কাতারভিত্তিক আল-জাজিরার তথ্যচিত্রে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও তাঁর একজন কোর্সমেটের কথোপকথন ফাঁস করা হয়। তাঁর দাবি, অডিওটি সঠিক নয়। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলেও তিনি জানান। সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, ‘আগামী (২০২২) জুনের ২৫ তারিখের পর আমার সম্পূর্ণ রিটায়ারমেন্ট শুরু হবে। তখন আমি চিন্তা করব এ ব্যাপারে কী করা যায়।’ নিজের ভাইদের পরিচয়পত্র ও অন্যান্য কাগজে তথ্য পরিবর্তনে কোনো প্রভাব খাটাননি বলে দাবি করেছেন তিনি।
জার্মানির সম্প্রচারমাধ্যম ডয়চে ভেলের ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ অনুষ্ঠানে এবারের অতিথি ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনের সঙ্গে এ আলোচনায় নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি। তাঁকে নিয়ে নানা অভিযোগের প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন। আল-জাজিরার তথ্যচিত্র, ভাইদের বিষয়ে নানা অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বাতিলসহ নানা প্রসঙ্গ এ আলোচনায় উঠে এসেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে কিছু গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়েছিল, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুরুতেই এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল। জেনারেল আজিজ আহমেদ সরাসরি তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, গণমাধ্যমেই এ সংবাদ শুনেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র কারও ভিসা বাতিল করলে তাঁকে তা জানানোর বিধান আছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেশটির কোনো দায়িত্বশীল দপ্তরের কাছ থেকে পাননি। গণমাধ্যমগুলো যথাযথ সূত্র ও তথ্য-প্রমাণ উল্লেখ না করেই এ বিষয়ে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। এ মুহূর্তে তাঁর বৈধ ভিসা আছে কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, আছে।’
শত কোটি টাকার মালিক কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘কয়েক শ কোটি নয়, আমাকে সামান্য কিছুর সূত্র দিন, যাতে বাকি জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারি। শত শত কোটি নয়, যদি...বলতে পারেন লাখ লাখ বা এক-দুই কোটি টাকা আছে, তাহলে ওটা দিয়ে আমি পরিকল্পনা করব আমার ভবিষ্যৎটা স্বাচ্ছন্দ্য হতে পারে কি না।’ তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মনগড়া হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। অবসরজীবন নিয়ে তিনি বলেন, অবসরের পর তিনি এখন দায়িত্বের চাপ থেকে মুক্ত। এ মুহূর্তে পোস্ট ডক্টরাল করছেন, সেই বিষয়ে গবেষণা করেই সময় কাটাচ্ছেন।
সেনাপ্রধানের দায়িত্ব ছাড়ার পরপরই তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে খবর বের হয়। এ বিষয়ে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, আমি যখন রিটায়ারমেন্টে আসি, তখন শুনেছি সে অবসরে গেছে।...ডিসিপ্লিন বলে একটা কথা আছে। দুর্নীতির বিষয়টি আরও গভীর।...অত সিরিয়াস যদি কোনো কিছু হতো, “হি শুড হ্যাভ বিন ডিসক্লোজড ফ্রম দ্য সার্ভিস।” সে ক্ষেত্রে আমরা অনেককে জেল দিয়ে থাকি, অনেককে বরখাস্ত করে থাকি। “হি ওয়াজ গিভেন নরমাল রিটায়ারমেন্ট।” আমি এ ব্যাপারে “ফারদার” কিছু বলতে চাচ্ছি না।’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আজিজ আহমেদ ও তাঁর ভাইদের নিয়ে একটি অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র প্রকাশ করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। এ নিয়ে তখন বেশ আলোচনা হয় দেশে। এ তথ্যচিত্র প্রকাশের পর শুরুতে বিব্রত হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন আজিজ আহমেদ। সেই সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। সেখানে এর কোনো প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেন তিনি।
