছে না।

খবরের কাগজের পাতা ওলটালেই নজরে আসে অমুক হাসপাতালে তমুক চিকিৎসাযন্ত্র অকেজো, তমুক হাসপাতালে যন্ত্রের বাক্স খোলাই হয়নি। কোথাও যন্ত্র আছে, চালানোর লোক নেই; কোথাও লোক আছে, যন্ত্র নেই। কোনো হাসপাতাল না চাইতেই পেয়ে গেছে অজানা-অচেনা যন্ত্রপাতি, কেউ আবার বারবার চেয়েও প্রয়োজনীয় যন্ত্রটি পাচ্ছে না।

ক্রয়প্রক্রিয়ার নিয়ম-অনিয়ম নিয়ে ‘নতুন করে পুরান কথা’ বলার রূপবান কাহিনি আজ থাক। চুলায় যাক নিয়ম, অনিয়ম আর দুর্নীতি দমনের বচন। দুই কানের একটাও না থাকলে ব্যক্তি গাঁয়ের মাঝখান দিয়েই হাঁটবেন। ২০১১ সাল থেকে এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে তর্জন-গর্জন অনেক হয়েছিল। একপর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালকদের নিয়ে তিন সদস্যের একটি টিমও গঠন করা হয়। এখনো বোধ হয় সেই ‘টিম’ টিমটিম করে, কিন্তু মন দিয়ে কাজ করে চলেছে।

সব মিলিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা যাচ্ছে, কিন্তু হাসপাতালের যন্ত্রপাতি মানুষের কাজে আসছে না। মাঝেমধ্যে এসব খবর ভেতরের পাতা থেকে সামনে আসে। আবার কখনো চলে যায় বিশেষ দ্রষ্টব্যের শেষ পাতায়। সংবাদকর্মীরা যন্ত্রপাতির এমন অবস্থার কারণ জানতে চাইলে হাসপাতালে খুব কম কর্মকর্তাই মুখ খোলেন। তাঁরা ‘বোবার শত্রু নাই’ নীতি মেনে কুলুপ এঁটেই থাকেন।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সেই পুরোনো গল্প আমাদের সবারই জানা। ২০১৫ সালে বেরিয়ে এসেছিল যে চাহিদা না থাকলেও সেখানে ডিজিটাল কম্পিউটারাইজড রেডিওগ্রাফি (ডিসিআর) নামে একটি যন্ত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কোটি টাকা মূল্যের ওই যন্ত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তরের পর থেকে অকেজো হয়ে পড়ে থাকে বছরের পর বছর। বারবার চেষ্টা করেও যন্ত্রটি এক দিনের জন্যও চালু করা যায়নি। প্রয়োজন না থাকলেও এমন দামি আরও ১০টি যন্ত্র ওই হাসপাতালে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯টিই চালু হয়নি।

সব মিলিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা যাচ্ছে, কিন্তু হাসপাতালের যন্ত্রপাতি মানুষের কাজে আসছে না। মাঝেমধ্যে এসব খবর ভেতরের পাতা থেকে সামনে আসে। আবার কখনো চলে যায় বিশেষ দ্রষ্টব্যের শেষ পাতায়। সংবাদকর্মীরা যন্ত্রপাতির এমন অবস্থার কারণ জানতে চাইলে হাসপাতালে খুব কম কর্মকর্তাই মুখ খোলেন। তাঁরা ‘বোবার শত্রু নাই’ নীতি মেনে কুলুপ এঁটেই থাকেন।

আজকের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পরিকল্পনার চেয়ারে থাকার সময় এসব অনিয়মের তত্ত্ব-তালাশ করতেই স্বাস্থ্যসহ কয়েকটি খাতের বড় প্রকল্প একটু অন্যভাবে নজরদারি করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ‘আউটসোর্সিং’, মানে প্রশাসনের বাইরের লোক বা পরামর্শকদের দিয়ে কাজটি করানো হয়।

কথা ছিল তদারকিতে যেসব প্রকল্প খারাপ অবস্থায় পাওয়া যাবে, সেসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে কথা কি শেষ পর্যন্ত রাখা হয়েছিল? অন্তত জনগণের সেটা জানা নেই।

