কিআর অনুষ্ঠানে 'আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর'

শিশু-কিশোরদের নিয়ে কিশোর আলোর (কিআ) ষষ্ঠ জন্মদিনের কেক কাটা হয়। সিএ ভবন মিলনায়তন, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১ অক্টোবর। ছবি: দীপু মালাকার
শিশু-কিশোরদের নিয়ে কিশোর আলোর (কিআ) ষষ্ঠ জন্মদিনের কেক কাটা হয়। সিএ ভবন মিলনায়তন, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১ অক্টোবর। ছবি: দীপু মালাকার

বড় হলঘরটি ঠাসা কিশোর-কিশোরীতে। মূল মঞ্চে কিশোরীদের হাতে মোমবাতি। আর কিশোরদের হাতে গিটার। সবাই এক সুরে গেয়ে উঠল ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ রবীন্দ্রসংগীতটি। মঙ্গলবার বিকেলে মাসিক সাময়িকী কিশোর আলোর (কিআ) ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটা শুরু হলো এভাবেই।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজপড়ুয়া কিআর পাঠক ও স্বেচ্ছাসেবকেরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সিএ ভবন মিলনায়তনে বেলা সাড়ে তিনটায় এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। নাচ, কাব্যনাট্য, গান, কুইজসহ নানা আয়োজনে তারা মেতে ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত।

দলীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কিশোর আলোর অনুষ্ঠান। সিএ ভবন মিলনায়তন, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১ অক্টোবর। ছবি: দীপু মালাকার

অনুষ্ঠানে কিশোর-কিশোরীদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন বিভিন্ন গুণীজন। শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক ও কিআ সম্পাদক আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে সহযোগিতায় ছিল এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং সঞ্জীব চ্যাটার্জি শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তোমরা স্মার্টফোন কম ব্যবহার করবে। বই পড়ায় বেশি মন দেবে। কিআর পথচলার শুরু থেকে এক্সিম ব্যাংক পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।’

চলচ্চিত্র নির্মাতা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘আমার আফসোস, কেন আমি কিশোর বয়সে কিআর মতো এমন একটি ম্যাগাজিন পেলাম না। পেলে হয়তো আমার এখনকার জীবনটা অন্য রকম হতো।’

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কিআ সম্পাদক আনিসুল হক। সিএ ভবন মিলনায়তন, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১ অক্টোবর। ছবি: দীপু মালাকার

প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমিন বলেন, ‘মানুষ হওয়ার জন্য কিআ সহযোগিতা করে। নানা রকম বুদ্ধি দেয়, নানাভাবে ভাবতে শেখায়।’

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে শিশু-কিশোরদের প্রিয় এই মাসিক সাময়িকী। এতে কেউ গল্প, ছড়া, ফিচার লেখে, কেউ আঁকে ছবি, কার্টুন। গান, নাচ, অভিনয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনেও আছে কিআর পাঠকদের নিয়মিত অংশগ্রহণ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও দেশের তিনটি জেলায় হবে ‘লাভেলো-কিআনন্দ উৎসব’। ১১, ১৮ ও ২৫ অক্টোবর যথাক্রমে রংপুর, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় হবে শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজিত দেশের সবচেয়ে বড় এ উৎসব। আজ থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা পর্বের নিবন্ধন।

নেচেগেয়ে কিশোর আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন। সিএ ভবন মিলনায়তন, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১ অক্টোবর। ছবি: দীপু মালাকার

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কিআর স্বেচ্ছাসেবক শেখ লোকমান ও তাসফিয়া কাদের। অনুষ্ঠানে বলা হয়, সারা দেশে ছড়িয়ে আছে কিআর ৫৫টি বুক ক্লাব, যেখানে কিআর পাঠকেরা বই আদান-প্রদান করে, বই পড়ে ও লেখে। কিআর ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাবের ছেলেমেয়েরা নিজেরাই বানিয়ে ফেলছে দারুণ সব স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, তুলছে চমৎকার সব ছবি। কিআ তাই হয়ে উঠেছে কিশোর-কিশোরীদের এক পরিবার, অন্য রকম এক প্ল্যাটফর্ম।

কিআর প্রচ্ছদ দিয়ে মুখোশ পরে আনন্দ ভাগাভাগি। সিএ ভবন মিলনায়তন, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১ অক্টোবর। ছবি: দীপু মালাকার

দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। কেউ কেউ অনুষ্ঠানে তাদের অভিভাবককে সঙ্গে করে এনেছিল। তেমনই এক অভিভাবক রেখা আক্তার। তাঁর মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ে। রেখা বলেন, ‘আমার মেয়ে ক্লাস সেভেন থেকে কিআ পড়ে। কিআ, কিশোর-কিশোরীদের জন্য উপযোগী একটি ম্যাগাজিন।’

কিআর অনুষ্ঠানে দর্শকের একাংশ। সিএ ভবন মিলনায়তন, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১ অক্টোবর। ছবি: দীপু মালাকার

জন্মদিন উপলক্ষে ঝলমলে এ আয়োজনে আরও ছিল রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক গান, স্ট্যান্ডআপ কমেডি, বিটবক্স পারফরমেন্স, কোরিয়ান ও ইংলিশ ফিউশন পরিবেশনা এবং কথোপকথন পর্ব। উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন, মহাব্যবস্থাপক (বিজ্ঞাপন) রশিদুর রহমান সবুর, স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স কো-অর্ডিনেটর ফিরোজ জামান চৌধুরী, কিআর প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী সম্পাদক সিমু নাসের, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম, সহসম্পাদক আদনান মুকিত ও জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (মার্কেটিং অ্যান্ড অপারেশন) শাহাদাত ফয়েজ। অনুষ্ঠান শেষ হয় কিআ স্বেচ্ছাসেবকদের তিনটি লোকসংগীত ও ব্যান্ড দল আফটারম্যাথের পাঁচটি গান পরিবেশনার মাধ্যমে। এ আয়োজনে বিনা মূল্যে আইসক্রিম দেয় লাভেলো।

কিআর শুভানুধ্যায়ীদের লোকসংগীত পরিবেশন। সিএ ভবন মিলনায়তন, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১ অক্টোবর। ছবি: দীপু মালাকার