কুমিল্লার সঙ্গে খন্দকার মোশতাক নামটি জড়িয়ে থাকায় এই নামে বিভাগ করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কুমিল্লা নামে বিভাগ হবে না। কুমিল্লায় বিভাগ হবে মেঘনা নামে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ৯ তলাবিশিষ্ট নবনির্মিত অত্যাধুনিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা চলাকালে কুমিল্লা নামেই বিভাগ করার জোরালো দাবি জানান কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস এলাকা) আসনের সাংসদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিভাগের ব্যাপারে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি দুইটা বিভাগ বানাব, আমার দুইটা নদীর নামে। একটা পদ্মা, একটা মেঘনা। এই দুই নামে দুইটা বিভাগ করতে চাই।’
এ সময় সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেন, ‘আপা’। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘হুঁ, বলো।’ তখন সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেন, ‘কুমিল্লা নামে।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কু নাম দেব না আমি।’
তখন বাহাউদ্দিন বলেন, ‘না আপা, কুমিল্লা নামে। সারা কুমিল্লার মানুষ এটা চায়।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কুমিল্লা নামে দেব না। কারণ, তোমার এই নামের সাথে মোশতাকের নাম জড়িত। সেই জন্য আমি দেব না।’
তখন সাংসদ বলেন, ‘আপা, মোশতাকের কুমিল্লা না। কুমিল্লা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের, শচীন দেববর্মনের, নওয়াব ফয়জুন্নেছার।’
এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নো, না আমি দেব না তো বললাম। কুমিল্লা নাম নিলেই তো মোশতাকের কথা মনে ওঠে। কুমিল্লা নাম হবে কেন? তাহলে তো চাঁদপুর বলে আমার নাম হবে, নোয়াখালী বলবে আমাদের, নোয়াখালী তো পুরানো একটা...। আমি ফরিদপুর বিভাগ করব পদ্মা নামে। ফরিদপুর নামও দিচ্ছি না। কুমিল্লা বিভাগ করব মেঘনা নামে। কারণ, পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা। কারণ, এই স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করেছে। বিজয় অর্জন করেছে।’
এরপর আবার সাংসদ বলেন, ‘আপা, আমাদেরটা আমাদের নামে (কুমিল্লা) দেন।’
এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই নামে অন্য জেলাগুলো আসবে না। আমরা চেষ্টা করছি। নোয়াখালী আসবে না, ফেনী আসবে না, চাঁদপুর আসবে না, লক্ষ্মীপুর আসবে না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসবে না। যদি বিভাগ চাও, আমি মেঘনা নামে করে দিতে পারি।’
শহরের রামঘাট এলাকায় অবস্থিত কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের নবনির্মিত কার্যালয়ে এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ, কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ময়নামতি) আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন, কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনের সাংসদ নাছিমুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের সাংসদ ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের সাংসদ আবুল হাসেম খান ও কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনের সাংসদ প্রাণ গোপাল দত্ত এবং কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড়-টমছমব্রীজ সড়কের পশ্চিম পাশে রামঘাট পুকুরের উত্তর পাড়ে প্রায় ১০ শতক জায়গার ওপর কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের নবনির্মিত দলীয় কার্যালয়। ৯ তলাবিশিষ্ট এ ভবনে মহানগর আওয়ামী লীগ ছাড়াও মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও আদর্শ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় রয়েছে। একই সঙ্গে দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে সভা করার জন্য রয়েছে ৩০০ জনের বসার মিলনায়তনও। এ ছাড়া ভবন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের জন্য সাততলা থেকে নবম তলা পর্যন্ত হোটেল, জিমনেসিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া আছে। রয়েছে সম্মেলনকক্ষ, ওয়াইফাই সুবিধা ও নামাজঘর।