‘হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্প পর্যবেক্ষণের আওতায় পরামর্শকেরা সেবার (২০১৫ সালে) দেশের ২২টি হাসপাতাল সরেজমিনে পরিদর্শন করে সেবাগ্রহীতা ও সেবাদানকারীদের সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের পর্যবেক্ষণের আওতায় আসা হাসপাতালগুলোতে ৪০ থেকে ৬৪ শতাংশ পর্যন্ত যন্ত্রপাতি অচল। যাচাই-বাছাই ছাড়াই কোটি টাকার বেশি দামের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালের ৪২ শতাংশ এক্স-রে যন্ত্র অকার্যকর। আর মেডিকেল কলেজের ৬০ শতাংশ এক্স-রে যন্ত্র ও ৫০ শতাংশ আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র অকেজো হয়ে রয়েছে। কেনাকাটার প্রক্রিয়ায়ও ব্যাপক ত্রুটি আছে। আবার হাসপাতালে যন্ত্রপাতি কেনাকাটা ও সরবরাহ—সব পর্যায়ে সমস্যা আছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষণ দলের প্রধান ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদা বেগম সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে তখন বলেছিলেন, অনুসন্ধানে অবাক করার মতো অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অধিকাংশ হাসপাতালে প্রয়োজন না থাকলেও দামি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। সেগুলোর বেশির ভাগ আবার অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কয়েকটি হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠালেও তা সরবরাহ করা হয়নি। সারা দেশে হাসপাতালগুলোতে পড়ে থাকা এমন অকেজো যন্ত্রপাতির বিস্তারিত তথ্য নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

ক্রয়প্রক্রিয়ার নিয়ম-অনিয়ম নিয়ে ‘নতুন করে পুরান কথা’ বলার রূপবান কাহিনি আজ থাক। চুলায় যাক নিয়ম, অনিয়ম আর দুর্নীতি দমনের বচন। দুই কানের একটাও না থাকলে ব্যক্তি গাঁয়ের মাঝখান দিয়েই হাঁটবেন। ২০১১ সাল থেকে এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে তর্জন-গর্জন অনেক হয়েছিল। একপর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালকদের নিয়ে তিন সদস্যের একটি টিমও গঠন করা হয়। এখনো বোধ হয় সেই ‘টিম’ টিমটিম করে, কিন্তু মন দিয়ে কাজ করে চলেছে।

এখন এই ঘোর দুর্যোগের সময় ‘চোর বাছতে গাঁ উজাড়’ করার চেয়ে জরুরি হচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাঙা রাখা। অকেজো যন্ত্রপাতিগুলো কেজো করা, কাজের উপযোগী রাখা। আগের যন্ত্রপাতিগুলোর সঙ্গে করোনাকালে যুক্ত হয়েছে, হচ্ছে, হবে নানা ধরনের, নানা কাজের আধুনিক যন্ত্রপাতি। নানা কলকবজার প্রয়োজনীয়, আধা প্রয়োজনীয় ও পরিচিত-অপরিচিত এসব যন্ত্র আর সাজসরঞ্জাম চালু রাখাটা বড় প্রয়োজন।

অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোকে এটা-সেটা কিনে দিচ্ছেন। বলা বাহুল্য, এগুলো বলপেনের মতো একবার ব্যবহারের জিনিস নয়। ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ আর মেরামতের ব্যবস্থা থাকলে চলবে অনেক দিন।

অবশ্য দানের সময় যেটা কাজে লাগছে না বা ত্রুটিপূর্ণ, সেটা দিয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা দেশি-বিদেশি দাতাদের মধ্যেও দেখা যায়। তাই নতুন যন্ত্রপাতি, তা সে যতই চকচকে হোক না কেন, নেওয়ার আগে কার্যকারিতা বুঝে নেওয়ার তাগিদ থাকতে হবে। ভিক্ষার চালের মধ্যে কাঁড়া-আকাঁড়া বাছার চল আমাদের সংস্কৃতিতে দুর্লভ। পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনাকে ষোলো আনা জ্ঞান করে গ্রহণ করে খুশি মানানোর ঝোঁক আমাদের আছে। তারপরও দান নেওয়ার সময় আমাদের চোখ খুলে রাখাটা জরুরি। দৃষ্টিহীন চোখ দিয়ে সেটা করা সম্ভব নয়।

