সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘর কাল বৃহস্পতিবার থেকে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। আজ বুধবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভের ভিআইপি কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এ তথ্য জানান। খবর বাসসের।
মন্ত্রী আরও জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাঙালির ইতিহাসের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের বিবর্তনের ধারায় ১৯৭১-এর ৭ মার্চ এই প্রান্তরে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছিলেন স্বাধীনতা অর্জনের দৃঢ় প্রত্যয়। ৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই। আর এই প্রেক্ষাপটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘর স্থাপন একটি সময়োচিত যুক্তিসংগত পদক্ষেপ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্থাপনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ৬৭ একর বিস্তৃত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কেন্দ্রস্থলে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ৫ হাজার ৬৬৯ বর্গমিটার পাকা চাতাল বা প্লাজা এবং এর চারপাশে রয়েছে তিনটি জলাশয়, বাঙালি জাতিসত্তার অমরতার প্রতীক ‘শিখা চিরন্তনী’ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে ভিত্তি করে নির্মিত একটি দেয়ালচিত্র। জাদুঘরের উপরিভাগে রয়েছে ১৫৫ আসনসংখ্যার আধুনিক মানের মিলনায়তন। স্বাধীনতা স্তম্ভটি বস্তুত ১৫০ ফুট উচ্চ একটি গ্লাস টাওয়ার। গ্লাস টাওয়ারে স্থাপিত লাইটের আলোকরশ্মি ৫ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে প্রক্ষেপিত হয়।
তিনি বলেন, বাঙালির জাতীয় জীবনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যে সুগভীর তাৎপর্য, তার সঙ্গে সংগতি রেখেই সুউচ্চ স্বাধীনতা স্তম্ভ এবং গগনচুম্বী আলোকরশ্মি মালার পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্বাধীনতা জাদুঘরটি ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার বাস্তব নিদর্শনে আরও সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৪৪টি প্যানেলে বাঙালি ও বাংলাদেশি জাতিসত্তার স্বাধীনতার ইতিহাস আলোকচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে।
স্বাধীনতা স্তম্ভকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্তকরণের ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভের লনে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা ১৯৭১’-এর চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন ও ২৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গানের আসর, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও স্বাধীনতা অর্জনের আনন্দের প্রতীক হিসেবে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণপত্র পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ঢাকাবাসীকে জানানো হয়েছে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে স্বাধীনতা জাদুঘর পরিচালিত হবে। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে গণপূর্ত বিভাগ। স্বাধীনতা জাদুঘর প্রতি শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ও শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশমূল্য মাথাপিছু ১০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য প্রবেশমূল্য ২ টাকা।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঘিরে সাংস্কৃতিক বলয় তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। রমনা পার্ক, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি ও চারুকলা ইনস্টিটিউট-এ বলয়ের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্যসচিব রনজিত কুমার বিশ্বাস, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী ও স্বাধীনতা স্তম্ভের স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম।