রাজধানী ঢাকার লাল রঙের দৃষ্টিনন্দন একটি স্থাপত্য যে কারও নজর কাড়বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত এই ভবন কার্জন হল নামেই পরিচিত। ভিক্টোরীয় স্থাপত্যরীতি, মোগল স্থাপত্যশৈলী ও বাংলার স্বতন্ত্র সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্য নিয়ে ভবনটি তৈরি। ১৯০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি ভাইসরয় লর্ড কার্জন ন্যাথনিয়েল কার্জন ঢাকায় এসে কার্জন হলের উদ্বোধন করেন। ১৯০৮ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ফেসবুকে সক্রিয় ‘ঢাকা: ফোর হানড্রেড ইয়ারস হিস্ট্রি ইন ফটোগ্রাফ’ শীর্ষক একটি পাতায় ১৯০৮ সাল ও পরবর্তী সময়ের কার্জন হলের তিনটি পুরোনো ছবি পাওয়া গেল। ইতিহাসবিদ আহমদ হাসান দানীসহ কারও কারও মতে, উনিশ শতকের শেষভাগ থেকেই ঢাকা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মুখরিত হয়ে ওঠে। সভা, আলোচনা, বিতর্ক, সংবর্ধনাসহ নানা অনুষ্ঠানের জন্য একটি টাউন হল নির্মাণের দাবি ওঠে। সে জন্যই এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়াতেও বলা হয়েছে, ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের নামানুসারে এ ভবন টাউন হল হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে এটি ঢাকা কলেজ ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ভবনটি বিজ্ঞান বিভাগের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে এবং এখনো এভাবেই চলছে। তবে শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ঢাকা কোষ-এ বলা হয়েছে, কার্জন হল মূলত ঢাকা কলেজের নতুন ভবন হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল। বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৮ সালে জিন্নাহ যখন এই কার্জন হলে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দেন, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এখান থেকে প্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কেউ যদি আজও কার্জন হলের মূল ভবনের সামনে যান, তবে ১৯০৪ সালে লর্ড কার্জনের উদ্বোধন করা নামফলকটি দেখতে পাবেন। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগের সংখ্যা বাড়ায় কার্জন হলের অবয়বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অন্য ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়। ১১২ বছর ধরে ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য আর কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কার্জন হল।
লেখা: শরিফুল হাসান, ছবি: জিয়া ইসলাম