এ ক্ষেত্রে দৃষ্টিহীনতা দূর করার জন্য আজ থেকে ৩৮ বছর আগে ১৯৮৩ সালে ৮৩ জনশক্তির একটি সংস্থা গঠন করা হয়। ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার বা নিমিউ অ্যান্ড টিসি নামে পরিচিত এই সংস্থাটির কাজ হচ্ছে চিকিৎসাকাজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির মান নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণ।

ঢাকার মহাখালীর এক প্রান্তে অবহেলায় পড়ে থাকা প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় আটটি উদ্দেশ্য নিয়ে—১. দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা যন্ত্রপাতি মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও চালু করা। ২. চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে মানকাঠামো বা ‘স্ট্যান্ডার্ড স্পেসিফিকেশন’ তৈরি করা। ৩. চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ক্রয়সংক্রান্ত দর প্রস্তাবের কারিগরি মূল্যায়ন এবং এ ধরনের কাজে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা। ৪. ক্রয় বা আমদানি করা মেডিকেল যন্ত্রপাতির জরিপ করা ও গুণগতমান নিশ্চিত করা। ৫. চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে নিমিউ, ডিমিউ ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কারিগরি জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। ৬. দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইলেকট্রো-মেডিকেল টেকনোলজিতে অধ্যয়নরত বা পাস করা ছাত্রছাত্রী বা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মেডিকেল যন্ত্রপাতি মেরামতসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া। ৭. দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউটে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত বা পাস করা ছাত্রছাত্রী বা গ্র্যাজুয়েট প্রকৌশলীদের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি মেরামতসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ৮. অমেরামতযোগ্য চিকিৎসা যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

সবচেয়ে বড় নিন্দুকও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই উদ্যোগের তারিফ না করে পারবেন না। ‘সচল মেডিকেল যন্ত্রপাতি, নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা’—এই ব্রত নিয়ে একটি উদ্যোগী, কর্মঠ, সদা প্রস্তুত প্রতিষ্ঠান ছাড়া রাষ্ট্রের বিশাল স্বাস্থ্য কর্মযজ্ঞ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। সুযোগ পেলে এ রকম একটা প্রতিষ্ঠান যে দৃষ্টান্ত রাখতে পারে তার প্রমাণ তারা দেখিয়েছে।

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিবেদিত দেশে প্রথম চিকিৎসাকেন্দ্র কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন প্ল্যান্টসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি তদারকির দায়িত্বে ছিল নিমিউ অ্যান্ড টিসি। এ ছাড়া অন্যান্য করোনা হাসপাতালেও যন্ত্রপাতি স্থাপনের দায়িত্ব পালন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখন যা অবস্থা তাতে শুধু ঢাকা শহরের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আর বিশেষায়িত হাসপাতালের ক্রমবর্ধমান চাহিদা সময়মতো মেটানো তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। বর্তমান জনবল আর দক্ষতা নিয়ে পদে পদে অপদস্থ হবে এই প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানটি।

১৯৮৩ সালে যখন নিমিউ অ্যান্ড টিসি প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন সারা দেশে সেবার যে চাহিদা ছিল এখন ঢাকা শহরেই চাহিদা তার চেয়ে বেশি। গত ৩৮ বছরে সেবার চাহিদার পারদ হু হু করে বাড়লেও প্রতিষ্ঠানটির দক্ষতা আর লোকবল তেমন বাড়ানো হয়নি। জনবল ৮৩ জন থেকে ৯৫ জনে উন্নীত হয়েছে ১৯৯৪ সালে। তারপর আর বাড়েনি। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন আছেন মাত্র ৭ জন স্নাতক প্রকৌশলী ও ৪ জন উপসহকারী প্রকৌশলী। এ সীমিত কারিগরি জনবল দিয়ে কী আর করতে পারবে নিমিউ অ্যান্ড টিসি।

