১৯৭১ সালে বাংলার কৃষক তাঁর লাঙল ফেলে চলে যান যুদ্ধের ময়দানে। হাতে তুলে নেন বন্দুক, রাইফেল আর গ্রেনেড। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করেছেন যুদ্ধ। ১৬ ডিসেম্বর বীরের বেশে ফিরে এসেছেন দেশে। আর অনেকেই শহীদ হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এ দেশের মাটির বুকে, যেখানে তাঁরা সোনা ফলাতেন। তখনো জানতেন না, কী আছে তাঁর সামনে।
সাড়ে সাত কোটি মানুষ, কিন্তু লাখ টনের চেয়ে কম খাদ্যশস্যের উৎপাদন। প্রথম লক্ষ্যই ছিল দেশের সবার মুখে আহার জোগানো। কাজটা সহজ ছিল না। কিন্তু লক্ষ্য স্থির ছিল। বছর কয়েক না যেতেই খাদ্যের আকাল। সঙ্গে বিশ্বরাজনীতি। লেগে গেল দুর্ভিক্ষ। এদিকে মানুষও বাড়ছে। আমার সোনা ফলিয়েরা কি বসে থাকেন?
ফার্স্ট ফরোয়ার্ড দিয়ে চলে আসি আমরা ২০১৮ সালে। আবাদি জমিতে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি, দোকানপাট, কারখানা। দূষিত হয়ে গেছে অনেক নদীর পানি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়ে গেছে। তবে হার মানেননি আমাদের কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী। পরম মমতায় লড়ে গেছেন।
তাই খাদ্য উৎপাদন বেড়ে গেছে চার গুণ। মাছ উৎপাদন সাত গুণ। সবজি উৎপাদনও সে রকম। আগাম বন্যা কিংবা ঘূর্ণিঝড় না হলে আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ!
কেমন করে? কিসের ম্যাজিক? কারা করেছে?
বাংলার কৃষক করেছেন। শহুরে মানুষ যে কৃষককে রাতে মাঠে পাঠিয়ে দেয় সেচের জন্য, সেই কৃষক, যিনি কিনা তাঁর উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পান না, সেই কৃষক, যিনি তাঁর সন্তানকে তাঁর ইচ্ছেমতো শিক্ষা দান করতে পারেন না।
অথচ তিনি চট করে বুঝে নেন নতুন ব্রি ধানের রহস্য, সন্ধানী চোখ মাঠেই খুঁজে পায় নতুন জাতের ধান। হরিপদ কাপালীর ধান তাই হরিধান হয়ে ঘুরে ঘুরে আসে আমাদের কাছে। সন্তানের মতো আগলে রাখে আমাদের হাজার জাতের ধান। আর একদল বিজ্ঞানী মাঠে-ল্যাবে বসে খুঁজে ফেরেন নতুন জাতের ধান, গম, পাট কিংবা বের করেন কেমন করে আবদ্ধ জলে চাষ করা যায় ইলিশের। তাঁদের হাতে উন্মোচিত হয় পাট কিংবা ইলিশের জীবনরহস্য।
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ ফিরে যাচ্ছেন মাটির টানে। গড়ে তুলছেন খামার।
এমন যাঁদের আয়োজন, তাঁদের কি আমরা কোনোই স্বীকৃতিই দেব না? তাঁদের কাছে গিয়ে তাঁদের পিঠ চাপড়ে বলব না—
ধন্যবাদ। আমাদের কৃতজ্ঞতা গ্রহণ করুন।
আর এ জন্যই তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার। এ লক্ষ্যে কিছু দিন ধরে আমরা তাই খুঁজে ফিরছি সেসব বীর বাঙালিকে, যাঁরা মাঠে মাঠে প্রতিনিয়ত লিখে যাচ্ছেন দিনবদলের কাব্য। যাঁদের হাতে রচিত হচ্ছে আমাদের নতুন ইতিহাস, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ইতিহাস।
তাঁদের কেউ বের করে ফেলেছেন নতুন প্রজাতির আম, কেউবা বাড়িয়েছেন ধানের ফলন কিংবা কেউ করছেন মাছের বাম্পার উৎপাদন।
কাল ২৫ নভেম্বর আমাদের এই খোঁজাখুঁজির পালা শেষ হবে। সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা সারা দেশে খুঁজে পেয়েছি অনেক অনেক কৃষি-বীরকে।
যাঁরা এমন বীরদের খুঁজে পেয়ে অপেক্ষা করছেন শেষ দিনের জন্য, তাঁদের মনে করিয়ে দিচ্ছি, ২৫ নভেম্বর শেষ দিন। আপনার মনোনীত কৃষক, কৃষি গবেষকের তথ্য পাঠিয়ে দিন আমাদের বরাবর।
আমরা তাঁদের বলতে চাই—
হে আমাদের মাঠের বিজ্ঞানী, লড়াকু কৃষক
আমাদের সকৃতজ্ঞ অভিবাদন গ্রহণ করুন।