১৯ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ধারাগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় শোষণ-বঞ্চনা চরম আকার ধারণ করেছে। চুক্তি বাস্তবায়িত না হলে পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী হরতাল, অবরোধ ও ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের গড়িমসির সমালোচনা করেন সন্তু লারমা। তিনি বলেন, ‘মুখে অনেকে ঠিক কথা বলেন। কার্যত চুক্তি হওয়ার ১৯ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, একজন আমলাও এই চুক্তির প্রতি সংবেদনশীল নন। কেউই অন্তর দিয়ে চান না, এই চুক্তি বাস্তবায়ন হোক।’
পার্বত্য চুক্তি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত ক্রোড়পত্র নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সন্তু লারমা বলেন, ‘এখানে অধিকাংশ অসত্য তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।’
সন্তু লারমা বলেন, ‘গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসকগোষ্ঠী এমনভাবে ধরে রেখেছে, যেন এটা পূর্ণমাত্রায় উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেন আমরা বন্দী খাঁচার মতো আছি।’ তিনি বলেন, এই চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর আমলের বাস্তবতা আর এখনকার বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সীমাহীন নিপীড়ন, শোষণ-বঞ্চনার দিকে ক্রমাগত ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
চুক্তি বাস্তবায়নে পাহাড়ি, বাঙালি, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
চুক্তি বাস্তবায়নে জনসংহতি সমিতির ঘোষিত ১০ দফা কর্মসূচির কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দেন সন্তু লারমা। এসব কর্মসূচির মধ্যে আছে হরতাল; জলপথ, স্থলপথ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কার্যালয় ঘেরাও; অর্থনৈতিক অবরোধ; সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস বর্জন এবং আদালত বর্জন। বৃহস্পতিবার ঘোষিত এই ১০ দফা কর্মসূচি কবে থেকে শুরু হবে, এখনো তা ঘোষণা করা হয়নি।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, পার্বত্য চুক্তির ধারাগুলো যদি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে এই সরকারকে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ মোনাফেক উপাধিতে ভূষিত করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চুক্তি নিয়ে সরকার যা করেছে, তা বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। কিন্তু মনে হয়, এই সরকারের সেই রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য সারা হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য নূর আহমেদ, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিমন সিসিম প্রমুখ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দীপায়ন খীসা।