দেশে গত বছর মার্চে করোনার যন্ত্রণা শুরু হলে মে মাস নাগাদ নিমিউ অ্যান্ড টিসি আবার তাদের মাতৃ মন্ত্রণালয়ে (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) জনবল বাড়ানোর জন্য ধরনা দেওয়া শুরু করে। ধারণা করা হয়েছিল অন্য সময় কর্ণপাত না করলেও করোনাভাইরাসের কারণে এবার তাদের দিলের মহর খুলে যাবে। করোনাভাইরাসের দোহাই দিয়েই নিমিউ অ্যান্ড টিসি বলেছিল, সৃষ্ট মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটিতে জনবল নিয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া হোক। প্রস্তাব ছিল জরুরি ভিত্তিতে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে ১০০ জন গ্র্যাজুয়েট বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার ও ৭৩৫ জন ইলেকট্রো-মেডিকেল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেওয়া হোক। চাহিদাপত্রে সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে প্রধান কার্যালয়, ১৭টি মেডিকেল কলেজ, ১৫টি বিশেষায়িত হাসপাতাল আর ৬১টি জেলা সদর হাসপাতালসহ ৫১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, টিবি (যক্ষ্মা) হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতালের জনবলের কথা।

জানা গেছে, করোনাকাল হলেও কোনো বাড়তি জোর দেওয়া হয়নি, আমলাতন্ত্রের ফিতা খোলেনি। সোয়া এক বছর কেটে গেছে, ফাইল শুয়েই আছে। অবশ্য শুয়ে থাকলেও একেবারে ঘুমিয়ে নেই, ফাইলটা নাকি এপাশ-ওপাশ করছে। জনবল নিয়োগের বিষয়টি নাকি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। শিগগিরই জনবল নিয়োগের বিষয়টি আলোর মুখ দেখবে। এসবই খুশির খবর।

আমাদের দেশে নিচ থেকে কোনো প্রস্তাব ওপরে গেলে সেটা ‘সাইজ’ করা, মানে আকারে-প্রকারে আরও আরও ছোট করাটাই বাহাদুরির কাজ। সেই রূপকল্প সামনে রেখেই যাঁর পিস্তল দরকার তিনি কামানের দরখাস্ত করেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার করোনার ডামাডোলের মধ্যে যা চেয়েছে তাতে শুধু আজকের প্রয়োজনটাই বলা হয়েছে, পরশুরটা দূরে থাক, কালকের প্রয়োজনটাও তাদের চাওয়ার মধ্যে নেই। সতেরোটা নয়, এখন প্রতিটি জেলায় মেডিকেল কলেজ হচ্ছে। তাদের প্রয়োজনের কোনো রূপরেখা নেই।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এখনকার মন্ত্রী যদি বরাদ্দের মালিক হন, তাহলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে থাকার সময় তাঁর তত্ত্বাবধানে করা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো প্রস্তাবকারীরা আমলে নিতে পারতেন। সেটার সুযোগ ছিল। এই প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা আর শক্তি বৃদ্ধিকে তাক করে করা ডা. খালেদা বেগমদের সুপারিশগুলো তাহলে কীভাবে বাস্তবায়িত হবে?

সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন গবেষণা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ খাতে। নিমিউ অ্যান্ড টিসির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল—দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইলেকট্রো-মেডিকেল টেকনোলজিতে অধ্যয়নরত বা পাস করা ছাত্রছাত্রী বা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি মেরামতসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউটে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত বা পাস করা ছাত্রছাত্রী বা গ্র্যাজুয়েট প্রকৌশলীদের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি মেরামতসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া।

বাংলাদেশের যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এখন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছে তাদের কারও সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ গড়ে তোলার কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। অনেক শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানটির নাম, অবস্থান জানে না। দেশের সার্বিক চাহিদার কথা মাথায় রেখে ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারকে উচ্চতর কাঠামোয় উন্নীত করা এখন সময়ের দাবি। তার কার্যক্রমকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।

মানসম্মত মেরামত আর পরামর্শ সহযোগিতা দেওয়ার উপযোগী করতে পারলে নিমিউ অ্যান্ড টিসি একটি রোজগেরে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে দেশের বাইরে থেকে তাদের হাসপাতালের যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য লোক নিয়ে আসে। অথচ দেশেই এখন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট সুযোগের অপেক্ষায় দিন গুনছে। এঁদের পেছনে লগ্নি করলে তাঁরাও আমাদের প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) সৈনিক হতে পারেন।


● লেখক গবেষক nayeem5508@gmail.com