কুয়েতে মানব পাচার ও মুদ্রা পাচারে অভিযুক্ত লক্ষ্মীপুরের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলকে গতকাল শনিবার রাতে দেশটির সিআইডির কর্মকর্তারা আটক করেছেন।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র ওই সাংসদের আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম রোববার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুয়েত সিআইডির (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট) কর্মকর্তারা শনিবার রাত আটটার পর কাজী শহিদকে তাঁর বাসা থেকে নিয়ে গেছেন বলে জানতে পেরেছি। তবে কুয়েতের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে এখানকার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কেন সাংসদকে আটক করেছেন, সেটা জানার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে সিআইডিতে দূতাবাসের লোকজনকে পাঠানো হয়েছে।’
কূটনীতিক সূত্রে, রোববার দুপুরে কুয়েতে বাংলাদেশের ওই সাংসদকে আটকের খবর পাওয়া যায়। হঠাৎ সিআইডি কেন তাঁকে আটক করেছে কিংবা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে, সেটা রহস্যজনক বলে এই প্রতিবেদকের কাছে মন্তব্য করে এক সূত্র। কারণ, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগেই কুয়েতে পৌঁছান কাজী শহিদ। ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তিনি সেখানে আটকা পড়েন। ফলে তাঁর আর দেশে ফেরা হয়নি।
অন্য একটি সূত্র এই প্রতিবেদককে আভাস দিয়েছে, কুয়েতে পরিচালিত ব্যবসা আর সম্পত্তি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেখানকার সিআইডি সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। হয়তো দু–এক দিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে তাঁকে।
প্রসঙ্গত, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস ও আরব টাইমস বাংলাদেশের এক সাংসদসহ তিন মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
কুয়েতের সিআইডির বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছিল, স্বতন্ত্র এই সাংসদসহ তিনজনের ওই চক্র অন্তত ২০ হাজার বাংলাদেশিকে কুয়েতে পাঠিয়ে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয় করেছে। কুয়েতের গণমাধ্যমগুলো অভিযুক্ত সাংসদের নাম প্রচার করেনি। তবে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্ত সাংসদের নাম কাজী শহিদ ইসলাম। তিনি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ।
কুয়েতের গণমাধ্যমের খবরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাংসদ তখন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কারণে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমি এ ধরনের কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নই। আমি সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি।’
কাজী শহিদ ইসলামের ফেসবুক ও ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজ, কুয়েত, ওমান ও জর্ডানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটি জনশক্তি রপ্তানিতে যুক্ত। স্বতন্ত্র এই সাংসদ আওয়ামী লীগ কুয়েতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য, বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েতের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম ওই সময় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ বিষয়ে জানতে কুয়েত সিআইডির সঙ্গে দূতাবাস থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তদন্ত চলমান বলে সিআইডি দূতাবাসকে এ মুহূর্তে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা জানিয়েছে।
এদিকে কাজী শহিদের স্ত্রী ও জাতীয় সংসদের ৩৪৯ নম্বর সংরক্ষিত আসনের সাংসদ সেলিনা ইসলাম দাবি করেছেন, তাঁর স্বামীকে কুয়েতে আটকের খবরটি সঠিক নয়। আজ রোববার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় সেলিনা ইসলাম বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তার–সম্পর্কিত যে তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে, তা ঠিক নয়। তিনি সেখানে কোনো মামলার আসামি নন। কুয়েত সরকার তাদের নিয়ম অনুযায়ী তাঁর ব্যবসায়িক বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁকে সেখানকার সরকারি দপ্তর বা সিআইডিতে ডেকে নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দূতাবাসের পরিষ্কার কোনো তথ্য ছাড়া কাউকে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’