তথ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয়েছিল, ইসরায়েল থেকে স্পাইওয়্যার ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ক্রয় প্রক্রিয়ায় জেনারেল আজিজ আহমেদ প্রভাব খাটিয়েছেন। এর উত্তরে তিনি দাবি করেন, কেনাকাটাগুলো যখন হয়, তখন সেনাপ্রধান হিসেবে এর সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। যদিও তিনি দায়িত্ব নেওয়ার এক দিন পর নজরদারি প্রযুক্তি ক্রয়ের স্বাক্ষর হয়। তিনি দাবি করেন, প্রক্রিয়াগুলো আগেই সম্পন্ন হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি, কেউ যদি কোনো একটা “এভিডেন্স” দিতে পারেন যে আমি বিজিবিতে থাকাকালে, আমি সেনাপ্রধান থাকাকালে আমার কোনো ভাই বা আত্মীয়কে বিজিবি বা সেনাবাহিনীর কোনো “আর্মস, ইকুয়েপমেন্ট, অ্যামুনেশন প্রকিউরমেন্ট, কন্ট্রাক্ট” দিয়েছি, এটা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, “আই উইল অ্যাকসেপ্ট অ্যানিথিং। আই অ্যাম রেডি। আই অ্যাম গিভিং আ চ্যালেঞ্জ।”’
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ নতুন নাম আর ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘কত লাখ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে আছেন, তাঁদের কি নিজস্ব নাম, পিতৃপরিচয় বা ঠিকানা অ্যাকচুয়েলটা ইউজ করছেন?’
নাম-পরিচয় পরিবর্তনে প্রভাব খাটিয়েছিলেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, ‘একটা উদাহরণ দেন কোনো জায়গায় আমি কাউকে টেলিফোন করেছি কি না, যে আপনি একে নির্দেশ দিয়েছেন যে এটা করে দাও। এ রকম কোনো এভিডেন্স কি আপনাদের কাছে আছে? প্রমাণ দেন।’
আবেদনপত্রের কোনো পর্যায়ে তাঁর অধীন কোনো বিজিবি অফিসার যুক্ত ছিলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কিছু হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। আর এ ধরনের স্বাক্ষর করার প্রসঙ্গ এসেছিল কি না, আমার ঠিক মনে পড়ছে না।’
আল-জাজিরার তথ্যচিত্রে আজিজ আহমেদ ও তাঁর একজন কোর্সমেটের কথোপকথন ফাঁস করা হয়। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আজিজ আহমেদ দাবি করেন, অডিওটি সঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘ইট ওয়াজ আ কাট অ্যান্ড পেস্ট। ইট ওয়াজ টেম্পার্ড।...অনেক কিছু করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলেও তিনি জানান। সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, ‘এত দিন আমি ইউনিফর্মে ছিলাম, এটার ব্যাপারে যদি আমি কোনো লিগ্যাল অ্যাকশন বা ব্যবস্থা নিতাম, অনেকে প্রশ্ন করত যে “আই অ্যাম এক্সারসাইজিং মাই অথরিটি। আই অ্যাম মিসইউজিং মাই পাওয়ার।” আমি কিন্তু এখন ইউনিফর্মের বাইরে আসছি। আগামী (২০২২) জুনের ২৫ তারিখের পর আমার সম্পূর্ণ রিটায়ারমেন্ট শুরু হবে। তখন আমি চিন্তা করব “হোয়াট কাইন্ড অব লিগ্যাল অ্যাকশন আই শুড টেক অ্যাগেইনস্ট দিস কাইন্ড অব প্রপাগান্ডা অ্যান্ড আদার থিংস।”’
দেশের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন করা হয় আজিজ আহমেদকে। জবাবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী কী দায়িত্ব পালন করবে, তার পরিষ্কার নির্দেশনা ছিল। তিনি বলেন, চাইলেই সেনাবাহিনী যা খুশি করার এখতিয়ার নেই৷ নির্বাচন কেমন হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ভালো নির্বাচন হয়েছে।