কুড়িগ্রামে সড়ক-মহাসড়ক পানির নিচে, পানিবন্দী ৩ লাখ মানুষ

পানি উঠেছে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী মহাসড়কে। বুধবার মহাসড়কের চণ্ডীপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
পানি উঠেছে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী মহাসড়কে। বুধবার মহাসড়কের চণ্ডীপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ–নদীর পানিই বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে যাচ্ছে। দুই দফা বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুর্গত মানুষেরা।

বুধবার দুপুর ১২টায় ধরলার পানি বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী মহাসড়কের চণ্ডীপুরে পাকা সড়ক, কালীগঞ্জ সড়কে ও সোনাহাট মাদারগঞ্জ সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে।

কুড়িগ্রাম সদরের মধ্য কুমোরপুর হয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা শহরে যাওয়ার পাকা রাস্তা এখন পানির নিচে। ফলে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জেলার চার ভাগ এলাকার মধ্যে তিন ভাগই এখন পানির নিচে। এ ছাড়া জেলার ৯টি উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৬ শতাধিক গ্রামের প্রায় আড়াই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বানভাসি মানুষের মধ্যে খাদ্য, বিশুদ্ধ পনি, শুকনা খাবার ও জ্বালানির সংকট দেখা দিয়েছে। ধরলা নদীর পূর্ব পারের চারটি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নৌকাই চলাচলের একমাত্র বাহন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট।

গত ২০ দিন থেকে পরিবারগুলো ঘরের চৌকি উঁচু করে, নৌকায় ও উঁচু সড়কে অবস্থান নিয়ে আছে। সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের জগমোহন ও নানকার চরে ধরলা নদীর তীব্র স্রোতের কারণে লোকজন ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। বুধবার সকালে ধরলা নদীর অববাহিকায় ৩৬ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উমর ফারুক জানান, ধরলা নদীর পানির প্রবল চাপে সদর উপজেলার সারডোবে একটি বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সারডোব গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা জহুর উদ্দিন জানান, সোমবার সকাল আটটার দিকে বাঁধটি ভেঙে পানি প্রবল বেগে ধেয়ে আসে। একে একে পাঁচটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। অনেক মালামাল ভেসে যায়। তীব্র স্রোতের কারণে নৌকা নিয়ে সেখানে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমার নদ–নদীর অববাহিকা ও চরাঞ্চলগুলো ডুবে সব বাড়িতে পানি উঠেছে। তীব্র পানির স্রোতে ঘরবাড়ি ভেসে যাচ্ছে। ভারত থেকেও স্রোতে মানুষের ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ভেসে আসছে।

পানির নিচে তলিয়ে গেছে সড়ক। সড়কের ওপর মাছ ধরছেন কয়েকজন। বুধবার চণ্ডীপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

বাঁধ ভাঙার কারণে হলোখানা, ভাঙামোড়, কাশিপুর, বড়ভিটা ও নেওয়াশি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম পর্যায়ক্রমে প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে গবাদিপশু নিয়ে দুর্ভোগে রয়েছে। মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না। বাঁধের এই রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ফুলবাড়ী উপজেলা সদর ও কুড়িগ্রাম জেলা সদরে যাতায়াত করত। যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো মানুষ।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ময়নুল ইসলাম জানান, পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেখানে দুটি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সওজের কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী নুরায়েন জানান, জেলার পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়ক, রৌমারী-তুরা সড়ক, সোনাহাট-মাদারগঞ্জ সড়ক, ভূরুঙ্গামারী-সোনাহাট সড়ক এবং ভিতরবন্দ-মন্নেয়ারপাড় সড়কের কিছু অংশ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বালুর বস্তা ও জিও ব্যাগ দিয়ে ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করছেন।

পাউবোর কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, বাঁধটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে। তবে বিকল্প বাঁধটি রক্ষার জন্য বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু পানির প্রবল চাপে শেষ পর্যন্ত বাঁধটি ভেঙে যায়। দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলার ৬০ ইউনিয়নের ৫২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নতুন করে তলিয়ে গেছে সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা, ঘোগাদহ ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম।