কুড়িগ্রামের যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজিরা খাতা নেই

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসার ‘সততা স্টোর’। ছবি: সংগৃহীত
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসার ‘সততা স্টোর’। ছবি: সংগৃহীত

সবার গলায় ঝুলছে স্মার্ট পরিচয়পত্র। শিক্ষার্থীরা এসে লাইব্রেরির সামনে একটি ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর আঙুলের ছোঁয়ায় নিশ্চিত করছে তাদের হাজিরা। একটু পাশেই বেশ সুসজ্জিত একটি কক্ষে সাজানো রয়েছে নানা রকমের পণ্য। খাতা, কলম, শিক্ষাসামগ্রী, চকলেট, বিস্কুট, চানাচুর, হরেক রকম খাবারসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। দেখে মনে হলো একটি দোকান। কিন্তু দোকানে নেই কোনো বিক্রেতা। শিক্ষার্থীরা যে যার প্রয়োজনমতো জিনিস কিনে নির্ধারিত স্থানে টাকা রেখে চলে যাচ্ছেন। দেয়ালে বড় করে লেখা ‘সততা স্টোর’, সঙ্গে আরও নানা রকমের নীতিবাক্য।

ডিজিটাল হাজিরা মেশিন। ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসার চিত্র এটি। গত মঙ্গলবার ফিতা কেটে ডিজিটাল ক্যাম্পেইন, সততা স্টোর এবং মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে ডিজিটাল শিক্ষা সবার আগে’ প্রতিপাদ্য বাস্তবায়নে উপজেলায় প্রথমবারের মতো বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের দৈনিক হাজিরা গ্রহণ চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকে জানতে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার এবং শিক্ষার্থীদের দুর্নীতিমুক্ত, সৎ ও নৈতিকতা চর্চার জন্য বিক্রেতাবিহীন সততা স্টোর চালু করা হয়। পরে এক আলোচনা সভায় মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এস এম তোফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন মাদ্রাসার সুপার মো.আবদুল আজিজ আকন্দ।

সততা স্টোর উদ্বোধন করছেন জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন। ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুজা ঊদ-দৌলা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছা. আছমা বেগম, চিলমারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম, রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজগার আলী সরকার প্রমুখ।

ডিজিটাল মেশিনে শিক্ষার্থীর হাজিরা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ডিজিটাল ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করছেন জেলা প্রশাসক। ছবি: সংগৃহীত

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাদ্রাসাটি স্থাপিত হওয়ার পরও এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা সব দিক বিবেচনায় স্মার্ট। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কুড়িগ্রাম জেলা পিছিয়ে থাকলেও শিক্ষাক্ষেত্রে এ জেলা অনেক এগিয়ে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, একাডেমিক শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি অতিরিক্ত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে জেলার অর্থনৈতিক মন্দা দূর করা সম্ভব।

আলোচনা সভায় অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. আতিকা সিদ্দিকা বলে, ‘হাজিরা খাতা ছাড়াই এখন থেকে মাদ্রাসার স্মার্ট পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইসে প্রতিদিনের হাজিরা প্রদান করতে পারব। আমাদের অভিভাবকেরা এসএমএসের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারবে উপস্থিতি সম্পর্কে। অন্যদিকে, সততা স্টোর আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করবে।’

আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

লেখক: কথাবন্ধু, রেডিও চিলমারী